সোমবার ● ১৯ মার্চ ২০১৮
প্রথম পাতা » প্রকৃতি ও পরিবেশ » নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে রাজশাহীতে গড়ে তোলা হয়েছে ইট ভাটা
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে রাজশাহীতে গড়ে তোলা হয়েছে ইট ভাটা
রাজশাহী প্রতিনিধি :: (৫ চৈত্র ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.১২মি.)নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় সাতটি ইট ভাটা গড়ে তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।এতে শতশত বিঘা ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে এবং ভাটার আগুনে পুড়ছে উর্বর মাটি। এতে আবাদি জমি কমার পাশাপাশি ধ্বংস হচ্ছে জীব-বৈচিত্র্য, পরিবেশ এবং হুমকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য।
উপজেলা নির্বাহী অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মিয়াপুরের NRA ইটভাটা ও KTA ভাটা, নিমপাড়া ইউনিয়নের TBF,হলিদাগাছীর একতা ইট ভাটা ও M&N ইটভাটা, দীঘল কান্দির সুপার ইট ভাটা,ইউসুফপুরের JDF নামে সর্বমোট সাতটি ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জনবসতি থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরে ইটভাটা তৈরি করার কথা এবং সেটা হতে হবে অবশ্যই ফসলি জমি বাদে পতিত জমিতে। কিন্তু অধিক মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা প্রায় সবগুলো ভাটাই ফসলি জমিতে গড়ে তুলেছেন। এতে উপজেলায় আশঙ্কাজনক হারে ফসলি জমি কমে যাওয়ায় বাড়ছে উৎপাদন ঘাটতি ও পরিবেশ দূষণ। উপজেলার ভুক্তভোগী অনেক কৃষকের অভিযোগ, ইট ভাটার জন্য এ উপজেলার প্রায় ৩০০ বিঘা ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এখানকার প্রতিটি ইট ভাটায় গড়ে ২৫ থেকে ৩০ লাখ ইট তৈরি করতে প্রায় ছয় কোটি ঘুনফুট মাটি ও বালু ব্যবহার করা হয়। আর ওই মাটির সিংহভাগই ফসলি জমির উপরিভাগ থেকে কেটে নেওয়া হয়।আবার এই ইটভাটাকে কেন্দ্র করে উপজেলার অনেক বড় আম বাগান উজাড় করা হচ্ছে। তাই সচেতন মহলের দাবি, ফসলি জমিতে ইট ভাটা তৈরি বন্ধ বা অভিযুক্তদের আইনের আওতায় না এনে এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে উপজেলার কোনও জমিতে ফসল উৎপাদন তো দূরের কথা এ অঞ্চল বিরান ভূমিতে পরিণত হবে।
NRA ইট ভাটার মালিক আজিবার রহমান ফসলি জমির মাটি নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা কৃষকদের কাছ থেকে উঁচু (টেক) জায়গা এবং ফিসারি থেকে মাটি কিনে ইট তৈরি করি।’
কৃষিতে ইটভাটার প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি অফিসার আবু জাফর মুহাম্মদ সাদিক বলেন, নিয়ম ভঙ্গ করে ইটভাটা তৈরি করায় কৃষিতে এর ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পড়ছে। কারণ ভাটা তৈরির ফলে ফসলি জমি কমে যাচ্ছে। আবার এর আশপাশের জমিগুলোতেও ফসল উৎপাদন কম হচ্ছে। অন্যদিকে জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি কেটে ইট তৈরি করাসহ অধিক কার্বন নিরসনের ফলে ফলজ গাছে ফলন কম হচ্ছে।
রাজশাহী জেলার পরিবেশ অধিদফতর বিভাগের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ বলেন,আবাসিক, বাণিজ্যিক, সরকারি মালিকানাধীন ও ব্যক্তি মালিকানাধীন কৃষি জমিতে কোনওভাবেই ইটভাটা নির্মাণ করতে পারবে না। স্থানীয় সরকার নির্মিত রাস্তা থেকে কমপক্ষে আধা কিলোমিটার, রেলপথ ও হাসপাতাল থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরে ইটভাটা তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, নিয়মের বাইরে কেউ যদি ফসলি জমিতে ইটভাটা গড়ে তোলে তাহলে আগুনের তাপে আশপাশের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যেমন, আম, লিচুসহ অনেক গাছে ফল হবেনা এবং ধান ও শাকসবজি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এসব বিষয় বিবেচনা করেই পরিবেশ অধিদফতর ইটভাটার ছাড়পত্র দেয়। এরপরেও কেউ যদি আইন অমান্য করে, তাহলে সঠিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এলাকাবাসী ও কৃষকদের অভিযোগ, উৎকোচ ও রাজনৈতিক প্রভাবে পরিবেশ অধিদফতর থেকে ছাড়পত্র নিয়ে পরে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে লাইসেন্স নিয়ে ইটভাটা গড়ে হাজার হাজার মানুষের ক্ষতি করা হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এর কোনও প্রতিকার করা হচ্ছে না।