শনিবার ● ১৩ জানুয়ারী ২০১৮
প্রথম পাতা » গবেষনা » বিগত বছরের সড়ক দূর্ঘটনায় ৭৩৯৭ জন নিহত, ১৬১৯৩ জন আহত : যাত্রী কল্যাণ সমিতি
বিগত বছরের সড়ক দূর্ঘটনায় ৭৩৯৭ জন নিহত, ১৬১৯৩ জন আহত : যাত্রী কল্যাণ সমিতি
ঢাকা প্রতিনিধি :: (৩০ পৌষ ১৪২৪ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪.৪৯মি.) ২০১৭ সালের ১৮ নভেম্বর ঢাকা থেকে মাইক্রোবাসে ছেপে স্বপরিবারে নিজ নির্বাচনী এলাকা গাইবান্ধার সুন্ধরগঞ্জ যাচ্ছিলেন সরকারদলীয় সাংসদ গোলাম মোস্তফা আহম্মেদ। পথে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নাটিয়াপাড়া এলাকায় বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ১০ জুলাই রাত ২টায় বগুড়ার নন্দীগ্রামে নিজ ঘরে মা-বাবার সাথে ঘুমাচ্ছিলেন একমাত্র মেয়ে রিতা খাতুন (১১)। আম বোঝাই ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বেড়ার ঘরে ঢুকে চাপা দেয় ঘুমন্ত রিতাকে। ভাগ্যক্রমে বাবা রাজু ও মা সনেকা বেঁচে গেলেও সেই ট্রাকের চাপায় আর জেগে উঠতে পারেনি ঘুমন্ত রিতা। ০৬ ডিসেম্বর মাগুরার রাঘবদাইড় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী মিনু খাতুন পরীক্ষা শেষে রাস্তার ফুটপাত দিয়ে হেঁটে বাড়ী ফেরার পথে চলন্তু ট্রাকের চালক মিনুর চুল ধরে টান দেয় এতে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। ১৯ মে গভীর রাতে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা সদরে চালক শফিকুল ইসলামের অটোরিক্সার সাথে একটি বাসের ধাক্কা লাগে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অটোরিক্সা চালক ও বাস চালক ঝড়গায় লিপ্ত হয়। বাকবিতঙ্গার এক পর্যায়ে বাস চালক ও হেলপার মিলে ওই অটোরিক্সা চালককে ধরে গাড়ীতে উঠিয়ে নিয়ে যায়। পরে গাড়ীর ভেতর তাকে মারধর করে ঘোড়াশাল এলাকায় নিয়ে ধাক্কা দিয়ে চলন্ত বাসের চাকার নিচে ফেলে দেয়। এতে ঘটনাস্থলে ওই চালকের মৃত্যু হয়। ২০ আগষ্ট রাতে বিয়ের দাওয়াত খেয়ে স্ত্রী দুই সন্তানসহ স্বপরিবারে বাসায় ফিরছিলেন প্রবাসী শেখ মো. সোহেল। চট্টগ্রামের শাহ আমানত সেতুর কাছে তাদের বহনকারী অটোরিক্সাকে চাপা দেয় একটি ট্রাক। এতে সোহেল তার স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ অটোরিক্সার চালক মারা যায়। মুহুর্তেই পৃথিবীর ইতিহাস থেকে মুছে যায় সুখী সমৃদ্ধ একটি পরিবার।চট্টগ্রামের সাতকানিয়া পৌর এলাকার প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন (২৬) ও ব্যাংকার নুরুন নাহার নুরির (২০) বিয়ে হয় বিদায়ী বছরের ১৬ আগষ্ট। নববধুকে নিয়ে কোরবানি উপলক্ষে ১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম শহরের বাসা থেকে সাতকানিয়া গ্রামের বাড়ী যাওয়ার পথে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের নয়াখালেরমুখ এলাকায় পৌছলে তাদের বহনকারী দ্রুতগতিতে ছুটে চলা বাসটি অপর একটি বাসকে অভারটেক করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে। এতে মেহেদীর রঙ মুছার আগে নব দম্পতি গিয়াস উদ্দীন-নুরুন নাহার নুরিসহ ৩ জন ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করে। এভাবে প্রতিদিন অসংখ্য দুর্ঘটনায় কখনও একজন বা কখনও পুরোপরিবার মৃত্যুর মিছিলে শামিল হচ্ছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বিদায়ী ২০১৭ সালে সারাদেশে ৪,৯৭৯ টি সড়ক দূর্ঘটনায় ৭,৩৯৭ জন নিহত, ১৬,১৯৩ জন আহত হয়েছে।
