রবিবার ● ২৬ নভেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » বিশ্ব দরবারে আবারো দেশের মুখ উজ্জ্বল করলেন আব্দুল জব্বার
বিশ্ব দরবারে আবারো দেশের মুখ উজ্জ্বল করলেন আব্দুল জব্বার
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: (১২ অগ্রহায়ন ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১২.৫০মি.)
সিলেটের বিশ্বনাথের পল্লীগাঁয়ের সেই আব্দুল জব্বার বিশ্বদরবারে আবারো দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। ব্রিটেনের ওল্ডহাম কাউন্সিলে ২০০৪ সালে ১ম বাংলাদেশী মেয়র নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়ে দেশবাসীকে গৌরবের আসনে অধিষ্টিতকারী সেই আব্দুল জব্বার এবার ১ম বিশ্বনাথী হিসেবে ব্রিটেনের রাজ পরিবার প্রদত্ত ব্রিটেনের রানীর জন্মদিন উপলক্ষে এই এম.বি.ই (মেম্বার অফ দ্যা মোষ্ট এক্সসেলেন্ট অফ দ্যা ব্রিটিশ অ্যাম্পায়ার) এওয়ার্ড গ্রহন করেছেন।
প্রসংগত ১৯২৬ সালের ২১ এপ্রিল জন্মগ্রহনকারী রানী এলিজাবেথ এ বৎসর ইতিমধ্যে ৯১ বছর পেরিয়ে এসেছেন। প্রতিবৎসর রাজপরিবার রানীর জন্মদিন উপলক্ষে এ এওয়ার্ড প্রদান করে আসছে। পলিটিকেল এবং পাবলিক সার্ভিসে অসামান্য অবদান রাখার জন্য ওল্ডহাম তথা গ্রেটার মানচেষ্টার এলাকার বাঙালী তথা স্থানীয় কমিউনিটির প্রাণ পুরুষ ডেপুটি লিডার আব্দুল জব্বারকে মনোনীত করা হয়। গত ১৪ নভেম্বর ব্রিটেনের রানীর কাছ থেকে তিনি এ মর্যাদাপূর্ণ এওয়ার্ডটি গ্রহণ করেন। এসময় তার সাথে ছিলেন তার সহধর্মিনী ইমরানা বেগম, পুত্র আশরাফ আহমদ জব্বার, কন্যা ফারহিন আক্তার বেগম এবং মাদিহা আক্তার বেগম।
সম্প্রতি ব্রিটিশ রাজপ্রাসাদ থেকে লিখিত আমন্ত্রন জানানো হয়েছিল। ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ নিজ হাতে বিশ্বনাথের কৃতিসন্তান আব্দুল জব্বারের ব্লেজারে এই অনন্য এবং মর্যাদাপূর্ণ এওয়ার্ডটি পরিয়ে দেন। এরপর ঘরে ফিরে মা আলিফজান বিবির হাতে এওয়ার্ডটি তুলে দেন সাবেক মেয়র আব্দুল জব্বার। গত ১৬ জুন ওল্ডহাম কাউন্সিল থেকে এক ইমেইল বার্তায় ওল্ডহাম কাউন্সিলে একাধিকবারের নির্বাচিত এই কাউন্সিলরকে এই সুসংবাদটি জানানো হয়। আর এই সংবাদটি বাংলাদেশী কমিউনিটির মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে দলমত নির্বিশেষে সবার অভিনন্দন আর শুভেচ্ছার জোয়ারে সিক্ত হন বিশ্বনাথের আলোকিত এই সন্তান।
বিশ্বনাথের অলংকারী ইউনিয়নের টেংরা গ্রামে জন্মগ্রহনকারী আব্দুল জব্বার শৈশবেই পিতা মরহুম ইলিয়াস আলী ও মাতা আলহাজ আলিফজান বিবির হাত ধরে পাড়ি দেন বিলাতে। সেখানে ব্রিজ হিল স্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে সেকেন্ডারী স্কুলের লেখাপড়া শেষ করে ভর্তি হন ওল্ডহাম কলেজে। সেখানে কৃতিত্বের সাথে কলেজের লেখাপড়া শেষ করে ইউনিভার্সিটি অফ সালফোর্ড থেকে হাউজিং ম্যানেজমেন্টের উপর এম.এস.