শুক্রবার ● ১ ডিসেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ » অন্যের জমির বাড়ীঘর ভেঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ
অন্যের জমির বাড়ীঘর ভেঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: (১৭ অগ্রহায়ন ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১০.৩৬মি.) মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। দেশের প্রত্যেকটি নাগরিক তাদের সম্মান করে থাকে। কিন্তু কিছু মুক্তিযোদ্ধা নামধারী সন্ত্রাসী যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শত্রুপক্ষের সাথে যুদ্ধ করার চাইতে এলাকায় তান্ডব চালিয়ে নিজ স্বার্থ হাসিল করেছিল তাদের কারণে এখনও সমাজ জীবনে হাজারো সমস্যা তৈরী হচ্ছে। আর ঐ সব মুক্তিযোদ্ধা নামধারীদের অপকর্মের খেসারত দিতে হচ্ছে নিরীহ সাধারণ জনগণকে। তেমনি একটি রক্তাক্ত ঘটনায় নিজ বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ হয়ে পথে পথে ঘুরছে বেশ কিছু শান্তিপ্রিয় মানুষ। দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অতিষ্ঠ রয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ সরকার। মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে সব কিছুই করছে বর্তমান সরকার। কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে দেশের প্রতিটি জেলা – উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন তৈরী করছে মুক্তিযোদ্ধাবান্ধব এ সরকার। ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন তৈরীর জন্য সরকার টাকা বরাদ্দ দিলেও জমির অভাবে ভবনটি তৈরী করা যাচ্ছিল না। এমনি এক সময় বন্ধু সেজে এগিয়ে আসেন মাগুরায় বসবাসকারী মুন্সি ফেরদৌস নামের এক ব্যাক্তি। তিনি মহেশপুরস্থ তার আপন ভাই ও বোনদের মামলা জনিত কারণে শায়েস্তা করতে গত ১৯-০১-২০১৬ তারিখে মহেশপুর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে ৫২২ নম্বর দলিলের মাধ্যমে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মহেশপুর উপজেলা কমান্ডের নামে ১০৯ নম্বর মহেশপুর মৌজার (এসএ ভূল খতিয়ান-৭২৭) ও ৭২৯ নম্বর খতিয়ানভূক্ত এসএ ৫৬৬ নম্বর দাগ হতে সৃষ্ট আরএস ডিপি ৬১৬ নম্বর খতিয়ানভূক্ত ১৬১১ নম্বর আরএস দাগের ৪৩. ৭৫ শতক জমির মধ্যে ১০ শতক জমি ( যা মহেশপুরস্থ চৌগাছা বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিমে অবস্থিত) দান করেন। কিন্তু দানকৃত সম্পত্তি নিয়ে মুন্সি ফেরদৌসের সাথে দীর্ঘদিন ধরে হামিদুল হক গং এর সাথে ঝিনাইদহ জজ আদালতে দেওয়ানী-৯/ ২০১৫, মিস-১১/ ২০০৩, দেওয়ানী-৯/ ১৯৯১ (রুপান্তরিত হয়ে বর্তমানে ৪৩/৯৯ নামে চলমান) মামলা রয়েছে। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নামে মুন্সি ফেরদৌস যে সম্পত্তি দান করেছেন সে সম্পত্তি তার মাতা মোছাঃ ফজিতুন্নেছার নিকট থেকে জোরপূর্বক হেবা দলিলের মাধ্যমে মালিক সেজে দান করেছেন। কিন্তু মাতা ফজিতুন্নেছা বাদী হয়ে ঐ হেবা দলিল বাতিলের জন্য ঝিনাইদহ সহকারী জজ আদালতে দেওয়ানী ৩২/২০১২ নম্বর মামলা করেছেন। যা চলমান রয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নামে মুন্সি ফেরদৌস জমি দান করার পর হামিদুল হক গং প্রতিকার চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়সহ বিভিন্ন দ্প্তরে আবেদন করেন। আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় জমিটি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নামে রেজিষ্ট্রির পর হামিদুল হক গং ঝিনাইদহ সহকারী জজ আদালতে ৯/২০১৫ নম্বর দেওয়ানী মামলা দায়ের করে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন করলে আদালত গত ২৩-২-২০১৬ তারিখে ঐ জমিতে স্থিতিবস্থা বজার রাখার আদেশ প্রদান করেন। দানকৃত আর এস ১৬১১ দাগের জমিতে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ না করে ও আদালতের আদেশ অমান্য করে গত ২৬-২-২০১৬ তারিখে মহেশপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আব্দুল মালেক গাজীর নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা ঐ ( এসএ ভূল খতিয়ান ৭২৭) ও ৭২৯ নম্বর খতিয়ানভূক্ত এসএ ৫৬৬ নম্বর দাগ হতে সৃষ্ট আরএস ডিপি ৬১৬ নম্বর খতিয়ানভূক্ত ১৬১৩ নম্বর আরএস দাগে (যা মহেশপুরস্থ চৌগাছা বাসস্ট্যান্ডের পুর্ব পার্শ্বে অবস্থিত) বসবাসকারী হামিদুল হক গংএর বাড়ি-ঘর ভাংচুর করে ১৪/১৫জন নারীকে বাড়ি থেকে বের করে রাস্তার উপর শ্লীনতার হানী ঘটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশাফুর রহমানের সহযোগীতায় ১০.৩৭ শতক জমি দখল করে ক্ষমতার দাপটে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। হামিদুল হক গং এর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত পর্যায়ক্রমে নালিশী জমাজমি সরেজমিন তদন্ত করে রিপোর্ট প্রদানের জন্য ৪টি কমিশন নিযুক্ত করে রীট প্রদান করেন। সিনিয়র এ্যাডভোকেট ইরশাদ আলীকে ৪ নম্বর এ্যাভোকেট কমিশনার নিযুক্ত করে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিলে এ্যাডভোকেট ইরশাদ আলী গত ৪-৬-২০১৭ তারিখে উভয় পক্ষকে নোটিশ প্রদান করে সরেজমিন তদন্ত করে ১৩-৬-২০১৭ তারিখে আদালতে রিপোর্ট দাখিল করেন। আদালতের স্থিতিবস্থা বহাল থাকাবস্থায় আদালতের আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের তৎকালীন কমান্ডার মালেক গাজী গং নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখেন। যার নির্মাণ কাজ এখন সমাপ্তির পথে। মহেশপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মালেক গাজীর বিরুদ্ধে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মহেশপুর উপজেলা প্রশাসন তদন্ত করছে। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তার নেতিবাচক কর্মকান্ডের ঘটনা ও এইচএসসি পাশ করে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জনের বিষয়ে মুখরোচক কাহিনী মহেশপুরের বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে।