বুধবার ● ৭ মার্চ ২০১৮
প্রথম পাতা » জনদুর্ভোগ » এক ব্রিজের অভাবে সাত গ্রামের দুর্ভোগ
এক ব্রিজের অভাবে সাত গ্রামের দুর্ভোগ
নওগাঁ প্রতিনিধি:: (২৩ ফাল্গুন ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪.৫০মি.)নওগাঁর মান্দার বালুবাজার উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন শিবনদীর ওপর এলাকাবাসির ২০লাখ টাকা অনুদানে নির্মিত ব্রিজের নির্মাণ কাজ অবশেষে নানা প্রতিকুলতায় ও নগদ অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। দুই জালসায় লক্ষাধিক টাকা, ২৫০ বস্তা সিমেন্ট ও ৯০ মণ ধান আদায় হয়। আগের উত্তোলনকৃত এক লাখ টাকা ব্যবসায়িক কাজের লাগিয়ে মুনাফা আসে ৮০ হাজার টাকা।
এলাকাবাসির অনুদানের এ সামান্য পূঁজিকে সম্বল করেই অর্ধেক পর্যন্ত নির্মাণ কাজ হলেও অবশিষ্ট কাজ ঝুলে আছে বছরের পর বছর ধরে। বর্তমান বস্ত্র ও পাট মন্ত্রীসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন সময়ে নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন পর্যন্ত মিলেনি সরকারি কোন বরাদ্দ। ব্রিজের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে না পারায় হতাশ এলাকাবাসিরাও।
শিবনদীর ওই স্থানে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন বানিসর, চককেশব, হাটোর, মনোহরপুর ও চকমনোহরপুর গ্রামসহ বালুবাজার, কালীতলা এলাকার প্রায় ৫ হাজার পরিবার। প্রায় ১৭-১৮ বছর আগে সেখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের জোর দাবী জানিয়ে আসছিলেন এলাকাবাসি। এক ব্রিজের অভাবে সাত গ্রামের দুর্ভোগ। ২০০৪ সালের দিকে এ দাবি আরো জোরালে আকার ধারণ করে। ব্রিজের নির্মাণ কাজ সঠিকভাবে করার জন্য স্থানীয়ভাবে একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে উত্তোলন করা হয় প্রায় এক লাখ টাকা। সে সময় তৎকালিন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সচিব ও বালুবাজার গ্রামের নুরুল ইসলাম ও ব্রিজটি নির্মাণের জন্য নানা জায়গায় ধর্ণা, দেনদরবার ও চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন।
সরকারিভাবে ব্রিজটি নির্মাণের জন্য নানা প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যখন এলাকাবাসিরা ব্যর্থ হয়ে যান। তথাপি তারা দমে যায়নি বা তাদের মনোবল ভেঙ্গে যায়নি একটুকুও। তারা ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে বালুবাজার বাজারে দুইবার ইসলামী জালসার আয়োজন করেন। এতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন বিত্তবানসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আকরাম হোসেন সরদার জানান, শিবনদীর ওই স্থানে ব্রিজ নির্মাণের জন্য সেসময় চককেশব নি¤œ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু দাউদ খানকে সভাপতি, পরানপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ইলিয়াস খানকে সাধারণ সম্পাদক ও বালুবাজার কলেজের ডেমোনেস্টেটর হাবিবুর রহমানকে কোষাধ্যক্ষ করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির তত্বাবধানে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ অর্ধেক পর্যন্ত হয়েছে।
ব্রিজ নির্মাণ কমিটির সভাপতি আবু দাউদ খান জানান, স্থানীয়দের অর্থায়নে ১৪০ ফুট দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ৮ ফুট চওড়া ব্রিজটির ৯০ ফুট কাজ হয়েছে। ব্যয় হয়েছে ২০ লক্ষাধিক টাকা। অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। যা এলাকাবাসির পক্ষে যোগান দেয়া আর সম্ভবপর হচ্ছে না। তাই দ্রুত সরকারি সহায়তা কামনা করেন তিনি।
বালুবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিছুর রহমান জানান, ব্রিজের আশপাশে বালুবাজার উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়, কেজি স্কুল, কমিউনিটি ক্লিনিক ও একটি ডাকঘর রয়েছে। পাশে রয়েছে বালুবাজার মহাবিদ্যালয়, চককেশব নি¤œ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, বানিসর দাখিল মাদরাসা ও বৃহৎ একটি ফুটবল খেলার মাঠ। এছাড়া প্রতিদিন বিকেলে সেখানে বাজার বসে, রয়েছে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। নদীর উত্তর পাড়ে বসবাসরত লোকজন প্রতিদিন প্রায় ৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাজারে আসেন। তিনি আরও বলেন, চককেশব, বানিসর, হাটোইর, মনোহরপুর ও চকমনোহরপুর গ্রামের প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করে। বর্ষা মওসুমে এসব শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তিতে পড়ে। দীর্ঘপথ ঘুরে বিদ্যালয়ে এসে তারা লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন।
পরানপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইলিয়াস খান জানান, বালুবাজার বাজার সংলগ্ন শিবনদীর ওপর একটি ব্রিজের অভাবে উল্লেখিত ৫ গ্রামের প্রায় ৫ হাজার পরিবার চরম ভোগান্তির শিকার। এসব গ্রামের অধিকাংশ কৃষক শিবনদী পার হয়ে ছাতড়া বিলে ফসলের চাষ করেন। তাদের উৎপাদিত ফসল কালিতলা ব্রিজ হয়ে কমপক্ষে তিন কিলোমিটার পথ ঘুরে বাড়িতে নিয়ে আসতে হয়।
তিনি আরও জানান, বর্ষা মৌসুমে কৃষকের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। শিশু শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়গুলোতে পৌঁছে। ব্রিজটি নির্মিত হলে এলাকার সর্বস্তরের মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগের হাত থেকে রক্ষা পাবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম রেজা জানান, জনসাধারনের পথ চলাচলের সমস্যা সমাধানে ব্রিজটি নির্মাণ জরুরী হয়ে পড়েছে। সরকারিভাবে অর্থ বরাদ্দ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অচিরেই নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করা হবে।