বুধবার ● ২০ ডিসেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » জাতীয় » খালেদা জিয়ার পাঠানো উকিল নোটিশে কী আছে ?
খালেদা জিয়ার পাঠানো উকিল নোটিশে কী আছে ?
ঢাকা প্রতিনিধি :: (৬ পৌষ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৯.৩৫মি.) সৌদি আরবে জিয়া পরিবারের সম্পদ নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
গতকাল মঙ্গলবার এই নোটিশ পাঠানো হয় বলে অনলাইন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের গণমাধ্যম শাখার কর্মকর্তা শায়রুল কবীর খান।
এ ছাড়া আজ বুধবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনেও এই তথ্য জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি জানান, এই উকিল নোটিশের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহারের করতে বলা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসের আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন গতকাল ডাকযোগে প্রধানমন্ত্রী বরাবর এই উকিল নোটিস পাঠান। যেখানে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে ওই বক্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে ও তা সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত ৭ ডিসেম্বর গণভবনে কম্বোডিয়া সফরের ওপর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে জানান, সৌদি আরবে জিয়া পরিবারের বিপুল সম্পদ রয়েছে। তবে এ নিয়ে দেশের বেশিরভাগ সংবাদ মাধ্যম খবর প্রকাশ না করায় তা নিয়ে অসন্তোষও প্রকাশ করেন তিনি। সাংবাদিকরা বিনা পয়সায় শপিংয়ের সুযোগ পেয়ে এই খবর চেপে গেছেন কি না তাও জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। এরপরই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
খালেদা জিয়ার পাঠানো উকিল নোটিশে কী আছে ?
আইনি নোটিশ :
রেজিস্টার্ড ডাকযোগে (উইথ এ/ডি) কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে
মিসেস শেখ হাসিনা
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
এবং
প্রেসিডেন্ট
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়
তেজগাঁও, ঢাকা- ১২১৫
সূত্র : আইনি নোটিশ
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, সড়ক নং- ৮৬, বাড়ি নং- ০৬, গুলশান- ০২, ঢাকা ১২১২ কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে আমরা এতদ্বারা আপনাকে নিম্নরূপ জানাচ্ছি যে,
বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি তিন বার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি বিরোধী দলের নেতা হিসেবেও দুইবার নির্বাচিত হন। তিনি দেশের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপারসন। তাঁর প্রয়াত স্বামী শহীদ জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম) ছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে একজন সেক্টর কমান্ডার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তাঁকে ‘বীর উত্তম’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
গত ৭ ডিসেম্বর ২০১, গণভবনে অনুষ্ঠিত মিডিয়া ব্রিফিংকালে আপনি বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কিছু মানহানিকর বিবৃতি দিয়েছেন যা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সম্প্রচারিত হয়েছে এবং সব দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন পত্রিকা এবং অনেক সামাজিক মিডিয়া আউটলেটে মুদ্রিত ও প্রচারিত হয়েছে।
উক্ত মিডিয়া ব্রিফিংকালে আপনি বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে কিছু মিথ্যা এবং বিদ্বেষপরায়ণ বিবৃতি দিয়েছেন; আপনি বলেছেন যে সৌদি আরবে বেগম খালেদা জিয়া একটি শপিং মলের মালিক এবং সেখানে তাঁর বিপুল সম্পদ রয়েছে এবং তিনি মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত। আপনি তাঁর পুত্রদের সম্পর্কেও কিছু মিথ্যা উক্তি করেছেন।
আপনি বেগম খালেদা জিয়া একং তাঁর পুত্রদের সম্পর্কে যে অভিযোগ এনেছেন তা সাজানো, বানোয়াট, উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং বিদ্বেষমূলক। বাংলাদেশের নির্দোষ ও পরিছন্ন ভাবমূর্তি সম্পন্ন সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা হিসেবে খালেদা জিয়ার সুনাম বিনষ্ট করার হীন উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে আপনি এসব অভিযোগ এনেছেন। আপনার এই মিথ্যা উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং বিদ্বেষপূর্ণ বিবৃতি বাংলাদেশের মানুষ ও বিশ্বজনের কাছে তার ভাবমূর্তিকে খাটো করার অভিসন্ধিতে তৈরি। খালেদা জিয়া এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আপনার এই মিথ্যা অভিযোগ তাঁর প্রতি অবমাননা ও ঘৃণার সৃষ্টি এবং তাঁকে হাস্যকর করার উদ্দেশে করা হয়েছে।
খালেদা জিয়া ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আপনার এই অপবাদমূলক দীর্ঘ বিবৃতি পরিকল্পীতভাবে তাকে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করার জন্য এবং আপনার নিজের রাজনৈতিক সুবিধা লাভের হীন উদ্দেশে ডিজাইন করা হয়েছে। আপনার এই বেপরোয়া ও বিদ্বেষপূর্ণ কটূক্তি একাধারে পরনিন্দা, অপবাদপূর্ণ ও মানহানিকর, যা খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ সুনাম সম্মান সততা এবং মর্যাদাকে বিনষ্ট করার এবং দেশে ও বিদেশে তাঁকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে খাটো করার হীন উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। এই মানহানিকর বিবৃতির কারণে অপূরণীয় লোকসান ও ক্ষতি হয়েছে যার জন্য আইনত আপনি দায়ী।
উপরে বর্ণিত পরিপ্রেক্ষিতে অত্র আইনি নোটিশের মাধ্যমে আমরা আপনাকে বেগম খালেদা জিয়ার নিকট নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করার আহ্বান জানাচ্ছি এবং উক্ত ক্ষমা অত্র আইনি নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে সব জাতীয় দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠায়, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, অনলাইন সংবাদপত্র এবং সামাজিক মাধ্যমে আউটলেটে যথাযথভাবে প্রকাশ ও প্রচার করার আহ্বান জানাচ্ছি, অন্যথায় আপনার বিদ্বেষপূর্ণ, মানহানিকর এবং কপট ও কুটিল বিবৃতির কারণে আপনার বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ আদায়ের নিমিত্তে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমাদের উপরে নির্দেশ রয়েছে।
আপনার বিশ্বস্ত
এ এম মাহবুবউদ্দিন খোকন
ব্যারিস্টার অ্যাট ল