রবিবার ● ৩ ডিসেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » উপ সম্পাদকীয় » অনলাইন গণমাধ্যম সম্মেলন ও প্রত্যাশা
অনলাইন গণমাধ্যম সম্মেলন ও প্রত্যাশা
জুঁই চাকমা :: আগামী ১০ ও ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে দ্বিতীয় বারের মত অনলাইন গণমাধ্যম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ আয়োজনটি বাংলা ক্লিক ও অনলাইন মিডিয়া ফোরাম যৌথভাবে আয়োজন করছে। নিঃসন্দেহে এই আয়োজন অনলাইন গণমাধ্যম সংবাদ কর্মীদের জন্য সুসংবাদ।
অনলাইন গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে এই মিডিয়ার কিছু সুখ দুঃখ ও অনলাইন গণমাধ্যম সাংবাদিকদের খোলামেলা মতামত নিয়ে অনলাইন গণমাধ্যম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনলাইন গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু অনলাইন গণমাধ্যমের প্রতি সরকারের ভূমিকা এবং আমাদের অনলাইন গণমাধ্যম কর্মীদের কথা বলার ও নিজেদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে সারা বাংলাদেশ থেকে অনলাইন নিউজ পোর্টালের প্রকাশক, সম্পাদক, সাংবাদিক, ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিষ্ট অংশ গ্রহণ করবে। তবে এবারের এই অনলাইন গণমাধ্যম সম্মেলনে প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া সমূহ যারা ইতিমধ্যে অনলাইন প্রকাশনায় রয়েছে তাদের সমন্বয়ে এবারের অনলাইন গণমাধ্যম সম্মেলন-২০১৭ অনুষ্ঠিত হবে। যা এই সম্মেলনের ইতিবাচক দিক। যদিও আমরা জানি অনলাইন মিডিয়াকে সরকার সৎ সন্তান বানিয়ে রেখেছে।
অনলাইন মিডিয়া সম্মেলন আয়োজকদের মধ্যে ডিষ্ট্রিক নিউজ ডটকম’র প্রকাশক সাংবাদিক শরিফ মোহাম্মদ মাসুম বলেন, আমরা সকল ভেদাভেদের উর্ধ্বে চেষ্টা করছি অনলাইন গণমাধ্যমের সকল প্রকাশক, সম্পাদক, কবি, সাহিত্যিক, কলামিষ্ট, ব্লগার ও অনলাইন গণমাধ্যম সংবাদকর্মীদের এই সম্মেলনের মাধ্যমে অনলাইন গণমাধ্যমের মিলন মেলায় পরিণত করতে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। অনলাইন গণমাধ্যম বর্তমান সময়ের প্রধান গণমাধ্যম এবং শক্তিশালী গলমাধ্যম, কিন্তু বিভিন্ন সময়ে আমাদের দেশে অনলাইন গণমাধ্যম এর একাধিক সংগঠন গড়ে ওঠায় অনলাইন গণমাধ্যমের কর্মীদের ও প্রকাশকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো একত্রিত করে সরকারের নীতি নির্ধারকদের কাছে উপাস্থাপন করা সম্ভব হয়নি। এই অনলাইন গণমাধ্যম সংগঠক আরো বলেন, আমরা সকল গণমাধ্যমকে আহবান জানিয়েছি তারা যেন তাদের সুচিন্তিত মতামত প্রকাশ করতে পারেন। অনলাইন গণমাধ্যম কর্মীরা তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে কাজ করছে কিন্তু যথাযত মূল্যায়ন পাচ্ছেনা। তিনি সকলের কাছে আহবান জানিয়ে বলেন, আসুন দেখুন এবং আপনার সুচিন্তিত মতামত দিন যাতে অনলাইন গণমাধ্যম কর্মীরা সর্বস্তরে নিজেদের অধিকার সমুন্নত রেখে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারে। এবারের এই অনলাইন গণমাধ্যম সম্মেলন নিয়ে কথা বলেন, বিজয় নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম এর প্রকাশক সাংবাদিক শামসুল আলম স্বপন বলেন, অনলাইন গণমাধ্যম সম্মেলনটি অত্যন্ত জরুরী, আমি আমাদের বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ পোর্টাল এসোসিয়েশন-বনপা’র পক্ষ থেকে আয়োজনের পরিকল্পনা করেছিলাম কিন্তু আমার এবং আমাদের সংগঠনের সক্রিয় নেতাদের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭(২) ধারায় একের পর এক মামলা হওয়াতে সে পরিবেশ এবং প্রতিকুলতার কারণে অনলাইন কর্মীদের নিয়ে এই ধরনের একটি সম্মেলন আয়োজন করা হয়ে উঠেনি। যে ব্যানারেই হোক অনলাইন গণমাধ্যম সম্মেলন দ্বিতীয় বারের মত অনুষ্ঠিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত এবং আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। অনলাইন