শনিবার ● ৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৮
প্রথম পাতা » রাজশাহী বিভাগ » সাংবাদিক শিমুল হত্যার বিচার নিয়ে সংশয়ে পরিবার
সাংবাদিক শিমুল হত্যার বিচার নিয়ে সংশয়ে পরিবার
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি :: (২১ মাঘ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১২.৩১মি.) সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যার সুষ্ঠ বিচার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে স্বজন-সাংবাদিক-রাজনৈতিক মহল। তারা বলছেন, মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহের জন্য একটি মহল ষড়যন্ত্র করছেন। সাক্ষীরা সঠিক সাক্ষ্য দিতে না পারে এজন্য শিমুল হত্যার প্রধান আসামী মেয়রের স্ত্রী স্বাক্ষীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানি করছে। বর্তমানে সাক্ষীরা মেয়রের স্ত্রীর মামলায় জেলহাজতে রয়েছে। অন্যদিকে, মামলার ২৯ আসামী জামিনে মুক্ত হয়ে মামলাটি তুলে নিতে শিমুলের পরিবারকে বিভিন্ন হুমকি-প্রদান করা হচ্ছে। এ অবস্থায় শিমুল হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে স্থানান্তর ও স্বাক্ষীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানিয়েছেন স্বজন, সাংবাদিকমহল ও আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা।
সাংবাদিক শিমুলের মামাতো ভাই আজাদ মন্ডল জানান, মামলা দায়েরের পর থেকেই চাঞ্চল্যকর সাংবাদিক শিমুল হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যালে স্থানান্তরের জন্য আমরা দাবী জানিয়ে আসছিলাম। উর্দ্ধতন একটি মহলের চাপে দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যালে স্থানান্তর করা হচ্ছে না। উল্টো মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহের জন্য মহলটি ওঠেপড়ে লেগেছে। হত্যার প্রায় আড়াই মাস পর শিমুল হত্যাকারীর প্রধান আসামী মেয়র মিরুর স্ত্রী লুৎফুন নেছা পিয়ারী বাদি শিমুল হত্যা মামলার ৫জন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী যেন স্বাক্ষ্য দিতে না পারে সেজন্য তাদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। বর্তমানে সাক্ষীরা জেল হাজতে রয়েছে। তিনি বলেন, শিমুল হত্যা মামলার ৩৮ জন আসামীর মধ্যে ৮ জন পলাতক রয়েছে। বাকী ৩০ জনের মধ্যে মেয়র বাদে সবাই জামিনে মুক্ত রয়েছে। ২৯ জনই বিভিন্নভাবে মামলা তুলে নিতে তাদেরকে নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। যে কারণে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি পাশাপাশি ন্যায় বিচার নিয়েও শঙ্কায় রয়েছি আমরা।
সাংবাদিক শিমুলের মামা আব্দুল মজিদ মন্ডল ও লতিফ মন্ডল জানান, প্রকাশ্যে দিবালোকে গুলি করে ভাগ্নে শিমুলকে হত্যা করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজও রয়েছে। তারপরেও মামলার অগ্রগতি হচ্ছে না। উল্টো মামলা ভিন্নখাতে নেয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। হত্যার সময় বেশ কয়েকটি অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল। পুলিশ সেগুলোও উদ্ধার করতে পারেনি। এছাড়াও শিমুলের ক্যামেরা ও মোবাইল ফোনও উদ্ধার করতে পারেনি। এ অবস্থায় ন্যায় বিচার নিয়ে তারা শঙ্কায় রয়েছে। অবিলম্বে মামলাটি দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তরের আবেদন এবং পরিবারের নিরাপত্তা দাবী করেন তারা।
যুবলীগ নেতা আশিকুল হক দিনার জানান, শাহজাদপুরবাসী শিমল হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচারের দাবী জানিয়ে আসছিল। কিন্তু এখনো তা পুরণ হয়নি। উল্টো মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহের জন্য ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ মামলার স্বাক্ষীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে হয়রানি করা হচ্ছে।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আজাদ রহমান জানান, মামলাটি নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। বিচারকার্য দ্রুত না করা হলে বাদীর সুষ্ঠ বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। খুনীরা বাঁচতে নানা ষড়যন্ত্র করছে। প্রকৃত খুনীরা যাতে দ্রুত শাস্তি পায় এজন্য মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
শাহজাদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুজ্জামান জানান, আমাদের দাবী একটাই সাংবাদিক শিমুলের সুষ্ঠ বিচার। কিন্তু মামলাটি নিয়ে নানা চক্রান্ত চলছে। মিরুর স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় পুলিশ সকল আসামীদের অব্যাহতি দিয়ে ফাইনাল রিপোর্ট দিয়েছিল। কিন্তু আদালতে তার স্ত্রীর আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করেন। তদন্তে শিমুল হত্যার আসামীদের সাক্ষ্য নেন আর সে সাক্ষ্যর ভিত্তিতে আদালত ১৯জন বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন। যার মধ্যে শিমুল হত্যা মামলার ৫জন সাক্ষী রয়েছে। এ অবস্থায় সাক্ষীরা স্বাক্ষ্য দিতে ভয় পাবে এটাই স্বাভাবিক। তিনি মামলাটি দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তর ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানান।
শাহজাদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি বিমল কুমার জানান, মামলাটি ভিন্নখাতে নিতে আড়াইমাস পর মিরুর স্ত্রী কাউন্টার মামলা করেছে। সাক্ষীদের হয়রানি করতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। তিনি অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও সাংবাদিক শিমুল হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের দাবী জানান।
সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি-জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস সাংবাদিক শিমুলকে নৃশংসভাবে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবী করে বলেন, সাংবাদিক শিমুল হত্যার সুষ্ঠ বিচার না হলে সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হবে। কোনক্রমেই সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করতে দেয়া হবে। মামলা নিয়ে যারা চক্রান্ত করবে তাদেরকে কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। ন্যায় বিচারের স্বার্থে সাংবাদিক সমাজের পাশে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে বলে তিনি জানান।
প্রথম মৃত্যু বার্ষিকীতে কর্মসুচীঃ সাংবাদিক শিমুলের প্রথম মৃত্যু বার্ষিকীতে শাহজাদপুর প্রেসক্লাবের উদ্যোগে স্বরণ সভা, কালোব্যাজ ধারন, শোক র্যালী ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারী শাহজাদপুরে দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে শাহজাদপুর পৌর মেয়ের হালিমুল হক মিরুর গুলিতে সাংবাদিক শিমুল আহত হয়। পরদিন ঢাকায় নেয়ার পথে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় তার স্ত্রী বাদী হয়ে শাহজাদপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে মামলাটি শাহজাদপুর আমলী আদালত থেকে বিচারের জেলা জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়েছে।