শনিবার ● ১৩ জানুয়ারী ২০১৮
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » রাঙামাটি জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ফুতপাত কেটে ফেলার অভিযোগ
রাঙামাটি জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ফুতপাত কেটে ফেলার অভিযোগ
ষ্টাফ রিপোর্টার :: (৩০ পৌষ ১৪২৪ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় রাত ১.৩৫মি.) অবৈধ দখলদার আর স্থানীয় প্রশাসনের অযত্ন অবহেলায় পথচারিদের চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে পর্যটন নগরি খ্যাত রাঙামাটি শহরের ৪ কিঃ মিঃ ফুটপাত ও পায়ে চলার রাস্তা। যথাযত আইন প্রয়োগ না হওয়ার কারণে বর্তমানে রাঙামাটি শহর অবৈধ দখলদারদের স্বর্গরাজ্যে পরিনত হয়েছে। পর্যটন পরিবেশ বজায় রাখা তো পরের কথা সাধারনভাবে সুষ্ঠ ও পরিবেশগত জীবণ যাপনেও প্রতিনিয়ত বাধা গ্রস্থ হচ্ছে পার্বত্য জেলার সাধারন নাগরিকরা।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, রাঙামাটির পৌর এলাকার জনসাধারনের পায়ে চলাচলের জন্য ১৯৭৭-১৯৭৮ সালে সরকারি অর্থায়নে সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্বাবধানে ফুটপাত নির্মাণ করা হয়। পর্যটন নগরী রাঙামাটি পৌর এলাকাটি রিজার্ভ বাজার, তবলছড়ি ও বনরুপা হয়ে মানিকছড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত। তদারকির অভাবে দীর্ঘ ৩৯ বছরে রাঙামাটি শহরের সরকারি অর্থে নির্মিত ফুটপাত জনসাধারন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ২০০টি স্থানে ফুটপাত কেটে নিজেদের ব্যাক্তি সম্পদ হিসাবে ব্যবহার করছে একশ্রেণীর মানুষ। ফুটপাত দখল করে তৈরী করা হয়েছে পেট্রোল পাম্প, দোকান ঘর, টেক্সী ষ্টেশন, সরকারি-বেসরকারি অফিস, রাজনৈতিক দলের কার্যালয়,বিলাস বহুল স্থাপনা ও আবাসিক হোটেল ইত্যাদি।
চলতি শীত মৌসুমে পর্যটকদের আগমনে নির্ভিঘ্নে রাঙামাটি শহরে যাতায়াতের কথা বিবেচনা করে গত ৬ মাস আগে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন আয়োজিত জেলা আইন শৃংখলা কমিটির সভায় রাঙামাটি শহরের অবৈধ ফুটপাত দখলকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় জেলা প্রশাসন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং রাঙামাটি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ যৌথ অভিযানের মাধ্যমে যত্রতত্র স্তুপ করে রাখা লাকড়ী, বাঁশ, গাছ, ইট, বালি ঠেলা গাড়ী, ভ্যানগাড়ী, বিল বোর্ড, আসবাবপত্র নির্মাণের সামগ্রী (ফার্নিচারের কাঠ) ইত্যাদি ও বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী বেআইনীভাবে রাখা, ফুটপাত কেটে নিজস্ব রাস্তা তৈরী করা, দোকান-পাট, অফিস, বিভিন্ন মার্কেট ও আবাসিক হোটেল মালিকদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহনের পরেও জেলার উচ্চ পর্যায়ের সরকারী, আধাসরকারী, স্বায়ত্বশাসিত, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় সুশীল সমাজের গৃহীত সিদ্ধান্ত ৬ মাসেও বাস্তবায়িত হয়নি।
এবার খোদ রাঙামাটি জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ আইন অমান্য করে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অনুমতি ছাড়া সরকারি সম্পদ রাঙামাটি শহরে জনসাধারনের পায়ে হাটার ফুতপাত কেটে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাঙামাটি জেলা পরিষদের কার্যালয় সংলগ্ন জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয়ের সামনে রাঙামাটি জেলা পরিষদ দোতলা একটি ভবন নির্মান করে তার নিচ তলায় দোকান ঘর নির্মান করে নতুন নির্মিত ভবনের সামনের অংশ রাঙামাটি-চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সড়কের পার্শ্বের রাঙামাটি শহরে জনসাধারনের পায়ে হাটার ফুতপাত দিনের বেলা কেটে ফেলেছে। গত বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) যখন উন্নয়ন মেলার র্যালীটি রাঙামাটি জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে জিমন্যানাশিয়ামের দিকে যাচ্ছে ঠিক সেসময়ে ঠিকাদারের ৬জন লোক জনসাধারন চলাচলের রাস্তা ফুটপাত কাটার কাজটি করছিলেন কিন্তু জেলার উর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিরা ফুতপাত কেটে ফেলার ঘটনাটি দেখেও না দেখার মতো করে এড়িয়ে যান। এ যেন সরিষার মধ্যে ভুত !
রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা প্রায় সময় জেলা উন্নয়ন কমিটির সভায় রাঙামাটি শহরে অবৈধ দখলদার, কাপ্তাই লেকের পাড় দখল করে অবৈধভাবে গড়ে উঠা স্থাপনা উচ্ছেদ, রাঙামাটি শহর পর্যটকদের কাছে সুন্দর ও আকর্ষনিয় করে গড়ে তোলা এবং পর্যটক ও সাধারন মানুষের পায়ে চলাচলের রাস্তা ফুতপাত থেকে অবৈধ দখলদার মুক্ত করা এবং এইটি রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য সকলের দৃষ্টি আর্কষণ করে থাকেন।
কিন্তু এবার নিজে ফুতপাট কেটে প্রমাণ করেছেন তার কথা এবং কাজের মধ্যে কোন মিল নাই।
বিষয়টি নিয়ে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের রাঙামাটি কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এমদাদ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রাঙামাটি জেলা পরিষদ জনসাধারনের চলাচলের ফুতপাত কেটে ফেলেছে। বিষয়টি আমার অফিস জানার পর এই ফুতপাত সরকারি সম্পদ ফুতপাট কাটতে গেলে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের প্রধান কার্যালয়ের অনুমতি নিতে হবে বলে আমি তাদের পরার্মশ দিয়েছি এবং সরকারি অনুমতি ছাড়া এই ফুতপাত কাটা বন্ধ করতে বলেছি।
তিনি আরো বলেন,চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের রাঙামাটি রাবার বাগান থেকে রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের বাংলো পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে সড়কের দুই পাশে আইন অমান্য করে সরকারী জায়গাতে এক শ্রেনীর লোভী লোকজন তাদের ইচ্ছে মত গড়ে তুলেছে অসংখ্য স্থাপনা। আইন শৃংখলা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের রাঙামাটি কার্যালয় থেকে বেআইনি দখলদারদের নাম তালিকা করে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার জন্য রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অফিসিয়াল চিঠি দিয়েছি, এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ তো দুরের কথা এখন জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে আমাদের বলা হচ্ছে উনারা না-কি আমার কার্যালয় থেকে প্রেরিত তালিকা বুঝেন নাই। তাই আইন প্রয়োগ করে সরকারি সম্পদ রক্ষা করা, এবং ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সরকারি ফুতপাত দখলমুক্ত করার জন্য “ল এন্ড ফোর্স” আমার কাছে নাই।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের রাঙামাটি কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আরো বলেন, আমি আশ্চার্য্য হই, যখন দেখি মানুষের পায়ে হেটে চলাচলের ফুতপাতে নির্মান সামগ্রী রাখা,যার যার ইচ্ছামত বাজার, দোকান পাট নির্মান এবং যখন যার ইচ্ছা সরকারি সম্পদ জনসাধারনের চলাচলের ফুতপাত কেটে ফেলছে। সঠিক সময়ে আইন প্রয়োগ না হওয়া এবং স্থানীয় প্রশাসনের নিরবতার কারণে শুক্রবার ১২ জানুয়ারী দেখা যায় কাঠালতলী আইএফআইসি ব্যাংক সংলগ্ন এলাকায় সরকারি ফুতপাট অনুমতি বিহীন ইচ্ছামত কেটে দোকানের অংশ বর্ধিত করা হয়েছে।
বিষয়টি জানতে সিএইচটি মিডিয়ার পক্ষ থেকে রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা মুঠোফোন-০১৮৪৩০৩১৯৮৯ ও নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী আবদুস সামাদ মুঠোফোন ০১৭৫১৮৮৮৯৯০ কল দিয়ে যোগাযোগ করার একাধিকবার চেষ্টা করা পর ফোন রিসিভ না করায় বিষয়টি নিয়ে রাঙামাটি জেলা পরিষদের কোন মতামত পাওয়া যায়নি।