গণমাধ্যম সাংবাদিক নেতা স্বপন আরো বলেন, অনলাইন গণমাধ্যম ও ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা মূলত ২০১০ সাল থেকে গড়ে উঠেছে। একটি পক্ষ সরকারের নীতি নির্ধারকদের আস্থাভাজন হয়ে এই অনলাইন গণমাধ্যম যাতে বাংলাদেশে শক্তিশালী একটি গণমাধ্যম হয়ে উঠতে না পারে সেজন্য তারা প্রথমে অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধনে বলেছে প্রত্যেকটি অনলাইন নিউজ পোর্টালকে জামানত হিসেবে সরকারের কোষাগারে ৫ লক্ষ টাকা জমা দিতে হবে এবং প্রতিবছর নবায়ন ফি হিসেবে ৫০ হাজার টাকা করে সরকারকে দিতে হবে। যেখানে প্রিন্ট মিডিয়ার একটি পত্রিকা রেজিষ্ট্রেশনের জন্য কোন ফি দিতে হয়না মাত্র ৬ টাকার ষ্ট্যাম্পে (যা এখন ৩’শটাকা করা হয়েছে) হলফনামা দাখিল করে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে ডিএফপি, ডিসি ও এসপিরা পত্রিকার রেজিষ্ট্রেশন দিয়ে থাকেন সেখানে অনলাইন নিউজ পোর্টালের জন্য প্রস্তাব করেছে ৫ লক্ষ টাকা জামানত ও ৫০ হাজার টাকা বার্ষিক নবায়ন ফি যা অযোক্তিক ও বৈষম্যমুলক। বিজ্ঞ ব্যক্তিদের এ ধরনের প্রস্তাবনার বিরুদ্ধে আমরাই প্রথম প্রতিবাদ করি এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল ওনার্সদের স্বার্থ রক্ষার্থে গড়ে তুলি বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ পোর্টাল এসোসিয়েশন-বনপা। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারের নীতি নির্ধারকদের সাথে কথা বলেছি শেষ পর্যন্ত সরকার তাদের প্রস্তাবনা থেকে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় সরকার অনলাইন নিউজ পোর্টাল গুলিকে নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু দীর্ঘ এক বছর পার হয়ে গেলেও যেখানে প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া প্রকাশনার পূর্বে কেবলমাত্র জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সরকারী নিবন্ধন দেওয়া হয় অথচ অনলাইন গণমাধ্যম (নিউজ পোর্টাল) নিবন্ধনে ডাইরেক্টরেট জেরারেল ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সী (ডিজিএইআই), জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), পুলিশের বিশেষ শাখা (ডিএসবি) ও থানা পুলিশসহ চারটি সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করিয়ে একটি স্বার্থন্বেষী মহলের কারণে অদ্যবধী আবেদনকৃত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সমূহকে নিবন্ধন দেওয়া হয় নাই। সেকারণে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ওনার্সদের এবং অনলাইন মিডিয়া কর্মীদের এ পেশায় টিকে থাকা হুমকির মূখে পরেছে। এছাড়া প্রতি বছরে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া সমূহ সরকারের কাছ থেকে ৬শ কোটি টাকার বিজ্ঞাপণসহ সরকারী বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। এসকল সুবিধা থেকে একেবারে বঞ্চিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল বা অনলাইন গণমাধ্যম। বৈষম্য করা হচ্ছে অনলাইন গণমাধ্যমের সাথে। তাই অনলাইন গণমাধ্যমের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে ৬ কোটি টাকার মধ্যে ৩ কোটি টাকার বিজ্ঞাপণ অনলাইন গণমাধ্যমকে প্রদানে সরকারের কাছে দাবী জানাতে হবে এবং আদায় করে নিতে হবে নিজেদের অধিকার। যা শতভাগ যোক্তিক দাবী। অনলাইন গণমাধ্যম সম্মেলনের আয়োজকদের কাছে আহবান জানাই কারো তাবিদারী না করে অনলাইন গণমাধ্যমের স্বার্থে কাজ করুন বলেন এই সাংবাদিক নেতা।
