শুক্রবার ● ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » কক্সবাজার » বাংলাদেশী বৌদ্ধরা শান্তপ্রিয় সভ্য জাতি : ওবায়দুল কাদের
বাংলাদেশী বৌদ্ধরা শান্তপ্রিয় সভ্য জাতি : ওবায়দুল কাদের
পলাশ বড়ুয়া, উখিয়া প্রতিনিধি :: (১৫ পৌষ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৯.৫৫মি.) হাজারো পূণ্যার্থীর শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন ও তিন দিনব্যাপী নানান আনুষ্ঠানিকতায় সম্পন্ন হলো সমাজ সংস্কারক, আবাল্য ব্রহ্মচারী প্রয়াত: রেবতপ্রিয় মহাথের’র জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। জানা যায়, ১০ জুলাই ১৯৪৯ সালে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়নের সম্ভ্রান্ত বৌদ্ধ পরিবারে জন্মজাত সন্তান প্রয়াত: ভদন্ত রেবতপ্রিয় মহাথের’র (গৃহীনাম- আনন্দ রত্ন বড়ুয়া)।
কোটবাজারস্থ সাতবাড়িয়া পাড়ার প্রয়াত: মাষ্টার ক্ষিরোদ চন্দ্র বড়ুয়া ও প্রয়াত: সুভদ্রা বালা বড়ুয়া’র সংসারে ১০ ছেলে-মেয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন ৪র্থ সন্তান। অপরাপর সন্তানরা হলেন, মনিকুমতলা বড়ুয়া, পারুলী বড়ুয়া, জিনরত্ন বড়ুয়া, আনন্দরত্ন বড়ুয়া (রেবতপ্রিয় মহাথের), বিরালা বড়ুয়া, স্বর্ণরত্ন বড়ুয়া, পূর্ণিমা বড়ুয়া, মুলিকা বড়ুয়া, বোধিরত্ন বড়ুয়া, জ্যোতিরত্ন বড়ুয়া। উল্লেখ্য প্রয়াত: ভদন্ত রেবতপ্রিয় মহাথের সম্পর্কে সিএসবি ২৪ ডটকম সম্পাদক পলাশ বড়ুয়া’র জেঠা হয়।
অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় আনন্দ রত্নর চিত্তে বৈরাগ্যভাব উৎপন্ন হয়। তৎকালীন সমাজ সংস্কারক, আবাল্য ব্রহ্মচারী, পন্ডিত প্রয়াত: শাসনবংশ মহাথের’র নিকট শ্রামণ্য ধর্মে দীক্ষিত হয়ে পালি ও ধর্মীয় শিক্ষায় অধ্যয়ন করেন।
১৯৭১সালে একই গুরুর সান্নিধ্যে অপরাপর সংঘের উপস্থিতিতে তিনি উপসম্পদা গ্রহণ করে দীর্ঘ ৪৬ বৎসর ধর্ম প্রচার করেন। ভিক্ষু জীবনে তিনি নানান সাংগঠনিক দায়িত্বপালন সহ অবহেলিত এই সমাজ সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বর্তমানেও তাঁর শিষ্য-প্রশিষ্যরা এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছেন। সংসারধর্মে আবদ্ধ না হলেও গৃহীজীবনের অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রয়েছে তাঁর ।
সোমবার (১৩ মার্চ ২০১৭) বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ৬৮ বৎসর বয়সে তিনি পরলোকগমণ করেন। ১৬ মার্চ নানান আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে তাঁর মৃতদেহ পেটিকাবদ্ধ করে সংরক্ষণ করা হয়। উল্লেখ্য মৃত্যুকালীন তিনি উখিয়া ভিক্ষু সমিতির সভাপতি এবং পাতাবাড়ী আনন্দ ভবন বিহারের অধ্যক্ষ পদে আসীন ছিলেন।
উখিয়া পাতাবাড়ী সবুজ চত্বরে হাজার হাজার মানুষ ও শতশত ভিক্ষু সংঘের অংশগ্রহণে প্রয়াত: রেবতপ্রিয়’র অন্তিম সৎকার অনুষ্ঠান আজ মহাসমারোহে সম্পন্ন হলো । গত ২৭ ডিসেম্বর শুরু হয়ে ৩ তিনব্যাপী অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলো আজ শুক্রবার ।
বাংলাদেশ সরকারের সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, গৌতম বুদ্ধের নীতি আদর্শ তাঁকে অনুপ্রাণিত করে। বৌদ্ধরা হলেন বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির নাগরিক। তারা অত্যন্ত শান্তপ্রিয় একটি জাতি। মুসলিমরা যেমন ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তেমনি বৌদ্ধরাও এদেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। আবাল্য ব্রহ্মচারী রেবতপ্রিয় একজন মানুষ ছিলেন। তিনি সংসার ত্যাগ করে এক থেকে অনেকে পরিণত হয়েছে। রেবতপ্রিয় আজ একজন নয়। ৫ শতাধিক ভিক্ষুসংঘের উপস্থিতিতে হাজার হাজার মানুষের নান্দনিক উপস্থিতি তা প্রমাণ করে দিয়েছে। আজ আমরা সবাই তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে এসেছি। আজ ২৯ ডিসেম্বর (শুক্রবার) বিকেলে সমাপণী দিনে জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আজকের বৌদ্ধ সম্প্রদায় একটি অত্যন্ত শান্তিপ্রিয় জাতি এদের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাংলাদেশ সরকারের কতব্য।
