বুধবার ● ২৪ জানুয়ারী ২০১৮
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » মহালছড়িতে ইটভাটা গুলো মানছেনা আইন : উজার হচ্ছে বন এবং নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ
মহালছড়িতে ইটভাটা গুলো মানছেনা আইন : উজার হচ্ছে বন এবং নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ
মহালছড়ি প্রতিনিধি :: (১১ মাঘ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৮.৪৮মি.) খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে গড়ে ওঠা ইটভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে বনের গাছ। নিয়মনীতি উপেক্ষা করে বন, ফসলি জমি ও আবাসিক এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে মহালছড়িতে ২টি ইটভাটা। ভাটার অল্প দূরেই রয়েছে হাটবাজার, ফলের বাগান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সব ইটভাটাতেই কয়লার পরিবর্তে রিজার্ভ ফরেস্ট বেষ্টনীসহ বিভিন্ন বনের গাছ উজার করে কেটে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আশঙ্কার বিষয় হলো, ইটভাটার ধোঁয়া ও ধুলায় সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ শ্বাসকষ্টসহ নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ছে।
পরিবেশ আইন অনুযায়ী, জনবসতি ও পাহাড়ি এলাকার আশপাশে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু মহালছড়িতে ইটভাটাগুলো এই আইন অমান্য করেছে। এ ছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী, পরিবেশসম্মতভাবে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইটভাটা তৈরি করতে হবে। এই নির্দেশনাও অমান্য করছেন ইটভাটা মালিকরা। প্রশাসনের নিরব ভুমিকায় স্থানীয়রা হতাশ।
২০১৩ সালের ৫৯ নম্বর আইনে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন-সংক্রান্ত কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ-সংক্রান্ত আইনের ৪ নম্বর ধারায় লাইসেন্স ব্যতীত ইট তৈরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, ইটভাটা যে জেলায় অবস্থিত সেই জেলার জেলা প্রশাসকের নিকট হইতে লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতিরেকে, কোনো ব্যক্তি ইটভাটায় ইট প্রস্তুত করিতে পারিবেন না।’
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ইটভাটা স্থাপন করা হলেও নির্বিকার প্রশাসন। যদিও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, কাঠ পোড়ানোর ব্যাপারে ভাটার মালিকদের কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হবে না। কিন্তু বাস্তবতা তার উল্টো।
সরজমিনের দেখা যায়, আইনের ধারে-কাছেও নেই ইটভাটার মালিকরা। ভাটার চারপাশে রয়েছে জ্বালানী হিসেবে প্রচুর কাঠের স্তুপ। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়া ইটভাটায় সনাতন পদ্ধতিতে চিমনি তৈরি করে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বনের গাছ। তিন বছর ধরে এ ইটভাটায় বনের গাছ পোড়ানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। সব ইটভাটায় আধুনিক চুল্লি ব্যবহার না করে সনাতন চুল্লি ব্যবহার করা হচ্ছে। যা পরিবেশের জন্য মারত্মক ক্ষতিকর।
সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, প্রতি বছর ইটভাটায় ইট বানানোর কাজে মাটি ব্যবহারের কারণে আবাদি জমির পরিমাণ দিন দিন কমছে। ভাটার মালিকরা কৃষকদের জমি ও মাটি বিক্রয় করার জন্য নানাভাবে বাধ্য করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ইটভাটায় বনের গাছ পোড়ানোর বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মহালছড়ি উপজেলার বন কর্মকর্তা এ এম এম জাকির হোসেন সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম এর প্রতিনিধিকে বলেন, জনবল সংকটের কারণে বনাঞ্চল রক্ষণাবেক্ষণে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। এ সুযোগে বনের গাছ চুরি করে কেটে নিচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।
অনুমোদনবিহীন ইটভাটাগুলোতে বেপরোয়াভাবে কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে মহালছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার তামান্না নাসরিন উর্মি সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম এর প্রতিনিধিকে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী কিছুতো ছাড় দিতেই হয়। তবে, বেপরোয়াভাবে কাঠ পোড়ানোর বিষয়টি নিয়ে ভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে আমি আইনি ব্যবস্থা নেব।