সোমবার ● ১ জানুয়ারী ২০১৮
প্রথম পাতা » কৃষি » মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের হলুদ চাদরে ঢাকা পড়েছে বিস্তৃত প্রকৃতি
মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের হলুদ চাদরে ঢাকা পড়েছে বিস্তৃত প্রকৃতি
আত্রাই, নওগাঁ :: (১৮ পৌষ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪.১০মি.) নওগাঁর আত্রাই উপজেলার প্রতিটি মাঠ জুড়ে এখন সরিষার হলুদ ফুলের চাঁদরে ঢেকে গেছে দিগন্ত বিস্তৃত প্রকৃতি। প্রান্তর জুড়ে উঁকি দিচ্ছে শীতের শিশির ভেজা সরিষা ফুলের দোল খাওয়া গাছগুলো। সরিষার সবুজ গাছের হলুদ ফুল শীতের সোনাঝরা রোদে ঝিকিমিকি করছে। এ এক অপরুপ সৌন্দর্য। যেন প্রকৃতি কন্যা সেজেছে “গায়ে হলুদ বরণ সাজে”। চারপাশের মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত ফসলের মাঠ। উপজেলার প্রতিটি মাঠে এখন শুধু সরিষা ফুলের হলুদ রঙের চোখ ধাঁ-ধাঁলো বর্ণীল সমরাহ। মৌমাছির গুনগুন শব্দে ফুলের রেণু থেকে মধু সংগ্রহ আর প্রজাপতির এক ফুল থেকে আরেক ফুলে পদার্পন এ অপরুপ প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্যিই যেন মনো মুগ্ধকর এক মূহুর্ত। ভোরের বিন্দু বিন্দু শিশির আর সকালের মিষ্টি রোদ ছুঁয়ে যায় সেই ফুলগুলোকে।
এখন শুধু ভালো ফলনের আশায় উপজেলার কৃষকেরা রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কৃষকের পাশাপাশি বসে নেই কৃষি কর্মকর্তারাও। এদিকে চলতি রবিশস্য মৌসুমে কোন প্রকার প্রাকৃতিক দূর্যোগ হানা না দেওয়ায় এবং সরিষা চাষের পরিবেশ অনুকূলে থাকায় সরিষার পাশাপাশি আলু, গম ও ভুট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের কৃষকরা এই সরিষা যথা সময়ে ঘরে তুলতে পাড়লে এবং বিক্রয় মূল্য ভাল পেলে বন্যার কারণে রোপা-আমন ধানের ক্ষতি পুষিয়ে ইরি-বোরো ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে বলে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মনে করছেন।
জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ২ হাজার ৫শত হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। শুরুতেই সরিষা ক্ষেতে পোকা-মাকড়ের আনাগোনা দেখা দিলেও মাঠ পর্যায়ে সরিষা চাষিদেরকে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে যথাযথ পরামর্শ ও প্রত্যক্ষ কারিগরী সহযোগিতার কারণে সরিষা ক্ষেত অনেকটা রোগ-বালাই মুক্ত হওয়ায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। যথা সময়ে সরকারী পর্যায় থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে মান সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে কৃষকের মাঝে সরিষার বীজ সহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ বিতরণ করা হলেও মাঠ পর্যায়ে বেশ কিছু জমি চাষের উপযুগী না হওয়ায় কিছু কৃষকরা ঠিক সময়ে সরিষা বপণ করতে পাড়েনি। ফলে তারা অন্যান্য রবিশস্য চাষের দিকে ঝুকছেন। আগামী ইরি-বোরো ধান উৎপাদনের প্রস্তুতি হিসেবে প্রান্তিক চাষিরা কিছুটা বাধ্য হয়েই অন্যের জমি বর্গা নিয়ে সরিষা, আলু, গম ও ভোট্টা চাষে অতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। উপজেলার শাহাগোলা, ভোঁপাড়া, মনিয়ারী ও আহসানগঞ্জ ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি সরিষা চাষ হয়েছে বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।
উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের কৃষক মো. আবুবক্কর সিদ্দিক সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, আমি এবছর ২ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। কৃষি অফিস থেকে কিছু বীজ পেলেও আমি নিজে বাঁকিটা কিনে জমিতে বপণ করেছি। সরিষা গাছে প্রচুর পরিমান ফুল ধরায় মনে হচ্ছে এবার সরিষার আশানুরুপ ফলন পাব। দাম ভাল হলে পুরোদমে ইরি-বোরো চাষ করতে পারবো।
ভোঁপাড়া গ্রামের সরিষা চাষি রফিকুল ইসলাম সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, আমি চলতি মৌসুমে প্রায় ৩ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। কোন প্রকার দূর্যোগ ও রোগবালাই না থাকায় এবছর সরিষার বাম্পার ফলন পাব বলে আমি আশা করছি।
উপজেলা কৃষি অফিসার কে এম কাউছার জানান, এবারে আত্রাই উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে বিগত বছরের তুলনায় কিছুটা কম সরিষার আবাদ হয়েছে তবে কৃষকেরা অন্যান্য আবাদে ঝুকেছে। যথা সময়ে জমি চাষ যোগ্য হওয়ায় এলাকার কৃষকরা সুযোগ বুঝে সরিষা চাষ করেছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদেরকে যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগে কোন প্রকার ক্ষতি না হলে আত্রাই উপজেলায় সরিষা আবাদের বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রয়েছে।
শুধু তাই নয় সরিষা চাষের জমিগুলো উব্বর্রতা বেশি থাকায় কৃষকরা ইরি-বোরো চাষেও এর সুফল পাবে।