সোমবার ● ১৫ জানুয়ারী ২০১৮
প্রথম পাতা » সকল বিভাগ » স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকটে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত রোগীরা
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকটে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত রোগীরা
সিলেট প্রতিনিধি :: (২ মাঘ ১৪২৪ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.৫৬মি.) চিকিৎসক সংকটে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ফলে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলাবাসী। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে শহরমুখী হচ্ছেন রোগীরা। এতে সময়মত চিকিৎসা না পাওয়ায় ভোগান্তি বাড়ছে রোগীদের।
২০১৩ সালে গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও এ পর্যন্ত সে অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এদিকে সার্জারি বিশেষজ্ঞ না থাকায় এখানে অস্ত্রোপচারও বন্ধ রয়েছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যানবিদ মো. সুহেদ আহমদ জানান, এখানে ৫০ শয্যার প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে তবে ৫০ শয্যার জনবলকাঠামো অনুযায়ী প্রথম শ্রেণির ২১ পদের বিপরীতে জুনিয়র কনসালট্যান্টের ছয়টি পদই শূন্য রয়েছে। এগুলো হচ্ছে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও), মেডিসিন, সার্জারি, অ্যানেসথেটিস্ট, চক্ষু এবং চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞের পদ। জ্যেষ্ঠ স্টাফ্র নার্সের ১৫টি পদের মধ্যে ১১টি এবং চারটি মিডওয়াইফারি পদের বিপরীতে একটি পদ শূন্য রয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির ৯৬টি পদের মধ্যে ২৪টি পদই শূন্য। চতুর্থ শ্রেণির ২৭টি পদের বিপরীতে শূন্য পদ রয়েছে ১৩টি। সব মিলিয়ে ১৬৪টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে ৫৫টি পদই শূন্য রয়েছে বলে জানা যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বারান্দায় পানের পিক, পরিত্যক্ত প্লাস্টিক ও ছেঁড়া কাগজপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ড অপরিচ্ছন্ন। তাদের ব্যবহৃত প্রায় ৩০ টি বেডই রয়েছে জরাজীর্ণ অবস্থায়।
শৌচাগারগুলোর অবস্থা শোচনীয় অর্থাৎ ব্যবহার অনুপোযোগি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না রাখতে পারার বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য এমএলএসএসের চারটি ও ঝাড়ুদারের পাঁচটি করে পদের বিপরীতে তিনটি করে পদ শূন্য রয়েছে।
জানা যায়, এক্স-রে মেশিনটি সপ্তাহে ৩দিন চালু থাকলেও তা সময়মত চালানো হয়না। সোনোলজিস্ট না থাকায় আল্ট্রাসনোগ্রাফী মেশিনটিও বন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে।
আন্তঃবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগীর অভিভাবক বলেন, শয্যাসংকটের কারণে অনেক সময় রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি নেওয়া হয় না। অনেক কষ্টে রোগী ভর্তি করতে হয়। আর ঔষধ সংকট তো রয়েছেই। নার্সরা এক বোতল নাপা সিরাপ দিয়ে পুরো ওয়ার্ডের রোগীদের খাওয়ান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত কয়েকজন চিকিৎসক জানান, সার্জারি ও অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ না থাকায় সব ধরনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হচ্ছে না। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরও কয়েকজন চিকিৎসক বলেন, আর্থিক অনুমোদন না পাওয়ায় এখানে এখনো ৩১ শয্যায় রোগী ভর্তি করা হয় কারণ ৫০ শয্যার সুযোগ-সুবিধার অনুযায়ী এখানে পর্যাপ্ত খাবার ও ওষুধ সরবরাহ করা হয় না বলে অভিযোগ তাদের।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তউহীদ আহমদ জানান, হাসপাতালের লোকবল সংকটের কারণে আশানুরূপ সেবা প্রদান করতে পারছিনা। তীব্র লোকবলসংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও একাধিকার জানানো হয়েছে। কিন্তু উপরিমহলের কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, ২০০৬ সালের ১৭ জুলাই এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান, বর্তমান বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী উন্নয়ন কার্যক্রমের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন পরবর্তীতে সরকার পরিবর্তন হলে উন্নয়ন কার্যক্রম থমকে যায়।
তখন সরকারী এ হাসপাতালের উন্নয়ন কার্যক্রম অনিশ্চিত হয়ে পড়লে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উন্নয়ন কার্যক্রমে নজর দেন বর্তমান সরকারের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি। চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধি, বিভিন্ন রোগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের নিয়োগদানের বিষয়ে তিনি গুরুত্বারোপ করলে সরকারী এ হাসপাতালটি অনেকটাই নতুনত্ব লাভ করে।
শিক্ষামন্ত্রীর প্রচেষ্ঠায় ৩১ শয্যা থেকে হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় পরিণত হলে ২০১৩ সালের ১৩ অক্টোবর তিনি নব-নির্মিত ভবনের উদ্বোধন করেন।
এদিকে, শিক্ষামন্ত্রীর প্রচেষ্ঠায় ৩১ শয্যা থেকে হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও চিকিৎসক ও স্টাফ সংকটের কারনে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত উপজেলাবাসী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পূর্ণাঙ্গ সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।