আজ ১৩ জানুয়ারী শনিবার সকালে ঢাকা রির্পোটার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী উপরোক্ত তথ্য তুলে ধরেন। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড.হোসেন জিল্লুর রহমান, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সংগঠন ফুয়ারার সভাপতি ইকরাম আহম্মেদ, বুয়েট এর দুর্ঘটনা গবেষনা কেন্দ্রের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ, সাবেক সংসদ সদস্য এড. হুমায়ন কবির হিরু, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিকলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মো. হানিফ খোকন, বীর মুক্তিযোদ্ধা বিশিষ্ট সমাজ সেবক মো. হারুন অর রশিদ প্রমূখ।
দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্র সমূহে প্রচারিত সড়ক দূর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করে সংগঠনটি। এতে দেখা গেছে বিদায়ী ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারী থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ মাসে ছোট-বড় ৪,৯৭৯ টি সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এতে সর্বমোট ২৩,৫৯০ জন যাত্রী, চালক ও পরিবহন শ্রমিক সড়ক দূর্ঘটনায় হতাহত হয়েছে। এসব দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছে সর্বমোট ৭,৩৯৭ জন, আহত হয়েছে ১৬,১৯৩ জন। এর মধ্যে হাত, পা বা অন্য কোন অঙ্গ হারিয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়েছে ১,৭২২ জন। এইসব দুর্ঘটনায় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান দাঁড়াচ্ছে জিডিপি’র প্রায় দেড় থেকে দুই শতাংশ।
এসময় ১২৪৯টি বাস, ১৬৩৫টি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ২৭৬ টি হিউম্যান হলার, ২৬২ টি কার, জীপ, মাইক্রোবাস, ১০৭৪ টি অটোরিক্সা, ১৪৭৫টি মোটরসাইকেল, ৩২২ টি ব্যাটারী চালিত রিক্সা, ৮২৪টি নছিমন করিমন দূর্ঘটনার কবলে পড়ে।
সংগঠিত দুর্ঘটনার ৪২.৫ শতাংশ পথচারীকে চাপা, ২৫.৭ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১১.৯ শতাংশ খাদে পড়ে, ২.৮ শতাংশ চাকায় ওড়না পেছিয়ে সংগঠিত হয়।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যান মতে দেখা গেছে ঃ
বিদায়ী ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে ৪৫০ টি সড়ক দূর্ঘটনায়, ১,১০৩ জন আহত ও ৫২০ জন নিহত হয়, এ মাসে ১১০ টি বাস, ১৮৩ টি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ১৫ টি হিউম্যান হলার, ১৬ টি কার ও মাইক্রোবাস, ৭৮ টি অটোরিক্সা, ১৩৫ টি মোটরসাইকেল, ২০ টি ব্যাটারী চালিত রিক্সা, ৭৬টি নছিমন করিমন সড়ক দূর্ঘটনার কবলে পড়ে। এসব দুর্ঘটনার ১৪৮টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২৯টি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে খাদে পড়ে, ৮টি ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া চাকায় ওড়না পেছিয়ে ১১ জন, গাড়ী চাপায় ১৯৬ জন পথচারী সড়ক দূর্ঘটনার নিহত হয়েছে।
ফেব্রুয়ারি মাসে ৪৬৬ টি সড়ক দূর্ঘটনা সংগঠিত হয়। এতে ১৬০৬ জন আহত ও ৫৩৫ জন নিহত হয়। এই মাসে ১২৬ টি বাস, ১৫৫ টি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ২১টি হিউম্যান হলার, ৭২টি অটোরিক্সা, ৩০টি কার ও মাইক্রোবাস, ১৪৬টি মোটরসাইকেল, ২৯টি ব্যাটারী চালিত রিক্সা, ৭৮টি নছিমন করিমন সড়ক দূর্ঘটনার কবলে পড়ে। এসব দুর্ঘটনায় ১৩৪টি মুখোমুখি সংঘর্ষ ও ৭২টি খাদে পড়ে ঘটনা ঘঠেছে। এছাড়াও চাকায় উড়না পেছিয়ে ১৫জন ও ১৮১ জন পথচারী সড়ক দূর্ঘটনার নিহত হয়েছে।