সি ডিগ্রী অর্জন করে রচডেল কাউন্সিলে হাউজিং ম্যানজার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। যা আজও নিষ্টার সাথে পালন করে যাচ্ছেন। কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের পাশাপাশি আব্দুল জব্বার স্থানীয় কমিউনিটিতে একজন উদিয়মান তরুন হিসেবে কাজ করতে থাকেন। ১৯৯৪ সালে স্থানীয় কমিউনিটির অনুরোধে তিনি ওল্ডহাম কাউন্সিলে কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশ নেন। ওল্ডহামের স্থানীয় কমিউনিটির সুখ দুঃখের একান্তসঙ্গী তরুন এই কমিউনিটি নেতা কে প্রথমবারই বিপুল ভোটে নির্বাচিত করে তার নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দারা। এরপর তাকে আর পেছনে ফেরে থাকাতে হয়নি। তিনি ১৯৯৮ এবং ২০০২ সালে পরপর আরো দু’বার কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ২০০৩ সালে তার দক্ষতা এবং যোগ্যতা বলে তাকে ডেপুটি মেয়র এবং ২০০৪-২০০৫ সালের জন্য তাকে মেয়র নির্বাচিত করা হয়। আব্দুল জব্বার ওল্ডহাম কাউন্সিলের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ট মেয়র এবং ১ম বাংলাদেশী মেয়র। ইতিমধ্যে বিশ্বনাথের এই কৃতিসন্তান ওল্ডহাম কাউন্সিলে পরপর ৭ বার নির্বাচিত দীর্ঘ প্রায় ২৩ বছর কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে অনন্য এক কীর্তি স্থাপন করেছেন। এরপূর্বে কোন বাংলাদেশী কাউন্সিলর ওল্ডহাম কাউন্সিলে এবং সম্ভবত ব্রিটেনের কোন কাউন্সিলে নির্বাচিত হওয়ার নজির স্থাপন করতে পারেনি। যা বিশ্বনাথের এই রতœগর্ভা সন্তানের পক্ষে সম্ভব হয়েছে। আব্দুল জব্বার স্থানীয় উন্নয়নে যেমন এক আদর্শ জনপ্রতিনিধির রোল মডেল, ঠিক তেমনী ব্রিটেনে বাংলাদেশী সংস্কৃতির বিকাশ এবং ঐতিহ্য তুলে ধরার এক মহানায়ক। তারই আন্তরিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের ঐতিহ্য মতিঝিলের শাপলা চত্বরের অনুকরণে বিশ্বের বুকে ২য় শাপলা চত্বর এবং বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি স্মারক বিশ্বের বুকে ২য় শহীদ মিনার তারই প্রিয় শহর ওল্ডহামে নির্মাণ করা হয়েছে। যা নিংসন্দেহে পুরো বাংলাদেশের জন্য গৌরবের বিষয়। শুধু তাই নয়, ওল্ডহামে বাংলাদেশী কমিউনিটির কথা ভেবে হাজার পাউন্ড ব্যয় করে নির্মাণ করা হয়েছে মিলেনিয়াম সেন্টার এবং সাম্প্রতিক সময়ে ব্রিটেনের ইষ্ট লন্ডন মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টারের পর ওল্ডহামে যে সর্ববৃহৎ মসজিদ নির্মিত হয়েছে তিনিও তার অন্যতম উদ্দোক্তা।
আব্দুল জব্বার ১০ ভাই-বোনের মধ্যে ২য়। ব্যক্তিগত জীবনে মিসেস ইমরানা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ব হয়েছেন। সুখী এই দম্পতির রয়েছে তিন সন্তান। যথাক্রমে আশরাফ, ফারহিন ও মাদিহা।
৫৬ বছর বয়সী ব্রিটিশ লেবার পার্টির স্থানীয় প্রভাবশালী এই রাজনীতিবিদ নিজ শহরে লেবার পার্টির শক্তিশালী একটি অবস্থান সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন বলে ওল্ডহাম কাউন্সিলে বিগত কয়েক মেয়াদ ধরে লেবার পার্টি সংখাগরিষ্টতা লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন। আর এর জন্য কাউন্সিলের ডেপুটি লিডারের মত গুরূত্বপূর্ণ পূর্ণ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বাজেট প্রণয়ন কমিটি’সহ একাধিক কমিটির তিনি গুরূত্বপূর্ণ পদে অধিষ্টিত আছেন। অন্যদিকে আগামীতে কোন বাংলাদেশী ওল্ডহাম থেকে নমিনেশন পেলে আব্দুল জব্বারই সর্বপ্রথম পাবেন। জনমত এবং স্থানীয় লেবার পার্টির নেতাকর্মীদের কাছে পরিসংখ্যানে এগিয়ে থাকা আব্দুল জব্বার ওল্ডহামে ১ম বাংলাদেশী এমপি হয়ে ব্রিটেনের মাঠিতে আরেক গৌরবপূর্ণ ইতিহাস গড়বেন সেই প্রত্যাশা ব্রিটেনে বসবাসরত সমস্ত বাংলাদেশীদের, ঠিক তেমনী সেই প্রত্যাশা তার জন্মভূমি বাংলাদেশের মানুষেরও।