বুধবার ● ১০ জানুয়ারী ২০১৮
প্রথম পাতা » রাজনীতি » সিরাজগঞ্জ-৩ আওয়ামীলীগে এক ডজন-বিএনপিতে-৪
সিরাজগঞ্জ-৩ আওয়ামীলীগে এক ডজন-বিএনপিতে-৪
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি :: চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ ও সলঙ্গার একাংশ) আসনে সবচেয়ে বেশি নির্বাচনী আমেজ শুরু হয়েছে। নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে নির্বাচনী এলাকা। প্রার্থীরা প্রতিদিন সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করছেন। ইসলামী জালছাগুলোতে অতিথির হবার হিড়িক পড়ে গেছে। কর্মীরা বিপদে পড়লে আগ বাড়িয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। আসনটিতে আওয়ামীলীগ থেকে একডজন প্রার্থী এবং বিএনপি থেকে চারজন প্রার্থী প্রচার-প্রচারণায় মাঠে নেমেছে। তবে বিএনপিতে চারবারের নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান তালকুদার ধানের শীষ ও আওয়ামীলীগে বর্তমান এমপি ম.ম আমজাদ হোসেন মিলন নৌকার কান্ডারী হবেন বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।
বিএনপি দলীয় সুত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সাল থেকে রায়গঞ্জ-তাড়াশ ও সলঙ্গার একাংশের বিএনপির হাল ধরে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান তালুকদার। ’৯১ থেকে পরপর চারবার তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকার রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন সেক্টরে উন্নয়ন করেন। বিএনপি নেতাকর্মীর পাশাপাশি এলাকার সাধারন মানুষের হৃদয়ে তিনি স্থান করে নিয়েছেন। কিন্তু ২০০৮ সালে তিনি আওয়ামীলীগ প্রার্থী মরহুম ইসহাক হোসেন তালুকদারের কাছে হেরে যান। তারপরেও তিনি দলের হাল ও মাঠ ছাড়েননি। বয়োবৃদ্ধ হলেও এখনো মাঠে-ঘাটসহ এলাকার মানুষের দোড়-গোড়ায় তার পদচারণা রয়েছে। ভোটের মাঠে আওয়ামীলীগের একমাত্র আতঙ্ক আব্দুল মান্নান তালুকদার। এবারো ভোটের মাঠে বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে নেমেছেন তিনি। গ্রাম-গঞ্জে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। নেতাকর্মীদের মতে রায়গঞ্জ-তাড়াশে বিএনপিতে আব্দুল মান্নান তালুকদার ছাড়া বিকল্প নেই। তবে আসনটিতে তাড়াশ উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার সেলিম জাহাঙ্গীর মনোনয়ন পাবার জন্য লবিং গ্রুপিংয়ের পাশাপাশি ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। দুঃস্থ ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে থেকে সাধ্যমত সহায়তা করছেন। তিনি জানান, বয়সজনিত কারণে সাবেক এমপি মান্নান তালুকদার ঠিক মতো সালমাতে পারছে না। নেতাকর্মীসহ জনগনের কাঙ্খিত চাহিদা আশানুরপ পুরণ করতে পারবেনা। এক্ষেত্রে তিনি মনোনয়ন পেলে দলকে সুসংগঠিত এবং আসনটি পুনরুদ্ধার করতে শতভাগ সফল হবেন মনে করেন তিনি। এছাড়াও আসন থেকে এবিএনপি নেতা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আয়নুল হক ও বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম শিশির মনোনয়ন প্রত্যাশী
তাড়াশ উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক আফসার আলী ও রায়গঞ্জ উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক শামসুল ইসলামসহ একাধিক নেতা জানান, রায়গঞ্জ-তাড়াশ ও সলঙ্গায় নব্বই শতাংশ বিএনপির নেতাকর্মী মান্নান তালুকদারের ভক্ত ও সমর্থক। জনগনও তার প্রতি আস্থাশীল। এ কারণে আসনটিতে মান্নান তালুকদারের বিকল্প নেই। যদি তাকে ছাড়া অন্য কেউ প্রার্থী হয় তাহলে আসনটি পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়।
সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান তালুকদার জানান, রায়গঞ্জ-তাড়াশের সকল উন্নয়ন তার হাতেই হয়েছে। আগামীতে দল থেকে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে স্কুল-কলেজ, ব্রীজ ও কালভার্টসহ বাকী উন্নয়নের কাজ করা হবে। বিশেষ করে রায়গঞ্জ তাড়াশের বেকার নারী-পুরুষদের কর্মমুখী করতে কয়েকটি কুটির শিল্প কারখানা নির্মাণ করা হবে।