মার্চ মাসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে এ মাসে ৪৭২ টি সড়ক দূর্ঘটনায়, ১০৪৮ জন আহত, ৫০৬ জন নিহত হয়েছে। এ মাসে ৯৯টি বাস ১৬৬ টি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ২৮টি হিউম্যান হলার ৯১ টি অটোরিক্সা ১৬টি কার ও মাইক্রোবাস ১১৫টি মোটরসাইকেল ২৩টি ব্যাটারী চালিত রিক্সা ৬৫টি নছিমন করিমন দূর্ঘটনার কবলে পড়ে। এসব দুর্ঘটনায় ১০৫ টি মুখোমুখি সংঘর্ষ ৩৮টি খাদে পড়ে ও ১টি ট্রেন- যানবাহনের সংর্ঘষের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও চাকায় ওড়না পেছিয়ে ১১ জন ও দ্রুত গাড়ীর চাপায় ২৩৭ জন সড়ক দূর্ঘটনার নিহত হয়েছে।
এপ্রিল মাসে ৩৭৭ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯১০ জন আহত, ৪১৮ জন নিহত হয়। এই মাসে ৯৭ টি বাস ১৪৪টি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ২৬ টি হিউম্যান হলার ৯৪ টি অটোরিক্সা, ২৫টি কার ও মাইক্রোবাস, ১০৯টি মোটরসাইকেল, ২৩টি ব্যাটারী চালিত রিক্সা, ৬৭টি নছিমন করিমন সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে ১০৫টি সংঘর্ষ, ৮০টি খাদে পড়ে ০১ টি বাস-ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও চাকায় ওড়না পেছিয়ে ৯ জন ও গাড়ীর চাপায় ১২৬ জন সড়ক দুর্ঘটনার নিহত হয়।
মে মাসে ৪৩১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১০৪৫ জন আহত ৫৩৯ জন নিহত হয়। এসময় ৯৯টি বাস, ১৪২ টি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ৯ টি হিউম্যান হলার, ৮৫টি অটোরিক্সা, ২১ টি কার ও মাইক্রোবাস, ১১৬টি মোটরসাইকেল, ১১টি ব্যাটারী চালিত রিক্সা, ৫৪টি নছিমন করিমন সড়ক দূর্ঘটনার কবলে পড়ে। এছাড়াও চাকায় ওড়না পেছিয়ে ১৫ জন ও ২০০ জন পথচারী সড়ক দূর্ঘটনার নিহত হয়।
জুন মাসে ৪০২ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১০৫৪ জন আহত ও ৫০৩ জন নিহত হয়েছে। জুন মাসে ৯৯টি বাস, ১৫৩ টি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ৩১টি হিউম্যান হলার, ১০১ টি অটোরিক্সা, ৩২টি কার ও মাইক্রোবাস, ১২২টি মোটরসাইকেল, ৩৫টি ব্যাটারী চালিত রিক্সা, ৬৮টি নছিমন করিমন সড়ক দূর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে ১২৪ টি সংর্ঘষ, ৬৪ খাদে পড়ে। গাড়ী চাপায় ১৫৮ জন পথচারী এমাসে সড়ক দূর্ঘটনার নিহত হয়।
জুলাই মাসে ৩৮০টি সড়ক দূর্ঘটনায় ১৪৩২ জন আহত ও ৪২৫ জন নিহত হয়। এই মাসে ১২৫টি বাস, ১০৫টি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ২০ টি হিউম্যান হলার, ২৩টি কার ও মাইক্রোবাস, ৯৭টি অটোরিক্সা, ১১৩টি মোটরসাইকেল, ২১টি ব্যাটারী চালিত রিক্সা, ৭৬টি নছিমন করিমন সড়ক দূর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে ৯৮টি সংর্ঘষ, ৫০াট বাস খাদে পড়ে। গাড়ীর চাপায় ১৫৬ জন পথচারী, চাকায় ওড়না পেছিয়ে ০৯ জন এমাসে সড়ক দূর্ঘটনার নিহত হয়।
আগষ্ট মাসে ৩৪৪টি সড়ক দূর্ঘটনায় ৩৯১ জন নিহত ও ৬৯৮ আহত হয়। এইমাসে ৭৪টি বাস, ১০১টি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ২২টি হিউম্যান হলার, ৯৭টি অটোরিক্সা, ১৫টি কার ও মাইক্রোবাস, ১১৮টি মোটরসাইকেল, ১৩টি ব্যাটারি চালিতরিক্সা, ৬২টি নছিমন করিমন সড়ক দূর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে ট্রেনের সাথে যানবাহন সংঘর্ষের ৪ টি ঘটনা, ৩২ টি খাদে পড়ে ও ৬৬টি যানবাহনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া গতির গাড়ী চাপায় ১৩৯ জন পথচারী নিহত হয়।
