শনিবার ● ৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৮
প্রথম পাতা » ঝালকাঠি » আওয়ামী লীগ একক প্রার্থী বিএনপি‘র একাধীক
আওয়ামী লীগ একক প্রার্থী বিএনপি‘র একাধীক
গাজী গিয়াস উদ্দিন বশির,ঝালকাঠি প্রতিনিধি :: (২১ মাঘ ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪.০০মি.) ঝালকাঠিতে আমির হোসেন আমু নিশ্চিত থাকায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঝালকাঠি-২ (ঝালকাঠি-নলছিটি) আসনে কোনো মনোনয়নযুদ্ধ বা দ্বিধাবিভক্তি নেই আওয়ামী লীগে। শিল্পমন্ত্রী আলহাজ্ব আমির হোসেন আমু এ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে একক প্রার্থী। তবে বিএনপির চিত্র অন্য রকমের। একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে এ দলে।
বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার সাধারণ ভোটারের দৃষ্টিতে, আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু এই নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। প্রতি সপ্তাহে এলাকায় এসে নানা কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। দলের কয়েকজন নেতাকর্মীর বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্য বিরূপ প্রতিক্রিয়া থাকলেও সামগ্রিকভাবে নৌকার গ্রহণযোগ্যতাও কিছুটা বেড়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যড.খান সাইফুল্লাহ পনির বলেন, ঝালকাঠি‘র এ আসনে দলিয় ভাবে আমির হোসেন আমুর বিকল্প কোনো প্রার্থী নেই। ১৯৯৬ সালে এমপি-মন্ত্রী না হয়েও এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছিলেন তিনি। পরে এমপি-মন্ত্রী হয়ে তিনি ঝালকাঠি জেলাকে আধুনিক মডেল জেলা হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন। তার উদ্যোগে জেলা যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। অনেক সড়ক নির্মিত হয়েছে। আগামী নির্বাচনেও আমির হোসেন আমু নির্বাচিত হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন পনির।
এ দিকে সাংগঠনিকভাবে দূর্বল থাকলেও আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেকটা মাঠ পর্যায় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। ছাত্রদল ও যুবদলের কমিটি নিয়ে দ্বন্ধ থাকলেও বিএনপিতে কোনো বিভক্তি নেই। দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন সাবেক এমপি ইলেন ভুট্টো, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু, নির্বাহী কমিটির সদস্য জেবা আহম্মেদ খান, জেলার দুই সহ-সভাপতি মিয়া আহমেদ কিবরিয়া ও রফিক হাওলাদার, জাতীয়তাবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থার কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব নুরুল ইসলাম খান বাবুল ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আলহাজ্ব এম শহিদুল ইসলাম সিদকদার মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।
সাবেক এমপি ইলেন ভুট্টো বলেন, তার বিরুদ্ধে একটি চক্র এর আগেও অপপ্রচার চালিয়ে ফায়দা লুটতে চেয়েছে। তারা বিএনপির নয়, সরকারের শুভাকাঙ্ক্ষী। তিনি জানান, এলাকায় গেলে তাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হতো। তবে তিনি গত ঈদুল আজহার সময় এলাকায় গিয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। তার প্রত্যাশা, ২০০১ সালের মতো দলীয় বিবেচনায় আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেলে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হবেন।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নুপুর বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের পর সাবেক এমপি ইলেন ভুট্টোসহ মনোনয়নপ্রত্যাশী সবাই এলাকা থেকে চলে যান। কেবল তিনিই হামলা-মামলার পরও নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে ছিলেন। সবার খোঁজখবর রেখেছেন। ইলেন ভুট্টো বিএনপির এমপি হয়েও ২০০৮ সালে বিএনপির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দলের প্রয়াত মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া সমর্থিত বিদ্রোহী গ্রুপের (সংস্কারপন্থি) সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। তাই তার দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার অধিকার নেই।
বরিশাল বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মাহবুবুল হক নান্নু বলেন, দলের কাছে কর্মীদের প্রত্যাশা থাকে। সেই প্রত্যাশা থেকেই একজন যোগ্য, সৎ ও পরীক্ষিত নেতা হিসেবে তিনি আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আলহাজ্ব এম শহিদুল ইসলাম সিদকদার বলেন, এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ও সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। এলাকায় যেতে না পারলেও তিনি নেতাকর্মীদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে আসছেন। দলীয় প্রগ্রামের আর্থিক ও সার্বিক সহযোগীতা করে যাচ্ছেন। তাকেও কেন্দ্র থেকে আস্বস্ত করেছেন বলে তিনি জানান।
জেবা আহম্মেদ খান ইদানীং এলাকায় কম এলেও দলীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন বলে কয়েকজন নেতা জানান। মনোনয়নপ্রত্যাশী এই নেত্রী বলেন, এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ও সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। এলাকায় যেতে না পারলেও তিনি নেতাকর্মীদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে আসছেন।
মিয়া আহমেদ কিবরিয়াও এলাকায় সরব রয়েছেন। তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের পর থেকে তিনি নেতাকর্মীদের সঙ্গে রয়েছেন। হামলা-মামলায় তাদের সহায়তা দিয়েছেন। নিজের অর্থনৈতিক স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে দলীয় স্বার্থে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় থেকেছেন। তার বিশ্বাস, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে তিনি মনোনয়ন পাবেন। দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এলাকায় না এসে ঢাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকেন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপিতে কোনো কোন্দল নেই।
রফিক হাওলাদার ইতিমধ্যে মোটরসাইকেলে মহড়া দিয়ে নিজের অবস্থান ঘোষণা করেছেন। তিনি জানান, দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর তার রাজনীতির গুরু। সম্প্রতি তাকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় এই নেতা।
নুরুল ইসলাম বাবুল জানান, তিনি হঠাৎ করে দলে আসেননি। নবম সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১০ আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন। এলাকার দলীয় কর্মকান্ডে নিয়মিত থাকতে না পারলেও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছেন। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত পরিচিত বলেই তিনি আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চাইবেন। জেলা কমিটিতে তাকে না রাখা হলেও তিনি কয়েক বছর ধরেই এলাকায় গণসংযোগ করছেন।