রবিবার ● ২১ জানুয়ারী ২০১৮
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ম্যাডামের আমলে ধর্ষিত পূর্ণিমা জননেত্রীর আমলে পুনর্বাসিত
ম্যাডামের আমলে ধর্ষিত পূর্ণিমা জননেত্রীর আমলে পুনর্বাসিত
শামসুল আলম স্বপন :: (৮ মাঘ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪.০৭মি.) ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনে বিএনপি-জামাত জোটের বিজয়ের পর ৮ অক্টোবর গভীর রাতে বিএনপি-জামাত জোটের ক্যাডাররা জোরপূর্বক বাড়িতে ঢুকে পরিবারের সদস্যদের অত্যাচার-নির্যাতনের এক পর্যায়ে সিরাজগঞ্জের অনিল শীলের ছোট মেয়ে ১৩ বছরের পূর্ণিমা শীলকে তুলে নিয়ে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে পালাক্রমে গণধর্ষণ করে । দরীদ্র অনিল শীলের অপরাধ তার পরিবার বিএনপি- জামায়াত জোটের পক্ষে নির্বাচনে কাজ করেনি। আওয়ামীলীগকে ভোট দেয়ায় ক্ষুদ্ধরা তাদের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করে পূর্ণিমা শীলকে গণ-ধর্ষণ করে। কিশোরী পূর্ণিমা শীলের গণধর্ষণের খবরে তোলপাড় হয় বাংলাদেশসহ বিশ্ব মিডিয়ায়। মানবাধিকার সংস্থাসহ দেশবাসী ক্ষুদ্ধ হয় সরকারের নীরব ভুমিকা দেখে। দশম শ্রেণীর ছাত্রী পূর্ণিমা শীল গণধর্ষণের শিকার হলেও সে সময় ক্ষতাসীনদের টনক নড়েনি। বরং ঘটনাটি মিডিয়ার বাড়াবাড়ি বলেও অনেকেই উক্তি করেছিল সে সময়।
কি অপরাধ ছিল পবিত্র চাঁদের মত ফুটফুটে মেয়ে পূর্ণিমার। বাবা আওয়ামীলীগের সমর্থক এটায় কি ছিল তার অপরাধ? একজন সংখ্যালঘুর কন্যাকে দল বেঁধে ধর্ষণ করলেও সে দিন ক্ষমতাসীনদের পাষাণ হৃদয় টলেনি। থানায় মামলা দিতে গেলেও তালবাহান করা হয়েছে। ম্যাডাম খালেদা জিয়া তখন প্রধানমন্ত্রী । বিভিন্ন মিডিয়ায় তখন শীর্ষ শিরোনামে ছিল পূর্ণিমা গণ-ধর্ষণের খবর । তাতে মাথা ব্যাথা ছিল না সরকারের । গণ-ধর্ষণের শিকার পূর্ণিমার পরিবারকে অবরুদ্ধসহ হেনস্থা করা হলেও কোন আইনি প্রতিকার পায়নি নির্যাতিত পরিবার। চাপে পড়ে ধর্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা নিলেও নির্যাতিতদের পক্ষে কোন কাজ করেনি সে সময়কার পুলিশ।
ধর্ষক ও তাদের গডফাদাররা মামলা তুলে নিতে চাপ দিয়েছে বারংবার । বিধাতার কাছে প্রার্থনা আর নীরবে চোখের জল ফেলা ছাড়া কোন উপায় ছিল না ওই অসহায় পরিবারের । একদিকে মান-সম্মান হানি অন্য দিকে জীবনহানির শঙ্কা নিয়ে অনিল শীলের পরিবার বিচারের আশায় ঘুরেছে পথে পথে। কোন পথ খুজে পায়নি তারা সে দিন। কেউ দেখায় নি এতটুকু সহানুভুতি । তারপরও হালছাড়েনি পরিবারটি । বিশেষ করে মনবল ভাঙ্গেনি ধর্ষিতা পূর্ণিমা শীলের । বিএনপি-জামায়াতের পৈশাচিকতার শিকার পূর্ণিমা শীলের জীবনের উপর দিয়ে কাল বৈশাখীর ঝড় বয়ে গেলেও পূর্ণিমা ছিল অটল-অবিচল। ছোট্ট মেয়েটি মিডিয়াতে সে দিন বলেছিলেন “আমি তো কোন অপরাধ করেনি। অপরাধ এবং অন্যায় করেছে ধর্ষকরা । লজ্জিত হওয়া উচিৎ ওদের এবং ওদের জন্মদাতা পিতা-মাতার। আমি তো নির্দোষ নিরাপরাধ।” আমি কেন মাথা নীচু করে চলবো ?”
পূর্ণিমা শীল ধর্ষকদের চ্যালেঞ্জ করে চালিয়ে যান লেখাপড়া । জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠন করলে পূর্ণিমা ধর্ষণ মামলাটি গতি পায়। ২০১১ সালের ৪ মে এই ধর্ষণ মামলায় ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেন আদালত। ধর্ষণকারীরা সকলেই চারদলীয় জোটের সমর্থক ।
প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আর্শিবাদে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে টেলিকমিউনিকেশন এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এ অনার্স শেষ করেন পূর্ণিমা । প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম পূর্ণিমাকে ‘পার্সোনাল অফিসার’ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন সম্প্রতি। পূর্ণিমার তথ্যমন্ত্রণালয়ে চাকরি হওয়ার খবর পড়ে আমি নিজেও আনন্দাশ্রু ধরে রাখতে পারেনি। চরম কৃতজ্ঞতায় মাথানত হয়ে এলো “মাদার অব হিউম্যানিটি” জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তথ্যপ্রতিমন্ত্রীর প্রতি।
ম্যাডাম খালেদার জিয়ার শাসনামলে বিএনপি-জামাত ক্যাডারদের চরম পৈচাশিক নির্যাতনের শিকার পূর্ণিমা আজ পূর্ণবাসিত হলো জননেত্রীর শাসনামলে এর থেকে ভালো খবর আর কি হতে পারে ? নির্যাতিত পূর্ণিমারা ম্যাডাম খালেদার জিয়ার আমলে ডুবে ছিল চরম অন্ধকারে আর জননেত্রী তাদেরকে নিয়ে আসছেন আলোর জগতে। আমার কেন জানি মনে হয় পূর্ণিমাদের নীরব চোখের জল বিএনপি-জামাতের আজকের এই করুণ পরিনতি । জননেত্রীর প্রতি আবারও কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানিয়ে বলবো আপনি শুধু মানবতার মা নন, আপনি সমাজের অসহায় পূর্ণিমাসহ ২০ কোটি মানুষের আস্থার স্থল।
আর এ জন্যই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের রহমত থেকে বঞ্চিত হননি কোন দিন। তাই আজ শত্রুরাও আপনাকে স্মরণ করে পরম শ্রদ্ধাভরে।
লেখক : সম্পাদক,বিজয় নিউজ ২৪ ডটকম