সেপ্টেম্বর মাসে ৩৯৪টি সড়ক দূর্ঘটনায় ৪৬৬ জন নিহত ও ১৩৭১ আহত হয়। এইমাসে ১১৪টি বাস, ১২৩টি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ৩৩টি হিউম্যান হলার, ৯২টি অটোরিক্সা, ২৭ টি কার ও মাইক্রোবাস, ১৪২টি মোটরসাইকেল, ৬৯টি ব্যাটারি চালিত রিক্সা, ৬৮টি নছিমন করিমন সড়ক দূর্ঘটনার কবলে পড়ে। গাড়ীর চাপায় ১৯৫ জন পথচারী সড়ক দূর্ঘটনার নিহত হয়।
অক্টোবর মাসে ৪২৬টি সড়ক দূর্ঘটনায় ৪৬৫ জন নিহত ও ৭৮৬ আহত হয়। এইমাসে ৯৯টি বাস, ৯২টি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ২৫টি হিউম্যান হলার, ৭৮টি অটোরিক্সা, ০৯ টি কার ও মাইক্রোবাস, ১১৮টি মোটরসাইকেল, ১৮টি ব্যাটারি চালিত রিক্সা, ৬৪টি নছিমন করিমন সড়ক দূর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে ৪৭টি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে খাদে পড়ে, ৮৭টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২টি ট্রেন-যানবাহনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও চাকায় ওড়না পেছিয়ে ১১ জন ও ১৪৩ জন পথচারী সড়ক দূর্ঘটনার নিহত হয়।
নভেম্বর মাসে ৪০৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৩৭ জন নিহত ও ৬৭০ আহত হয়। এইমাসে ৮৯টি বাস, ১৩৫টি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ১৬টি হিউম্যান হলার, ৯০টি অটোরিক্সা, ২৩ টি কার ও মাইক্রোবাস, ১২৭টি মোটরসাইকেল, ২৯টি ব্যাটারি চালিত রিক্সা, ৭৭টি নছিমন করিমন সড়ক দূর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে ৩টি ট্রেন ও যানবাহনের সংঘর্ষ, ১০৫টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৩৪টি খাদে পড়ে ঘটনা ঘঠেছে। এছাড়া চাকায় ওড়না পেছিয়ে ৯ জন ও গাড়ীর নিচে চাপা পড়ে ১৯৭ জন পথচারী নিহত হয়েছে।
ডিসেম্বর মাসে ৪৩০টি সড়ক দূর্ঘটনায় ৫০০ জন নিহত ও ১১৪৮ আহত হয়। এইমাসে ১১৮টি বাস, ১৩৬টি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ৩০টি হিউম্যান হলার, ৯৯টি অটোরিক্সা, ২৫ টি কার ও মাইক্রোবাস, ১১৪টি মোটরসাইকেল, ৩১টি ব্যাটারি চালিত রিক্সা, ৬৯টি নছিমন
করিমন সড়ক দূর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে ১২৩ টি সংঘর্ষ, ৫৫ টি খাদে পড়ে, লেবেল ক্রসিংএ ট্রেনের সাথে যানবাহনের সংঘর্ষের ২টি ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও চাকায় উড়না পেছিয়ে ১৩ জন, গাড়ীর নিচে চাপা পরে ১৮৮ জন পথচারী নিহত হয়েছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে সড়ক দূর্ঘটনার কারণ সমূহ ঃ
১। বেপরোয়া গতিতে গাড়ী চালনা। ২। বিপদজনক অভারটেকিং। ৩। রাস্তা-ঘাটের নির্মান ক্রটি। ৪। ফিটনেস বিহীন যানবাহন
৫। যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা। ৬। চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেড ফোন ব্যবহার।
৭। মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো। ৮। মহাসড়ক ও রেলক্রসিংয়ে ফিডার রোডের যানবাহন উঠে পরা।
৯। রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকায় রাস্তার মাঝ পথে পথচারীদের যাতায়াত।
সড়ক দূর্ঘটনা রোধে সুপারিশ মালা ঃ
