সোমবার ● ১৫ জানুয়ারী ২০১৮
প্রথম পাতা » জনদুর্ভোগ » ১টি সেতুর অভাবে ২০টি গ্রামের মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার
১টি সেতুর অভাবে ২০টি গ্রামের মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার
ময়মনসিংহ অফিস :: (২ মাঘ ১৪২৪ বাঙলা : বাংলাদেশ সময় রাত ৮.৫৭মি.) ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার ঘোষগাঁও ইউনিয়নের নেতাই নদীর উপর দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একটি পাকা সেতুর অভাবে ২০ গ্রামের মানুষকে বাঁশের সাঁকো ও নৌকা দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এলাকার ভূক্তভোগী কৃষকরা তাদের কৃষিপণ্য পরিবহন করতে না পারায় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা বাঁশের সাঁকো পার হতে গিয়ে অহরহ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
স্থানীয় এলাকাবাসি জানান,ভারতের মেঘালয় থেকে আসা উপজেলার ঘোষগাঁও বাজারের পূর্ব-উত্তর দিক দিয়ে প্রবাহিত এই খরস্রোতা নদীর নাম ‘নেতাই নদী’। এই নদীর উপর প্রায় ৪ শ’ ফুট লম্বা ও ৬শ’ ফুট প্রস্থ্য বাঁশের বিশাল সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ২০ গ্রামের হাজার হাজার সাধারণ মানুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী চলাচল করে।
হালুয়াঘাট ও ফুলপুরসহ পাশের তারাকান্দা ও পূর্বধলা উপজেলার মানুষ এ নদী পার হয়ে ময়মনসিংহ সদর ও পাশের জেলা নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলা সদরে যেতে হয়। ব্রিজটি নির্মাণ করা হলে দুর্গাপুর যাওয়ার দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার কমবে।
প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করলেও বর্ষা মৌসুমে এলাকার লোকজন, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নৌকা দিয়ে চলাচল করতে হয়। বর্ষার সময় খরস্রোতা নেতাই নদী নৌকা দিয়ে পার হতে গিয়ে অনেকেই নৌকা ডুবে দূর্ঘটনার কবলে পড়েন। ঘোষগাঁও ও দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের কালিকাবাড়ী, কড়ইগরা, রামসিংহপুর, কাশিপুর, বাকপাড়া, ঘিলাগড়া, ছোট মুন্সীপাড়া, রানীপুর, বল্লভপুর, নয়াপাড়া, ঘোষগাঁও ভালুকা পাড়াসহ ২০টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষকে ও শত শত স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীকে এই ঘাট পাড়ি দিয়ে চলাচল করতে হয়।
দক্ষিণ মাইজপাড়া গ্রামের কৃষক রহমত আলী সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম এর প্রতিনিধিকে জানান, সীমান্তবর্তী দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নসহ পাশের এলাকাগুলোতে ব্যাপকভাবে ধান ও সবজিসহ কৃষিপণ্য উৎপাদন হয়ে থাকে। ব্রিজ না থাকায় এসব কৃষিপণ্য ধোবাউড়াসহ ময়মনসিংহে নেওয়া সম্ভব হয় না। রিকশা ও ভ্যানে করে নিতে হয়। এতে পরিবহন খরচ বেশি পড়ে যায়।
ভ্যানচালক মতি মিয়া জানান, ভ্যান ও রিকশা নিয়ে নদীর ওপর দিয়ে বাঁশের সাঁকো পারাপারে অনেক সময় মালামালসহ ভ্যান ও রিকশা নিচে পড়ে যায়। তখন দুর্ভোগের আর সীমা থাকে না।
দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ দুলাল মিয়া সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম এর প্রতিনিধিকে জানান, ব্রিজটি নির্মাণ হলে দুর্গাপুর হয়ে সিলেটে যাওয়ার রাস্তাও কমে আসবে। এমনকি ব্রিজ না থাকায় রোগীদের সহজে ময়নমসিংহ মেডিক্যালে নেওয়াও সম্ভব হয় না।
দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলুল হক সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম এর প্রতিনিধিকে বলেন, নেতাই নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের জন্য তিনি ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর বর্তমান এমপি জুয়েল আরেংয়ের কাছে গিয়েছিলেন। এর আগে তার বাবা অ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিনের কাছেও বারবার গিয়েছেন। তারা ব্রিজ নির্মাণে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও দীর্ঘ দিনেও এই ব্রিজটি নির্মাণ হয়নি।
ধোবাউড়া এলজিইডি বিভাগের উপজেলা প্রকৌশলী শাহনূর ফেরদৌস সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম এর প্রতিনিধিকে জানান, এই গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজটি নির্মাণে প্রস্তাব পাঠানোর পর অনুমোদন হয়েছে। তিনি জানান, একনেকের সভায় অনুমোদন হয়েছে, খুব দ্রুত একটি যৌথ টিম এসে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিলেই টেন্ডার হবে।
ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসনের এমপি জুয়েল আরেং এ ব্যাপারে সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম এর প্রতিনিধিকে বলেন, ‘নেতাই নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের জন্য তিনি একাধিকবার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীর সাথে দেখা করেছেন। এটি বর্তমানে এলজিইডি দফতরের ডিজাইন শাখায় রয়েছে।’
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেন সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম এর প্রতিনিধিকে বলেন, ‘কালিকাবাড়ি ঘাটে নেতাই নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণে এলজিইডি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর প্রকল্প সম্ভাব্যতা যাচাই টিম গঠন করা হয়েছে। খুব শিগগিরই এই টিম পরিদর্শন করবে এবং সম্ভাব্যতা বিষয়ে রিপোর্ট দেওয়ার পরই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।