আওয়ামীলীগ দলীয় সুত্র জানা যায়, ২০১৪ সালের আগ পর্যন্ত রায়গঞ্জ-তাড়াশ ও সলঙ্গা একাংশের নেতৃত্ব ছিলেন সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ইসহাক হোসেন তালুকদার। ২০১৪ সালের ৬ অক্টোবর তার মৃত্যুর পর বীর মুক্তিযোদ্ধা তাড়াশ উপজেলা আওয়ামীলীগের কান্ডারী ম.ম আমজাদ হোসেন মিলন মনোনয়ন পান। বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় এমপি নির্বাচিত হয়ে রায়গঞ্জ-তাড়াশের বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কাজ শুরু করেন। শতাধিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার নতুন ভবন ও সম্প্রসারন কাজ, গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ও ব্রীজ কালভার্ট নির্মাণ করেছে। ৬২টি গ্রামে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ ও মৎস্যচাষীদের জন্য ৮৭৮টি পুকুর খনননের কাজ করেছেন। প্রতিটি গ্রামে তার উন্নয়নের ছোয়া রয়েছে। তার নেতৃত্বে তাড়াশ নতুন পৌরসভা গঠিত হয়েছে। জামায়াত-বিএনপি অধুষ্যিত এলাকায় রায়গঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামীলীগ থেকে মেয়র নির্বাচিত হয়েছে। সতেরটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ থেকে নির্বাচিত হয়েছে। আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো শক্তিশালী করে তুলছেন। রায়গঞ্জ-তাড়াশ ও সলঙ্গার থানার দুটি ইউনিয়ন নিয়ে সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের মধ্যে তাড়াশ থানার ভোটার সংখ্যা এক লক্ষ ২৮ হাজার আর রায়গঞ্জ-সলঙ্গায় দুই লক্ষ ৩২ হাজার। তাড়াশ থেকে একমাত্র আমজাদ হোসেন মিলন একক প্রার্থী। রায়গঞ্জ-সলঙ্গা থেকে ১০জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী। এজন্যে ভোটের মাঠে ম.ম.আমজাদ হোসেন মিলন সবচেয়ে বেশিী শক্তিশালী প্রার্থী। তাছাড়া বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী আব্দুল মান্নান তালুকদারের সাথে টক্কর দেয়ার জন্য মিলনই যোগ্য বলে প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের দাবী। এছাড়াও আসনটিতে রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা বাস-মালিক সমিতির সভাপতি ক্লিন ইমেজের আলমাজী জিন্নাহ মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন। তিনি জানান, মনোনয়ন পেলে আওয়ামীলীগের সকল ইউনিটের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস ও পরিবহন সেক্টরের নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে কাজ করে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করা সম্ভব। আর এ লক্ষ্য নিয়েই কর্মীদের সাথে নিয়ে ভোটের মাঠে কোমড় বেঁধে মাঠে নেমেছেন। সলঙ্গা থানা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা শিল্পপতি এটিএম লুৎফর রহমান দিলুও জোরে মাঠে নেমেছেন। প্রায় তিনবছর আগ থেকে রায়গঞ্জ-তাড়াশ ও সলঙ্গা আওয়ামীলীগ গোছাতে সভা-সমাবেশ বৈঠক-গণসংযোগ ও কর্মীদের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। ব্যক্তি অর্থ দিয়ে মসজিদ-মাদ্রাসার উন্নয়ন ও কর্মীদের দেখভালে ভুমিকা রাখছেন। ক্লিন ইমেজের দিলু মনোনয়ন পেলে জননেত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে দেশ ও দেশের মানুষের উন্নয়ন কাজ করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন। সাবেক এমপি মরহুম ইসহাক হোসেন তালুকদারের ছেলে ইমরুল হাসান ইমন নিজের ক্লিন ইমেজের পাশাপাশি মরহুম পিতার উন্নয়ন ও ইমেজ কাজে লাগিয়ে ভোটের মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তার সমর্থকরা মনে করছেন ইমন মনোনয়ন পেলে বাবার জয়ের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারবেন। এছাড়াও আসনে সলঙ্গা থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি রায়হান গফুর, রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক তরুণ নেতা আবুল কালাম হৃদয়, ট্রাস্টি স্বপন কুমার রায়, রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শরিফুর ইসলাম শরিফ, কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সুইট, স্বাচিব নেতা ডা. আব্দুল আজিজ ও রায়গঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রেজাউল