রবিবার ● ১৪ জানুয়ারী ২০১৮
প্রথম পাতা » করোনা আপডেট » শাহাগোলা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি বহুবিধ সমস্যায় জর্জড়িত : স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি নিজেই রুগী
শাহাগোলা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি বহুবিধ সমস্যায় জর্জড়িত : স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি নিজেই রুগী
নওগাঁ প্রতিনিধি :: (১ মাঘ ১৪২৪ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় রাত ১০.২৫মি.) নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার ১নং শাহাগোলা ইউনিয়নের হাতিয়াপাড়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি বহুবিধ সমস্যার ভারে নিজেই এখন রোগীতে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানাযায়, ৯০ এর দশকে শাহাগোলা ইউনিয়নের হাতিয়াপাড়া নামক স্থানে স্থাপিত হয় উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। জনবল কাঠামো অনুযায়ী উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে একজন এমবিবিএস ডাক্তার, একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার, একজন ফার্মাসিস্ট ও একজন এমএলএসএস পদ রয়েছে। শুরুতেই এসব পদে ডাক্তার কর্মচারী থাকলেও গত একযুগ ধরে একটি পদ ছাড়া সকল পদ শূন্য রয়েছে এবং বহিঃবিভাগ স্বাস্থ্য সেবা বন্ধ রয়েছে। ফলে ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক জনগন প্রত্যাশিত স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দিন দিন ইউনিয়ন বাসীর মাঝে শুধুই ক্ষোভ বাড়ছে। উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি দেখলেই বোঝা যায় প্রাচীন স্থাপত্য শৈলী’র এক অর্পূব নির্দশন। কিন্তু অত্যান্ত দুঃখের সাথে বলতে হয়, সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তৃপক্ষের রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং কোয়ার্টারগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় ফেলে রাখার কারণেই বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয়ে নির্মিত ভবনটি আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। এখানে পর্যাপ্ত পরিমান ঔষধ সরবরাহের ব্যবস্থাও নেই। কেন্দ্রটি পরিদর্শনেও যান না উচ্চ পদের কেউ। অভিভাবকশূন্য উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটির এ বেহাল অবস্থার ফলে চিকিৎসা কার্যক্রম চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিদিন এলাকার মানুষ জরুরী চিকিৎসা সেবা নিতে এসে বিমুখ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। দিনে দিনে এমন চিকিৎসাহীনতায় ক্ষুব্ধ-বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। ডাক্তারদের কোয়ার্টার ও তৃতীয় শ্রেনীর কোয়াটার অনেক আগেই পরিত্যাক্ত ঘোষনা করা হয়েছে। বিগত প্রায় ২০ বছর আগে সীমানা প্রাচীর ভেঙে গেলেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। বাউন্ডারি ওয়াল না থাকায় পার্শ্ববর্তী জমির মালিকেরা দিনের পর দিন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জায়গা জবর দখল করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এভাবে চলতে থাকলে ক্রমেই কোন এক দিন বেহাত হয়ে যাবে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানের জায়গা।
এ বিষয়ে শাহাগোলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম বাবু সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম এর প্রতিনিধিকে জানান, বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খুবই নাজুক। উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে বহিঃবিভাগ স্বাস্থ্য সেবা চালু না থাকায় ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক জনগণ তাদের প্রত্যাশিত স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের জনসেবা মুলক প্রতিষ্ঠানটির দিকে একটু সু নজর দিয়ে পুনরায় বহিঃবিভাগ স্বাস্থ্য সেবা চালু করবেন এমনটিই প্রত্যাশা করছি।
এ ব্যাপারে কর্মরত উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রেটির ফ্যামিলি প্লানিং পরিদর্শিকা মোছাঃ ডলি আক্তার সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম এর প্রতিনিধিকে জানান, সপ্তাহে ছয় দিন ডিউটি করলেই কি ঔষধ পরিমান মতো বরদ্দো না থাকায় রোগীরা তাদের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এবং একা আমার পক্ষে এত রোগীর চাপ সামলানো সম্ভব নয়। বার বার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি।
এ বিষয়ে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির ইনচার্জ ফার্মাসিষ্ট ডা. মো. রুহুল ইসলাম (রাজ) এর সাথে কথা বলে জানা যায়, এখানে প্রতিদিন ২৪০ থেকে ২৬০ জন রুগী আসে (ঔষধ থাকলে), আর ১০০ থেকে ১২০ জন রুগী আসে (ঔষধ না থাকলে)। উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি মেইন রস্তার পাশে হওয়ার কারনে এক্সিডেন্ট এর রুগী প্রায়ই আসতে থাকে। অথচ রুগীর তুলনায় সরবরাহকৃত ঔষধ পত্রাদির পরিমান খুবই নগন্য।
এ ব্যাপারে আত্রাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. মুশেদ মোহাম্মদ মুনিরুজ্জামান সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম এর প্রতিনিধিকে জানান, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলো নেদারল্যান্ডের একটি প্রজেক্ট ছিল। শুধুমাত্র শাহাগোলা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র নয়, আহসানগঞ্জ, ভোঁপাড়া ও হাটকালুপাড়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলির সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে প্রজেক্টটি না থাকায় বহিঃবিভাগ বন্ধ রয়েছে। পুনরায় উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলির বহিঃবিভাগ স্বাস্থ্য সেবা চালু করার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানায়েছি। আশাকরি কেন্দ্রগুলো পুনরায় আমরা চালু করতে পারবো।
এদিকে অতিদ্রুত ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠান গুলো মেরামত করে বহিঃবিভাগ স্বাস্থ্য সেবা চালু করে এলাকাবাসীর সেবা গ্রহনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করবেন কর্তৃপক্ষ, এমনটিই মনে করেন এলাকার সচেতন মহল ।