বুধবার ● ২০ ডিসেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩শ ছাড়িয়েছে : ১৩ জনের মৃত্যু
ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩শ ছাড়িয়েছে : ১৩ জনের মৃত্যু
উখিয়া প্রতিনিধি :: (৬ পৌষ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১২.৪৬মি.) কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প সমূহে ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিনদিন বেড়ে চলেছে। বিপন্ন প্রায়ই এ রোগে আক্রান্ত রোহিঙ্গাদের সংখ্যাও ১৩শ ছাড়িয়েছে। এ পর্যন্ত ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১৩ জন। আক্রান্ত রোগীদের প্রায়ই শিশু। পাশিপাশি শীতের প্রকৌপে বেড়েছে ডায়রিয়া, শাসকষ্ট, সর্দি-কাশিজনিত রোগীর সংখ্যাও। প্রতিদিন হাজার হাজার রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। স্থানীয়দের মধ্যে যেন এইসব রোগ ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক ও উপজেলা প্রশাসন।
মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন অপুষ্টি, তার ওপর ঠান্ডায় খোলা আকাশের নিচে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস। সব মিলিয়ে এইচআইভি সহ বর্তমানে সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টজনিত ও চর্মরোগে ভূগছে রোহিঙ্গারা। আর এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। এরই মধ্যে নতুন করে প্রকোপ দেখা দিয়েছে ডিপথেরিয়া ও ডায়রিয়ার। আর প্রায় ১ মাসে ডিপথেরিয়ার কারণে মারা গেছে ১৩ জন।
এদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কর্মরত এনজিও কর্মীদের মাধ্যমে স্থানীয়দের মাঝেও ডিপথেরিয়ার জীবাণু ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। উখিয়া কলেজ এলাকায় স্থানীয় সুলতান আহমদের মেয়ে ২ সন্তানের জননী ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার খবরটি চাওর হলে স্থানীয়দের মাঝে আতংক বিরাজ করছে।
স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন, যত্রতত্র-অপরিকল্পিত টয়লেট ব্যবস্থাপনার কারণে কমছে না ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। ঠান্ডা, কাশি, জ্বর এখানে একটি ফ্লু- এর মতো হয়ে গেছে। গত তিন মাসে আমরা প্রায় ১০ হাজারের বেশি রোগীকে সেবা দিয়েছি। বর্তমানে সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া ও চর্মরোগের পাশাপাশি ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা বেড়ে গেছে।
ডিপথেরিয়ার বিস্তার ঠেকাতে এরইমধ্যে গণস্বাস্থ্য অধিদপ্তর টিকাদান কর্মসূচী শুরু করেছে। তবে রোহিঙ্গাদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা কম বলে এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীরা।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন সুত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ সরকার ১২ দিনের একটি প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। তাই এরইমধ্যে এখানে যত রোহিঙ্গা আছে তাদেরকে টিকা দানের ব্যবস্থা করেছি এবং তাদের বয়সীমা হতে হবে ৭-১৫।
এদিকে বায়ু ও পানিবাহিত রোগটি ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্কে রয়েছে স্থানীয়রাও। রোগের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে চিকিৎসকরা প্রতিষেধক নেওয়ার পাশাপাশি মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে স্থানীয়দের।
উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মিজবাহ উদ্দিন বলেন, ডিপথেরিয়ায় আক্রান্তের সঠিক সংখ্যাটা বলা যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে এ পর্যন্ত সহস্রাধিক রোহিঙ্গা শিশু ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। তৎমধ্যে সন্দেহযুক্ত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় শৈলেরঢেবা গ্রামের এক নারীর ডিপথেরিয়ায় আক্রান্তের বিষয়টিও তিনি সন্দেহজনক বলে ধারণা করছেন।
এটি সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া যে বিষাক্ত পদার্থ উৎপন্ন করে তা শ্বাসনতন্ত্রের বিশেষ করে নাক ও গলার টিস্যুকে নষ্ট করে দেয়। ডিপথেরিয়ার লক্ষণগুলো দেখা যায় ইনফেকশন হওয়ার দুই থেকে সাত দিন পরে। ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১০০. ৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রার জ্বর থাকে। ক্লান্তি ও শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। গলা ব্যাথা হয়। গলার গ্রন্থি ফুলে যায়। ঢোক গিলতে সমস্যা ও ব্যাথা হয়। অনেক বেশি কাশি হয়। শিশুরাই মূলত: এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।
এই রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রথমে অ্যান্টিটক্সিন ইনজেকশন দিয়ে ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে হয়। এছাড়াও ইরাথ্রোমাইসিন ও পেনিসিলিনের মত এন্টিবায়োটিক দেওয়া হয় ইনফেকশন দূর করার জন্য। যেহেতু এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ তাই ডিপথেরিয়া আক্রান্ত রোগীদের আলাদা রাখা হয়।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন বিলুপ্ত ডিপথেরিয়ার রোগের বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।