শুক্রবার ● ১ ডিসেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » জাতীয় » সিলেটে বাড়ছে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা
সিলেটে বাড়ছে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা
সিলেট প্রতিনিধি :: (১৭ অগ্রহায়ন ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৯.৫৫মি.) দ্বিতীয় লন্ডন খ্যাত প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা সিলেট অঞ্চলে বাড়ছে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা। ২০০৩ সালে সিলেটে ২৮ জন এইচআইভি রোগী থাকলেও বর্তমানে তা ৮১৫ জনে গিয়ে ঠেকেছে।
এইডসে আক্রান্ত হয়ে সিলেটে গত দেড় বছরে মারা গেছেন ২৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৯, নারী ৩ ও শিশু ২ জন।
এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ২০১৩ সালের পর থেকে।
২০১৩ সালে সিলেট বিভাগে এইচআইভি ভাইরাস ও এইডসে আক্রান্ত ছিল ৪৪৬ জন। গত চার বছরে আক্রান্ত হয়েছে ৩৬৯ জন। বিভিন্ন এনজিও’র দেয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
আশার আলো সোসাইটি সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক মো. সুমন মিয়া বলেন, সিলেট বিভাগে ৮১৫ জন ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে, যাদের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস রয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৩২০ জন।
সিলেটে এইচআইভি ভাইরাস ও এইডসে আক্রান্ত বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিবাসী, নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, প্রয়োজনীয় পরীক্ষার অভাব, চিকিৎসার অপ্রতুলতা, চিকিৎসার ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার, সরকারি উদ্যোগ না থাকা, এনজিও নির্ভর চিকিৎসা পদ্ধতি, সচেতনতার অভাবের কারণ এইআইভি ভাইরাস ও এইডস এ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয়, ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে চলা, সচেতনতা বৃদ্ধি, আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে এইচআইভি বা এইডসকে নির্মূল করা সম্ভব। আক্রান্ত ব্যক্তিদের অপবাদ ও সামাজিক বৈষম্য থেকে দূরে রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
সিলেট বিভাগে এইডস রোগী বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ দেশের অন্য অঞ্চলের তুলনায় সিলেটে অভিবাসীর সংখ্যা বেশি। এইচআইভি/এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাতে পারছে না। কারণ এসব পরীক্ষা ব্যয়বহুল এবং পরীক্ষার সুযোগও সীমিত।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ ধরনের রোগীদের চিকিৎসার পুরো দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছে কয়েকটি এনজিওর ওপর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব কারণে দেশে এইচআইভি/এইডসের ঝুঁকি বাড়ছে।
এসব বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার মাহবুবুল হক।
তিনি বলেন, প্রবাসী অধ্যষিত সিলেটে অনেকেই বিভিন্ন দেশে থেকে অসুস্থ হয়ে দেশে চিকিৎসার জন্য আসেন। চিকিৎসার বিভিন্ন পরীক্ষায় অনেকের মধ্যে এইচআইভি ভাইরাস পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, বিদেশ যাওয়ার সময় বিভিন্ন পরীক্ষা নিরিক্ষা করা হলেও দেশে আসার সময় পরীক্ষা করা হয় না। এর কারণ হলো আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ হয়। তারপরও স্বাস্থমন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর আইনের বিষয়টা বিবেচনায় রেখে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে পারে।
এছাড়া তিনি আরো বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন এনজিওর পাশাপাশি সরকারি উদ্যেগে এর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজেও চলতি বছরের অক্টোবরে চিকিৎসা সেবা চালু হয়। আগে বিভিন্ন সংস্থা ওষুধ দিলেও বর্তমানে সরকার বিনা মূল্যে রোগিদের তা দিচ্ছে। এছাড়া এইচআইভি আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যপারে সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করা হয়।
সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালের তথ্যানুযায়ী, সিলেটে প্রতিমাসে ৪৪৯ জন এইডস রোগীকে নিয়মিত এআরভি (অ্যান্টিরেট্রোবাইরাল) ওষুধ দেয়া হয়।
সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, সিলেটে এইচআইভির প্রাদুর্ভাব এখনো সীমিত পর্যায়ে আছে, বর্তমানে তা ১ শতাংশেরও নিচে। কিন্তু সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, সিলেটের কানাইঘাটেই ১০৭ জন মরণব্যাধি এইডসে আক্রান্ত। যা ভাবিয়ে তুলছে বিশেষজ্ঞদের।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর ৫ শতাংশ কোনো রোগে আক্রান্ত হলে তাকে কেন্দ্রীভূত মহামারি (কনসেন্ট্রেটেড এপিডেমিক) বলা হয়। এর ভয় হচ্ছে, নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী থেকে রোগ দ্রুত সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আজিজ আহমদ মালিক বলেন, এইডস আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হন না। তারা প্রতিদিন হাসপাতালের বহি:বিভাগ থেকে ঔষধ ও চিকিৎসা নিচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয়, সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি, আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে এইচআইভি বা এইডসকে নির্মূল করা সম্ভব। আক্রান্ত ব্যক্তিদের অপবাদ ও সামাজিক বৈষম্য থেকে দূরে রাখতে সবার এগিয়ে আসা সম্ভব।