বুধবার ● ১০ জানুয়ারী ২০১৮
প্রথম পাতা » নওগাঁ » প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিনামূল্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে অটিস্টিক উন্নয়ন সংস্থা
প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিনামূল্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে অটিস্টিক উন্নয়ন সংস্থা
নওগাঁ প্রতিনিধি :: (২৭ পৌষ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১২.১৮মি.) নওগাঁর রাণীনগরের প্রত্যন্ত অঞ্চল পারইল ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের একটি গ্রাম কামতা-ভান্ডারগ্রাম। এই গ্রামে ব্যক্তি উদ্যোগে অসহায় ও গরীব শিশুদের বিনামূল্যে পাঠদান করার জন্য গড়ে তোলা হয়েছে মরহুম আজাহারুল ইসলাম মৃধা পাঠদান কেন্দ্র। এই পাঠদান কেন্দ্রে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে গ্রামের অসহায় ও গরীব শিশুদের বিনামূল্যে পাঠদান করানোসহ শিক্ষার সকল উপকরণ বিনামূল্যে প্রদান করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, প্রত্যন্ত এই অঞ্চলে খেটে খাওয়া গোত্রের মানুষদের বসবাস বেশি। এই অঞ্চলের খেটে খাওয়া দিনমজুরের ঘরের সন্তানরা পরিবারের উদাসীনতার কারণে বিদ্যালয়ে না গিয়ে ভবঘুরে দিনকাটায়। এই সব শিশুদের ও তার বাবা-মাকে বুঝিয়ে বিদ্যালয় মুখি করার উদ্দেশ্যে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাদান করানো হয় এই মরহুম আজাহারুল ইসলাম মৃধা পাঠদান কেন্দ্রে। রফিজান প্রতিবন্ধি ও অটিস্টিক উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে গত ২০১৬ সালে গড়ে তোলা হয়েছে এই পাঠদান কেন্দ্রটি। বর্তমানে এই কেন্দ্রে ৩০জন গরীব ও অসহায় শিশু প্রতিদিন প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠ গ্রহণ করছে। একজন শিক্ষিকা মায়ের ভালোবাসা দিয়ে পাঠদান করান এই কেন্দ্রে আসা শিশুদের। এই কেন্দ্রের পাঠগ্রহণ শেষ করে শিশুরা খুব সহজেই মুল ধারার প্রাথমিক শিক্ষায় প্রবেশ করতে পারবে। বিগত বছরে এই কেন্দ্র থেকে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা শেষ করে ৩০জন গরীব ও অসহায় শিশু বর্তমানে কামতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করছে। শুধু প্রাথমিক পর্যায়ে নয় এখানে শিশুদের আরবী, নূরানী কোরআন ও নামায শিক্ষাও প্রদান করা হয় বিনামূল্যে। এপর্যন্ত এই কেন্দ্র থেকে ১৫জন শিশুকে নূরানী কোরআন শিক্ষা প্রদান করে তাদের হাতে কোরআন তুলে দেওয়া হয়েছে। শিশুদের পাশাপাশি এলাকার অনেক বয়স্ক মানুষরাও এই কেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে আরবী, নূরানী কোরআন ও নামায শিক্ষা গ্রহণ করছে। এই সংস্থা এলাকার অসহায় ও গরীব মানুষের জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে আসছে দীর্ঘদিন যাবত। এলাকার গরীব ও অসহায় মানুষের মাঝে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পৌছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে বছরে একাধিকবার আয়োজন করা হয় ফ্রি চিকিৎসার। এলাকার প্রতিবন্ধিদের মাঝে শিক্ষার আলো পৌছে দেওয়ার জন্য এই সংস্থ্যার নামে ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে রফিজান প্রতিবন্ধি ও অটিস্টিক বিদ্যালয়। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে এলাকার শতাধিক প্রতিবন্ধি শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে শিক্ষা গ্রহণ করছে। এখন আর এই গ্রামে সকালে কোন শিশুকে রাস্তায় কিংবা কোন উঠানে খেলা করতে দেখা যায় না। সকালে শিশুদেরকে বইয়ের ব্যাগ নিয়ে এই শিক্ষা কেন্দ্রে যেতে দেখা যায়। এই কেন্দ্রেই এই সব শিশুদের পড়ালেখা হাতে খড়ি দেওয়া হয় ।
রফিজান প্রতিবন্ধি ও অটিস্টিক উন্নয়ন সংস্থ্যার প্রতিষ্ঠাতা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মো: আফজাল হোসেন বলেন, আমার এই গ্রাম ও তার আশপাশের গ্রামগুলোতে অনেক গরীব ও অসহায় মানুষের বসবাস। যাদের অধিকাংশই খেটে খাওয়া দিনমজুর। এই সব পরিবারের অনেকেই সন্তানকে বিদ্যালয় মুখি না করে শিশু বয়সেই সন্তানদের অর্থ আয়ের পথে নিয়ে যায়। আবার অনেকের সামর্থ না থাকার করণে সন্তানদের শিক্ষা প্রদান করতে পারে না। আমি এই সব অবহেলিত মানুষের কথা চিন্তা করে আমার মায়ের নামে এই সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেছি। যাতে করে এই অঞ্চলের কোন গরীব, অসহায় ও প্রতিবন্ধি শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয়। কোন মানুষ চিকিৎসার অভাবে মারা না যায়। কোন শীতার্থ মানুষ যেন শীত বস্ত্রের অভাবে শীতে না কাঁদে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া বিনতে তাবিব বলেন, এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। সরকারের একার পক্ষে সমাজকে আমূল পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এই রকম মানুষরা এগিয়ে আসলে সমাজকে অতি সহজেই পরিবর্তন করা সম্ভব। সরকারের কোন সহযোগিতা যদি আফজাল সাহেব নিতে চান তাহলে আমরা তাকে সার্বিক সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।