১। ট্রাফিক আইন, মোটরযান আইন ও সড়ক ব্যবহার বিধিবিধান সম্পর্কে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য, মসজিদ, মন্দির, গির্জায় জনসাধারণের জন্য ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা। ২। টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্র সমূহে সড়ক দূর্ঘটনা প্রতিরোধে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা। ৩। জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ থেকে হাট-বাজার অপসারণ করা, ফুটপাত বেদখল মুক্ত করা। ৪। রোড সাইন (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন করা। জেব্রাক্রসিং অংকন করা। ৫। চালকদের প্রফেশনাল ট্রেনিং ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা। ৬। যাত্রী বান্ধব সড়ক পরিবহন আইন ও বিধিবিধান প্রনয়ন। ৭। গাড়ীর ফিটনেস ও চালদের লাইসেন্স প্রদানের পদ্ধতি উন্নত বিশ্বের সাথে তালমিলিয়ে আধুনিকায়ন করা। ৮। জাতীয় মহাসড়কে স্বল্পগতি ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেন এর ব্যবস্থা করা। ৯। প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনে সড়ক নিরাপত্তা তহবিল গঠন করে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের চিকিৎসা ও পূণর্বাসনের ব্যবস্থা করা। ১০। সড়ক দূর্ঘটনায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হারিয়ে যারা ছিন্নমূল ও দারিদ্রের কাতারে নেমে যাচ্ছে তাদের ভরণ-পোষণের দায়-দায়িত্ব সরকারকে গ্রহনের জন্য প্রস্তাব করছি।
সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ২০১৬ সালে ৪৩১২ টি সড়ক দূর্ঘটনায় ৬০৫৫ জন নিহত ও ১৫,৯১৪ জন আহত হয়েছিল। বিদায়ী ২০১৭ সালে ৪৯৭৯ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৩৯৭ জন নিহত ও ১৬,১৯৩ জন আহত হয়েছে। এতে দেখা গেছে ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে মোট দুর্ঘটনা ১৫.৫ শতাংশ, নিহত ২২.২ শতাংশ, আহত ১.৮ শতাংশ বেড়েছে।
বিগত ২০১৩ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দূর্ঘটনা প্রতিবেদনসমূহ দেশবাসী ও গণমাধ্যমের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীকে পরিণত হওয়ায় সরকার অত্র সংগঠনের প্রতিবেদনসমূহ গুরুত্বদিয়ে সড়ক নিরাপত্তায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা, রোডশো, বিআরটিএতে রোড সেইফটি ইউনিট গঠন, ২২ টি জাতীয় মহাসড়কে ত্রিহুইলার অটোরিক্সা, নছিমন করিমন উচ্ছেদ, বেশ কয়েকটি জাতীয় মহাসড়কের ২ লাইন/৪ লাইন চালু করা, সড়ক বিভাজক স্থাপন, আন্ডারপাস-ওভারপাস নির্মাণ, ফিটনেস বিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান, চালক প্রশিক্ষণ, ফিটনেস পদ্ধতি ডিজিটাল করাসহ নানামূখি কার্যক্রমের কারনে যানবাহনের সংখ্যানুপাতে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রাখা সক্ষম হয়েছে। বেসরকারী সংগঠন সমূহের ধারাবাহিক কার্যক্রম ও গণমাধ্যমসমূহে বছরব্যাপী সড়ক নিরাপত্তামূলক টকশো, রিপোর্ট ও সড়ক দূর্ঘটনা সংক্রান্ত ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ায় এই সেক্টরে উল্লেখ্য যোগ্য ভুমিকা রাখছে বলে আমরা মনে করি।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে সরকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত তথা সঠিক কর্মসূচি গ্রহনের মাধ্যমে এই দুর্ঘটনা এক বছরের মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য হারে কমিয়ে আনা সম্ভব।