বৃহস্পতিবার ● ২১ ডিসেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » ভারতের বৌদ্ধ ধর্ম
ভারতের বৌদ্ধ ধর্ম
রতিকান্ত তঞ্চঙ্গ্যা :: বুদ্ধের পরিনির্বানের পর সুদীর্ঘ দশ শতাধিক বৎসর যাবৎ ভারত ও তার পার্শ¦বর্তী কিছু দেশ সমূহ উদারতার মধ্য দিয়ে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার লাভ করেছিল। বিখ্যাত সৈনিক পরিব্রাজক মহামনীষী ফা-হিয়েন (৩৭৫-৪১৪খ্রিঃ) তার দলবল নিয়ে ভারত পরিভ্রমনে আসেন। ভারত সাহিত্য, সংস্কৃতি, দর্শন ও শিল্পকলা দ্রুত উন্নতির অভিজ্ঞতা তার বিখ্যাত ফো-বি-কি গ্রন্থে বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছিলেন। এরপর মহামনীষী হিউয়েন চাঙ ৬২৯ খ্রিঃ ধর্ম, সংস্কৃতি ও আইন আইন নিয়ে ৭৪টি গ্রন্থ প্রকাশিত করেন। কালক্রমে শক,হুন, মোগল, পাঠান, কুশান ও পহলব জাতির এক একটি শাসনাধীনে বৌদ্ধধর্ম একেবারে ম্লান হয়ে যায। কাশ্মিরাধিপতি মিহিরগুল গান্ধার আক্রমন করে সমস্ত বৌদ্ধস্তুপ সমূহ উৎপাটিত করেন। বহু সংঘারাম ধ্বংস করে ৬০ লাখ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের যম ভবনে প্রেরণ করেন। রাজা পূষ্যমিত্র অর্হৎ সহ বহু ভিক্ষু শ্রামণকে হত্যা ও বৌদ্ধকীর্তি ধ্বংস করেন। ৭৫০ খ্রিঃ কুমারিল ভট্ট পাশবিকতার অত্যাচার ও সনাতন ধর্মে দিক্ষিত হতে বাধ্য করেন।শিলাদিত্যেও রাজত্বের পর শংকরাচার্য্যরে প্ররোচনায় গয়া, সারনাথসহ বহু পত্নতত্ত্ব নিদর্শন ধ্বংস হয়। অজন্তা,ইলোরা, তক্ষশিলা, উদয়পুর, সাচি, রাঁচি, নালন্দা, অবন্তি, রাজগীর, জগয্যোপেটা ইত্যাদিসহ মহাস্থানগড়, শালবন, ময়নামতি সহ শতশত জানা অজানা বৌদ্ধবিহার শিল্পের অপূর্ব নিদর্শন ধ্বংসে পরিণত হয়। শতশত বৌদ্ধ ধর্ম অনুসারী নরনারী খুন, বন্দী, চুরি, অগ্নিসংযোগ এবং অসংখ্য ধর্মীয় পুস্তক পুড়ে দেয়া হয়। বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি অমানুষিক আচরণে বিশ্বেও বহু দেশ হতে দার্শনিক, প্রত্নতত্ত্ববিদ, পরিব্রাজক ভারত পরিদর্শন করতে শুরু করেন। এদেও মধ্যে ইউরোপের জনৈক পরিব্রাজক বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হয়ে তার নাম করন হয় নারদ, স্কটল্যান্ডের মি. জে. এফ মেকেলা (ওরফে ভিক্ষু শিলাচার), লন্ডনের ক্রিষ্টমাস হুম্প্রেস (ওরফে তিথিল মহাথের) বিশ্বে সুপরিচিত ব্যক্তি। তারা বিভিন্ন পুস্তক প্রকাশনার মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে অত্যাচারের প্রতিবাদ তুলে ধরেন এবং বিভিন্ন দেশে ধর্ম প্রচার ও বৌদ্ধ মিশন গঠন করেন। মেজর টিটো, কে.জে স্যন্দ্রেস, চুনহলা অং(ব্রক্ষদেশ), ড.এম.আর সফথ, ড.কুর্ট সীডট বৌদ্ধ সভ্যতা ও ধ্বংসের রুপরেখা পুস্তকের মাধ্যমে প্রচার করেন। ভারত ও সিংহল থেকে কুমার জীব, সংঘভুতি, গৌতম সংঘদেব, বিমলাক্ষ, বুদ্ধজীব, ধর্মমিত্র, ধর্মযশ, গুণবর্মা, জীনগুপ্ত, পরমার্থ, প্রভাকর মিত্র, বজ্রমিত্র, দানশ্রী, বিমল মিত্র, জিনমিত্র, মঞ্জুঘোষ, শীলভদ্র ও রত্নাকর শান্তি চীনসহ বিভিন্ন দেশে বৌদ্ধ প্রচার এবং সাহিত্য দর্শন ধর্ম সাধনা বিজ্ঞান শিল্পকলাসহ বহু গ্রন্থ রচনা করেন। চীনে মহামনীষীদের ভিন্ন ভিন্নগমনে ঐ সময় ৫৪০০টি বৌদ্ধধর্মীয় পুস্তক প্রকাশ হয়। চীনে বৌদ্ধধর্ম পরিপুর্ণতা লাভের পর জাপানেও দ্রুত বৌদ্ধধর্ম বিস্তার লাভ করে। পরবর্তীকালে সিংহলের মহাপ্রাণ ডন ডেভিও (অনাগারিক ধর্শপাল) ৩১শে মে ১৮৯১ খ্রি. কলিকাতার মহাবৌধি সোসাইটি প্রতি স্থাপিত করেন। তিনি মৌলবাদি হিন্দু সম্প্রদায়ের মহান্তদের নিকট থেকে বুদ্ধগয়া সারনাথ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান উদ্ধারের মহান সৎকর্ম সাধনাদ্দেশ্যে ব্রক্ষদেশ, শ্যাম, তিব্বত, নেপাল, ভুটান, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, চীন, জাপান গমন করেন। তার অসাধারন জ্ঞানদীপ্ত প্রতিভা দিয়ে বৌদ্ধ কীর্তি উদ্ধার ও সংস্কারের অবদান অপরিসীম এবং নিরলস সংগ্রাম মৃত্যুর পূর্বমূহুর্ত পর্যন্ত চালিয়ে যান।
(“আলোকিত তঞ্চঙ্গ্যা ভিক্ষু” গ্রন্থ থেকে চলবে)