প্রথম পর্বের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার সভাপতি সংঘবন্ধু ভদন্ত অজিতানন্দ মহাথের’র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি মৈতলা সদ্ধর্মজ্যোতি বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত শাসনপ্রিয় মহাথের। বিশেষ অতিথি অষ্ট্রেলিয়া থেকে আগত রাজ পন্ডিত ড. বিমলানন্দ মহাথের, ব্যাংকক থেকে আগত ভদন্ত আচান চপ পাশা কমইয়াং, ভারত থেকে আগত বিনয়শ্রী মহাথের, ধর্মদর্শী মহাথের, জিনানন্দ মহাথের, শীলরক্ষিত মহাথের, বুদ্ধানন্দ মহাথের, সুমঙ্গল মহাথের, শীলানন্দ মহাথের, শ্রদ্ধানন্দ মহাথের, ধর্মতিলক ভিক্ষু। প্রয়াত: রেবতপ্রিয়’র প্রিয়শিষ্য জ্ঞানলংকার মহাথের’র সাথে সাথে হাজার হাজার উপাসক-উপাসিকা সমস্বরে প্রয়াত: ভন্তের উদ্দেশ্যে পূণ্য অনুমোদন করেন ।
প্রধান সদ্ধর্মদেশক ঢাকা মেরুল বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত ধর্মমিত্র মহাথের। বিশেষ সদ্ধর্মদেশকবৃন্দ ধর্মপাল মহাথের, রাহুলপ্রিয় মহাথের, দেবমিত্র মহাথের, প্রজ্ঞাজ্যোতি মহাথের, বোধিরতন মহাথের, অনোমদর্শী বড়ুয়া, জিনরতন স্থবির।
উদ্বোধক বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার মহাসচিব ধর্মদূত এস. লোকজিৎ স্থবির। পঞ্চশীল প্রার্থনা করেন প্রাক্তন অব: শিক্ষক অমিয় কুমার বড়ুয়া। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জ্যোতি প্রিয় স্থবির ও জ্যোতি কল্যাণ ভিক্ষু।
দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন ওয়াট থাই জ্ঞানবিরিয় ’র প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ভদন্ত জ্ঞানলংকার মহাথের। বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার উপ-সংঘরাজ ভদন্ত সত্যপ্রিয় মহাথের। প্রধান অতিথি সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রধান বক্তা সাংসদ আবদুর রহমান বদি।
বিশেষ অতিথিদের মধ্যে সাংসদ সাইমুন সরওয়ার কমল, প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী কমরেড দিলীপ বড়ুয়া, জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন, পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়া, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির সভাপতি অজিত রঞ্জন বড়ুয়া, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী রবিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাইলাউ মারমা, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির মহাসচিব সুদীপ বড়ুয়া, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তফা, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী।
প্রধান সদ্ধর্মদেশক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিনবোধি মহাথের, সদ্ধর্মালোচনা করেন, আর্যপ্রিয় মহাথের, সুনন্দপ্রিয় মহাথের, এল. অনুরুদ্ধ মহাথের, ভারতীয় সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার সাধারণ সম্পাদক আনন্দ থের। দ্বিতীয় পর্বে মঙ্গলচারণ করেন জ্যোতি কুশল ভিক্ষু, ভদন্ত জ্যোতি মঙ্গল ভিক্ষু। সঞ্চালনা করেন শিক্ষক মেধু কুমার বড়ুয়া ও রূপন বড়ুয়া। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন শিক্ষক আদিত্য বড়ুয়া রাফুল।
দিনের শুরুতে বিশ্বশান্তি কামনায় মঙ্গলবাণী পাঠ। ভিক্ষু সংঘের প্রাত:রাশ, ধর্মীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে প্রয়াত: ভন্তের উদ্দেশ্যে অষ্টপরিষ্কারসহ সংঘদান, সদ্ধর্মালোচনা করেন প্রাজ্ঞ ভিক্ষুসংঘ। উল্লেখ্য অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণীয় দিক ছিলো জেলার বিভিন্ন গ্রাম আগত ৮টি দলের আলং নৃত্য পরিবেশনা। বিকেল সাড়ে ৪টায় পুজা বন্দনা সহকারে আতশবাজি প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে শ্রদ্ধেয় প্রয়াত: ভদন্ত রেবতপ্রিয় মহাথের’র শবদেহে ভিক্ষুসংঘ অগ্নিসংযোগের মধ্য দিয়ে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্টান সফল সম্পন্ন হয়।
প্রয়াত: রেবতপ্রিয়’র অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্রীমৎ কুশলায়ন মহাথের বলেন, ৩ দিনের ব্যাপক কর্মসূচী সফল ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এ সময় তিনি কক্সবাজার জেলা, উপজেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের মানুষের আন্তরিকতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।