করিম তালুকদার মনোনয়ন প্রত্যাশী। অন্যদিকে, আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা জানান, ২০১৪ সালে আমজাদ হোসেন মিলন মনোনয়ন চাওয়ার সময় থেকেই উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হকসহ দুই নেতা চরম বিরোধিতা করেন। এরপর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ওই দুই নেতার মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়ে এমপির সাথে দ্বন্ধ চরম আকার ধারণ করে। এরই মধ্যে সভাপতি আব্দুল হকের বিরুদ্ধে পুকুর দখলকে কেন্দ্র করে এলাকায় জুতা ও ঝাড়– মিছিল হওয়ায় তিনি এমপির বিরুদ্ধে আরো ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন। এ অবস্থায় সভাপতি আব্দুল হক তাড়াশের ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে নিয়ে এন্টি মিলন গ্রুপ তৈরী করে তার বিরুদ্ধে নানা প্রচার-প্রচারণা লিপ্ত হয়। দুই ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে থানায় জিডি হওয়ায় গত বছরের অক্টোবরে আইনশৃংখলা মিটিংয়ে দুই চেয়ারম্যান তৎকালীন ওসিকে দোষারোপ করে বক্তব্য রাখলে মিটিংয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মিটিং শেষে একদল সন্ত্রাসী উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হককে মারপিট করে। এ জন্য এমপি ও তার পরিবারকে দায়ী করে মামলা দায়ের করা হয় এবং জেলা আওয়ামীলীগসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগে এমপি আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে আত্মীয়করণসহ নানা অভিযোগ দেয়া হয়। কিন্তু অদ্যাবধি পর্যন্ত বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় তাড়াশ উপজেলা আওয়ামীলীগ দুই বলয়ে বিভক্ত রয়েছে। এ অবস্থায় আভ্যন্তরীন এ কোন্দলে সুযোগ নিতে তৎপর রয়েছে বিএনপি।
সলঙ্গা থানা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ফনিভুষন পোদ্দার ও তাড়াশ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, মু্িক্তযোদ্ধা ও তাড়াশ আওয়ামীলীগের সংগঠক হিসেবে মিলনের প্রতিটি গ্রামে পদচারণা রয়েছে। দুইবার ইউপি চেয়ারম্যান, দুইবার উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্বাধীনতার পর থেকে টানা ২০ বছর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করায় প্রতিটি গ্রামের মানুষের সাথে হৃদতার সম্পর্ক রয়েছে। দলের পাশাপাশি ব্যক্তিগত একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে। যা অন্যান্য প্রার্থীর নেই। এ জন্য আসনটিতে মিলনের বিকল্প নেই।
সলঙ্গা থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি রায়হান গফুর জানান, দলের জন্য নিবেদিত, পরীক্ষিত- দক্ষ ও যোগ্য এবং জনগনের সাথে সুসম্পর্ক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হলে আসনটিতে পুনরায় আওয়ামীলীগের বিজয় সুনিশ্চিত।
জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হান্নান সেখ জানান, রায়গঞ্জ-তাড়াশ থেকে যে সকল প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী তার মধ্যে দলীয় গ্রহনযোগ্যতায় মিলন এগিয়ে রয়েছেন। কিন্তু সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে পত্র-পত্রিকায় নানান বিরূপ তথ্য ওঠছে। এগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে পারলে তার অবস্থান অনেকটা শক্তিশালী হবে। এবাস্তবতায় জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দিবেন তার পক্ষেই সবাই কাজ করবে।
সংসদ সদস্য ম.ম. আমজাদ হোসেন মিলন জানান, বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ৭১’রে যুদ্ধে করেছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামীলীগ রাজনীতির সাথে জড়িত রয়েছি। বহু ঘাত-প্রতিঘাত পার করতে হয়েছে। অনেক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। বর্তমানেও অপপ্রচারসহ নানা ধরনের ষড়যন্ত্র শিকার হচ্ছি। তারপরেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে একপা পিছপা হয়নি। ভবিষ্যতেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মোতাবেক দল ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাবো।