শনিবার ● ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » সকল বিভাগ » চট্টগ্রামে বৌদ্ধধর্ম জাগরণ
চট্টগ্রামে বৌদ্ধধর্ম জাগরণ
রতিকান্ত তঞ্চঙ্গ্যা :: (পূর্বে প্রকাশের পর) অনাগারিক ধর্মপারের উত্তরসুরি হিসাবে চট্টগ্রাম জেলারই জাতি বরেণ্য কৃতি সন্তান ড. বেনীমাধব বড়ুয়া (১৮৮৮-১৯৪৮খ্রি.) বিশ্বেও প্রখ্যাত দার্শনিক ও সাহিত্যিকদের বৌদ্ধ সাহিত্য অনুবাদসহ ইংরেজিতে ২১টি বাংলায় ১২টি দুর্লভ পুস্তক প্রকাশনা করে বৌদ্ধ জাতির গৌরব অখুন্নভাবে বজায় রেখেছিলেন। সারিপুত্র ও মৌদগলায়নের পুত অস্থিখন্ড নিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন বৌদ্ধ সাহিত্যে পঠন পাঠকের প্রচার উৎকর্ষ সাধন মানষে তার এক ভগ্নাংশও জনসাধারণ বা শিক্ষা নিয়ামকদের মধ্যে দৃষ্টি হয়না। প্রাচীন শিলালিপি বিশ্লেষণে এবং বৌদ্ধ মন্দিরে হিন্দুদের মূর্তি স্থাপনের প্রতিবাদী ড. বেনীমাধব বড়ুয়া। তিনি কলিকাতা, সিংহল, বোম্বাই, এলাহাবাদ, লক্ষনো ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে Extemal Examinar ছিলেন। চট্টগ্রামের বড়ুয়া সম্প্রদায়ের আরো মহাপ্রজ্ঞাবান উজ্জ্বল নক্ষত্রদের শ্রীমৎ কৃপাচরণ মহাস্থবির ১৯০৭ সালে কলিকাতা ধর্মাংকুর বিহার থেকে পুস্তিকাকারে দ্বি-মাসিক “জগজ্যোতি” পত্রিকা প্রকাশিত করে সদ্ধর্মের বাণী দেশের নগরে গঞ্জে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। মহামহোপাধ্যায় শ্রীমৎ প্রজ্ঞালোক মহাস্থবির সদ্ধর্ম আহরনের জন্য রেঙ্গুন গমন করে বার্মীজ ভাষায় পুস্তক বঙ্গানুবাদ করে ধর্মীয় পুস্তক প্রকাশনা করেন এবং “সংঘ শক্তি” নামে বাংলায় পত্রিকা নিয়মিত বের করেন। চট্টগ্রামের বড়ুয়া জাতিদের মধ্যে বিদর্শনাচার্য শ্রীমৎ পূণ্যাচার মহাস্থবির ত্রিপিটকাচার্য শ্রীমৎ জ্ঞানীশ্বর মহাস্থবির ত্রিপিটক বাগ্মীশ্বরশ্রীমৎ বংশদ্বীপ মহাস্থবির শ্রীমৎ গুনালংকার মহাস্থবির, সংঘনায়ক শ্রীমৎ অভয়তিষ্য মহাস্থবির, সংঘনায়ক শ্রীমৎ শীলালংকার মহাস্থবির সহ বহু শীলবান পন্ডিত ধর্মসাধনা ও কঠোর আত্মত্যাগের অবদান রয়েছে। এসব মহান ব্যক্তিদের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে বৌদ্ধ বিহার, মিশন, বিদ্যালয়, ভাবনাকেন্দ্র এবং দিয়েছিলেন রাশিরাশি ধর্মীয় পুস্তক। ভুতপূর্ব অধ্যক্ষ ভিক্ষু শীলাচার শাস্ত্রী এম এ মহোদয় তার চট্টগ্রামে বৌদ্ধধর্শ পুস্তকের মতে রাজা নগর নিবাসী কবি ফুলচন্দ্র বড়ুয়া ছিলেন রাণী কালিন্দীর বিশ্বস্থ ও পরামর্শ দাতা। রাণীমাকে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণের প্রচেষ্ঠা তার সাফল্যতা বলে জানা যায়। তখন আরাকান নিবাসী মহাধর্ম রাজাধীরাজ সারমেধ মহাস্থবির সীতাকুন্ডে ধ্যান সাধনা করেছিলেন। তাঁকে আমন্ত্রণ পূর্বক রাজানগর চাকমাযশস্বিনী রাণী কালিন্দী রাজপ্রাসাদে আনয়ন করা হয় এবং ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে মহামুনি মন্দির নির্মাণ করেন। ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে বিনয়কর্ম উপযোগী ভিক্ষুগণের সমভিব্যবহারে বিনয়কর্ম সম্পাদন করে ভিক্ষু সংঘ নাম হয় “সংঘরাজ নিকায়” এবং আচার্য সারমেধ হলেন সংঘরাজ। একমাত্র এই সংঘরাজ নিকায় শাসন থাকবে অপরিবর্তিত, অবিভক্ত অন্যদল নহে। সেই সূচনা ধরে অর্থাৎ মহাপ্রজ্ঞাবান ধর্মগুরু সারমেধ মহাস্থবিরের পরবর্তি একশত বছরের পর আবির্ভুত হলেন ভিক্ষু অগ্রবংশ। রাণী কালিন্দীর মৃত্যুর বহু বছর পর জন নন্দিত চাকমা রাজা ভুবন মোহন রায় শ্যামদেশ (থাইল্যান্ড ) থেকে ১৯৩১ সালে অষ্টধাতু নির্মিত সুবৃহৎ একটি বুদ্ধমুর্তি আনয়ন করেন। সেটি কণফুলী নদীর পুর্ববর্তী রাঙামাটি মৌজার রাজপ্রাসাদেও সম্মুখে গৌতমমুনি মন্দির স্থাপন করেছিলেন।পাশে ভিক্ষু বা পুরোহিত থাকার জন্য বাশেঁর বেড়ার ক্যাংঘর। আমি গৌতমমুনি মন্দিরে রাজপুণ্যাহ মেলায় ১৯৫২ সালে প্রথমবার গিয়েছি। ক্যাংঘরে মগভিক্ষু বা চট্টগ্রাম থেকে আগত বড়ুয়া ভিক্ষু ও শ্রমন অবস্থান করতেন। তারা বিভিন্ন পাড়ায় গিয়ে ঘরের দুয়ারে চাইন্ডিং বা কাঁসা বাজিয়ে চাউল ও টাকা ভিক্ষা করতেন। সাথে একজন কারাগা বা সাহায্যকারী । ১৯৬০ ইংরেজির আগে ভিক্ষুদেরকে গ্রামের লোকেরা তিরস্কার দিত এমন ঘটনা শুনেছি।
(“আলোকিত তঞ্চঙ্গ্যা ভিক্ষু” লেখা গ্রন্থ থেকে চলবে)