সোমবার ● ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » শিরোনাম » পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা সার্কেলে লুরী পুরোহিত
পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা সার্কেলে লুরী পুরোহিত
রতিকান্ত তঞ্চঙ্গ্যা :: (পূর্বে প্রকাশের পর) লুরী/ লাউরীদের পাঁচটি গোষ্ঠী-জধরা রাউলী, থান রাউলী, খুইদ্যা রাউলী, চান রাউলী ও ধমা রাউলী নামে পুরোহিতরা ভিক্ষা করতে ও দিন মজুরী করতে আমি বহু আগে বহু দেখেছি। মুন্ডিত মস্তক। হলুদ রঙের ছোট এক প্রস্থ গামছা পিছনে গুচ দিয়ে পরিধান করতেন। গলায় রুদ্রাক্ষ মালা, বাহুতে তাবিজ,কাঁধে নোংড়া থলে বা পুতলী। তাদের ধর্ম পুস্তকের নাম আগরতারা। তাদেও মতে লুরী বা রাউলীরা হচ্ছেন ভিক্ষুদের চেয়ে জ্যেষ্ঠতায় ও শীল ভাবনায় অনেক বড় এবং তারা বুদ্ধপুত্র রাহুলের বংশধর। অস্পষ্ট ও অবোধ ভাষায় মন্ত্রপাঠ করে বিভিন্ন রকমের ফি দশা নিরুপন বা নিবারণ করার জন্য স্বজাতির কাছে পুর্ণ সমর্থন পাঠ করে থাকেন। একারণে লুরীর সংখ্যা বৃদ্ধি হলেও এরা অশিক্ষিত অনাচারী আর বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সাথে কঠিন মতানৈক্যতা ছিল।
পার্বত্য চট্টগ্রামের এগারটি ভাষাভাষী আদিবাসী জাতির মধ্যে চাকমা, মারমা ও তঞ্চঙ্গ্যারা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। কথিত আছে অতীতে তঞ্চঙ্গ্যারা ব্রক্ষদেশে রোয়াংরাজ্যে (আরাকান) বৌদ্ধ জাতির সাথে বসবাসের ফলে তাদেও ধর্মাচরণ ছিল বৌদ্ধ। তার কারণে মারমা-তঞ্চঙ্গ্যাদের ধর্মীয় সংস্কার কিছু কিছু মিল রয়েছে আর লেখা পড়া শিক্ষায় এখনো পিছিয়ে। অন্যদিকে চট্টগ্রামে বসবাসরত একই জাতি গোষ্ঠিরা মোঘলের আনুগত্যতা লাভ করেন।তাদের রাজা জব্বর খাঁ ছিলেন বৌদ্ধধর্ম বিদ্বেষী শংকরাচার্যের অনুসারী বলে কথিত রয়েছে। তার শাসনামল থেকে নরদস্যু ম্মিজিলিক (কাপালিক) নামের লোকেরা ছদ্মবেশে বিচরণ করত এবং সুযোগ পেলে মানুষ ধরে নিয়ে যেত। (চাকমা জাতির ইতিহাস-বিরাজ মোহন দেওয়ান পৃষ্ঠা নং ১২২)। প্রবীন সাহিত্যিক কুমুদ বিকাশ চাকমা সম্পাদকীয় পাতায় উল্লেখ করেছেন রাণী কালিন্দী (১৮৩২-১৮৭৪ খ্রি.) শাসনামলে চাকমা রাজ্যে প্রজাবৃন্দসহ হীনযান (থেরবাদ) বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হলেও মহাযান-হীনযান কোন যানও তখন পালন করতেন না, তান্ত্রিকধর্ম পালন করতেন। সেই ধর্মের পুরোহিত ছিলেন রাউলী নামের চাকমাদেও ধর্মীয় গুরু। রাণী কালিন্দীর শাসনামলে পার্বত্য অঞ্চলে চাকমা ভিক্ষু ছিলেন কিনা কিংবা কত সন থেখে ভিক্ষু হয়েছিলেন তার নাম, সন, জাতি তা স্পষ্ট নয়। পুস্তকের নাম “চাকমা বুড্ডিষ্ট টেম্পল ও ধর্মশালা বুদ্ধগয়া এর ইতিবৃত্ত” (ভারতীয় অধ্যায় ও বাংলাদেশ অধ্যায়) মূল্য ৪০০ টাকা।
(“আলোকিত তঞ্চঙ্গ্যা ভিক্ষু” গ্রন্থ থেকে চলবে)