বুধবার ● ২৯ নভেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » যুক্তরাষ্ট্রে গাজীপুরের বাঁধনকে গুলি করে হত্যা
যুক্তরাষ্ট্রে গাজীপুরের বাঁধনকে গুলি করে হত্যা
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: (১৫ অগ্রহায়ন ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১১.৩২মি.) ২৬ নভেম্বর রবিবার যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসীদের গুলিতে এক বাংলাদেশী ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। নিহত মেধাবী ছাত্র এম হাসান রহমান বাঁধন (২৬) গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি এলাকার প্রকৌশলী মো. মজিবুর রহমানের ছেলে। মা হাসনে আরা বেগম বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের প্রিন্সিপাল অফিসার। ১৯৯২ সাল থেকে তারা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের চান্দনা চৌরাস্তা সংলগ্ন তেলিপাড়ার এলাকায় সেতু সড়কে বাড়ি করে বসবাস করছেন। বাঁধনের একমাত্র ছোট বোন মারজানা রহমান রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিষয়ে লেখাপড়া করছে।
বাঁধনের বাবা মুজিবুর রহমান জানান, বাঁধন খুবই মেধাবী ছাত্র ছিল। ছোট বেলা থেকেই ওর বৈমানিক হওয়ার স্বপ্ন ছিল। ২০০৮ সালে ঢাকার উত্তরা হাই স্কুল থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি, ২০১০ সালে তেজগাঁও বিজ্ঞান কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাশ করে। পরে সে ইষ্ট ওয়েষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ ভর্তি হয়। সেখান থেকে স্কলারশিপ পেয়ে সে ২০১১ সালে এরোনেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার পড়তে যুক্তরাষ্ট্রে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাস রাজ্যের উচিটা শহরে থেকে লেখাপড়ার পাশাপাশি সে স্থানীয় একটি দোকানে পিৎজা ডেলিভারির কাজ করতেন। সেখানকার কমিউনিটি কলেজ থেকে এরোনেটিক্যাল ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অ্যাসোসিয়েট পার্ট শেষ করে আগামী সেশনে ক্যানসাস ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির অপেক্ষায় ছিল সে। আগামী ১৪ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। এখন ওই তারিখের ১৩ দিন আগে আসছে ছেলের লাশ।
তিনি আরো জানান, ২৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে বাধঁনের সাথে তার মায়ের কথা হয়। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তার সাথে ছেলের সর্বশেষ কথা হয়। এ সময় কুশল বিনিময় ও তার লেখাপড়া নিয়ে এবং পরবর্তীতে কয়েক দফা চেষ্টা করেও তারা ছেলের সাথে আর কথা বলতে পারেনি। শনিবার থেকে ফোন বন্ধ পাচ্ছিলেন। রবিবার দুপুরে ছেলের বন্ধু নাঈম ফোন করে বাঁধনের নিহত হওয়ার খবর জানায়।
মামা মো. হুমায়ুন কবীর যুক্তরাষ্ট্রে বাঁধনের সহপাঠি ও বন্ধু নাঈমের বরাত দিয়ে বলেন, বাঁধন গত ২ মাস ধরে সেখানকার একটি দোকানে পিৎজা ডেলিভারির কাজ করতো। প্রতিদিন দুপুর সাড়ে বারটার মধ্যে ঘরে ফিরে আসতেন। কিন্তু শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত ঘরে না ফেরায় নাঈম তাঁকে খুঁজতে রাত তিনটা পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপিটালের ইমার্জেন্সিতে খোঁজ করে। পরদিন পুলিশের মাধ্যমে খবর পেয়ে তার লাশ সনাক্ত করে। আগামী শুক্রবার দুপুরে তার লাশ বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে।
একমাত্র ছেলে বাঁধনের শোকে পাগল প্রায় মা হাসনে আরা বেগম। তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন ‘প্রতিদিন ওর ফোনের অপেক্ষায় থাকতাম। ফোন করেই কি করছি, কি খেয়েছি, জানতে চেয়ে বেশী পরিশ্রম না করতে নিষেধ করতো। বৃহস্পতিবার রাতেও কথা হয়েছে। এখন আর ফোনের অপেক্ষা করতে হবে না’।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাস রাজ্যের উচিটা শহরের সেন্ট্রাল রক রোডের ৭৮০০ পেজন্ট লাইভ ওক স্ট্রিট অ্যাপার্টমেন্টের সামনে একটি গাড়িতে ২৬ নভেম্বর রবিবার এক যুবকের লাশ দেখতে পায় পুলিশ। পরে লাশটি বাংলাদেশি মেধাবী ছাত্র এম হাসান রহমান বাঁধনের বলে সনাক্ত করে পুলিশ, সহপাঠি ও বাংলাদেশীরা।