ওনার্স এসাসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক সাংবাদিক জীবণ ইসলাম বলেন, প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার ক্ষেত্রে ৫৭ ধারা কার্যকর হয়না অথচ আমরা যারা অনলাইন মিডিয়ার সাথে জড়িত তাদের ক্ষেত্রে গণহারে ৫৭ ধারা কার্যকর হচ্ছে, কাজেই ৫৭ ধারা বাতিল করতে হবে। আমরাও সাংবাদিক অন্যান্য মিডিয়ার কর্মীদের জন্য সরকার যে সুযোগ সুবিধা প্রদান করে অনলাইন মিডিয়ার জন্যও সমান সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। একই দেশে একই নাগরিকদের পৃথক নীতি এই ধরনের বৈষম্যনীতি সরকারকে পরিহার করতে হবে বলেন জীবণ ইসলাম। অনলাইন গণমাধ্যমের স্বার্থে তৃণমূল পর্যায়ে সকল অনলাইন গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টদের অনলাইন গণমাধ্যম সম্মেলনে অংশগ্রহণের আহবান জানান তিনি।
জনস্বার্থে ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি আইনে ৫৭(২) ধারায় পরপর দুটি মামলায় কারাবাসকারী সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম এর প্রকাশক সাংবাদিক নির্মল বড়ুয়া মিলন বলেন, অনলাইন নিউজ পোর্টাল সমূহ একটি অলাভজনক অনলাইন গণমাধ্যম । কিন্তু সংবাদ প্রকাশ করে তাৎক্ষনিক। প্রিন্ট মিডিয়ায় যেকোন সংবাদ প্রকাশ পায় ঘটনার ১২ঘন্টা পর সে জায়গায় অনলাইন মিডিয়া সম্পূর্ণ বিনামূল্যে তাৎক্ষনিক সংবাদ প্রকাশ করে। প্রিন্ট মিডিয়ার নির্দিষ্ট এলাকা থাকে, অনলাইন মিডিয়া পৃথিবীর যে কোন প্রান্তের পাঠকের কাছে সংবাদ পৌঁছে দেয়। কিন্তু সরকারের বৈষম্যনীতির কারণে অনলাইন মিডিয়ার সংবাদ কর্মীরা নিরুৎসাহিত হয়ে এ পেশা থেকে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে যা অনলাইন মিডিয়ার জন্য দুঃসংবাদ।
সরকার যে নীতিতে প্রিন্ট মিডিয়া সমুহকে ন্যায্যমূল্যে কাগজ বরাদ্ধ করে থাকে একই নীতি অনুসরন করে অনলাইন মিডিয়ার জন্য ইন্টারনেট ও কম্পিউটার সামগ্রি বরাদ্ধ দিতে পারেন যেমন,ইতিমধ্যে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এর অধীনে সরকারী মোবাইল অপারেটর টেলিটকের মাধ্যমে প্রতি জিবি ইন্টারনেট সেবা ৮ টাকা দরে প্রদান করছে সেই নিয়মে অনলাইন নিউজ পোর্টাল সমূহকে নির্দিষ্ট সীম ও ল্যান্ডফোনে মাধ্যমে সর্বনিন্ম মূল্যে ইন্টারনেট সেবা দেয়া সরকারের উচিৎ। এছাড়া সরকারের প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় যে নিয়মে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহকে ল্যাপটপ ডেক্সটপ কম্পিউটার বিনামূল্যে প্রদান করছে সে নিয়মে নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত তৃণমূল পর্যায়ের অনলাইন নিউজ পোর্টাল সমূহকে কম্পিউটার ও নিউজ পোর্টাল পরিচালনার সামগ্রী ও অনলাইন মিডিয়ার তৃণমূল পর্যায়ের সংবাদ কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ অনলাইন সংবাদ কর্মী হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেেেত্র ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ অনলাইন মিডিয়া শক্তিশালী না হলে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবেনা। মুখ থুবরে পরবে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা। তিনি সকল ভেদাভেদ ভুলে তৃণমূল পর্যায় থেকে অনলাইন গণমাধ্যম সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে নিজেদের সুচিন্তিত মতামত ও অনলাইন গণমাধ্যমের দাবী পূরণে অনলাইন গণমাধ্যম কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
আমাদের সতর্ক থাকতে হবে কেউ যাতে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে না পারে।
আমরা চাই এই অনলাইন গণমাধ্যম সম্মেলনের মাধ্যমে অনলাইন গণমাধ্যমের প্রতি সরকারের শুভদৃষ্টি উদয় হবে। নিজেদের দলীয় নেতাদের ফেইসবুক অপারেটিং শিখালেই দেশ ডিজিটাল হবেনা। দেশ ডিজিটাল করতে গেলে উদ্যোক্তার মানসিকতা ডিজিটাল করতে হবে। ডিজিটাল দেশে পত্রিকার বান্ডিল বয়ে বেড়ানোর সুযোগ যেমন নেই ঘরে বসে টিভির সামনে বসে থাকার সময়ও নেই। কাজেই দেশের উন্নয়ন আর অনলাইন মিডিয়ার উন্নয়ন একই কথা।
লেখক : জুঁই চাকমা
বার্তা সম্পাদক
সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম।
(www.chtmedia24.com)