মঙ্গলবার ● ২০ মার্চ ২০১৮
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » নার্ভ এজেন্ট কি ?
নার্ভ এজেন্ট কি ?
মাঈনুল হাসান :: বেশ কয়েকদিন ধরেই রাশিয়া ও যুক্তরাজ্যের সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়েছে নার্ভ এজেন্ট নিয়ে। গত ৪ই মার্চ রাশিয়ার গোয়েন্দা সার্গেই
স্ক্রিপাল ও তার মেয়ে ইউলিয়া অতি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিষাক্ত পদার্থ দ্বারা বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং বর্তমানে দুজনেই মারাত্মক অসুস্থ
হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এই নার্ভ এজেন্ট এতটাই বিষাক্ত যে তাদেরকে যে স্থানে আক্রমন করা সেখানে এক পুলিশ কর্মকর্তা গেলে সেও
অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং তাকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । পরবর্তিতে পর্ট ডাউনের সামরিক গবেষনাগানে পরীক্ষা করে দেখা যায় যে সেগুলো ছিল নার্ভ এজেন্ট।
সুতরাং প্রশ্ন হচ্ছে নার্ভ এজেন্ট কি ?
এ হচ্ছে চরম বিষাক্ত পদার্থ যা নার্ভ সিস্টেমকে অকার্যকর করে দেয় এবং শরীরের অন্য কোন অংশের কাজ করার ক্ষমতা নষ্ট করে। নার্ভ এজেন্ট বিভিন্ন রুপে থাকতে পারে যেমন পাউডার, তারল বা গ্যাসীয়। তরল অবস্থায় এটি ত্বক দিয়েও প্রবেশ করতে পারে।
রাশিয়ায় নভিচক শব্দের অর্থ আগন্তুক। ১৯৭০ ও ১৯৮০ সালে তৎকালীন সভিয়েত ইউনিয়ন এই নার্ভ এজেন্টের সূচনা করে যার নাম ছিল এ-২৩০।
এটি ভিএক্স নার্ভ এজেন্ট থেকে আট গুন বেশি শক্তিশালি ছিল। যা মাত্র এক মিনিটেরও কম সময়ে যে কাউকে হত্যা করতে পারে। বিভিন্নভাবে এ
এজেন্ট তৈরী করা হত যাকে সভিয়েতরা বলত রাসায়নিক অস্ত্র। কিছু কিছু এজন্টেকে বলা হত বাইনারি এজেন্ট অর্থ্যাৎ প্রথমে তাদের
আলাদা আলাদা দুটি অংশে তুলনা মুলক কম বিষাক্ত ভাবে রাখা হত এবং আক্রমানের পূর্বে একসাথে মিক্সড করলে ভয়ঙ্কর বিষাক্ত হয়ে উঠত।
অন্যান্য দুই প্রকারের মধ্যে আছে জি-এজেন্ট যাতে আছে বিষাক্ত স্যারিন গ্যাস ও ভি-এজেন্ট যাতে আছে ভিএক্স নামের বিষাক্ত হলুদাভ তরল পদার্থ।
২০১৭ সালে উত্তর কোরিয়ার সর্বচ্চো নেতা কিম জন উনের সৎ ভাই কিম জন নামকে মালেশিয়ার বিমান বন্দরে দুই জন মহিলা আক্রমানকারী এই নার্ভ এজেন্ট ব্যাবহার করে হত্যা করে। আক্রমনের মাত্র বিশ মিনিটের মাথায় তিনি মারা যান। জাতিসংঘ বলছে সিরিয়া সরকার ঘৌটায় এই গ্যাস দিয়ে শতাধিক লোক হত্যা করেছে।
১৯৯৫ সালে টকিওর সাবওয়েতে পলিথিন ব্যাগে লুকিয়ে রেখে আক্রমন করা হয়েছিল যেখানে ১৩ জন ব্যাক্তির মৃত্যু হয়েছিল। ২০০৬ সালে রাশিয়ার ভিন্নমতালম্বী নেতা আলেকজেন্ডার লিৎভানকোকে চায়ের কাপে এউ নার্ভ এজেন্ট দিয়ে হত্যা করা হয়। তবে এটাকে বলা হয় পলোনিয়াম-২১০।
নার্ভ এজেন্ট মুলত নার্ভ থেকে পেশির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এটাকে বলে প্যারালাইজড হয়ে যাওয়া অর্থ্যাৎ যা শরীরকে অকেজো করে দেয় মাত্র কয়েক সেকেন্ডে।
নার্ভ এজেন্ট দিয়ে আক্রমন করার পদ্ধতিও একটু আলাদা। নার্ভ এজেন্টকে অবশ্যই ত্বক বা নিশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে ভেতরে প্রবেশ করতে হবে ফলে টার্গেটের খুবই নিকট থেকে আক্রমন করতে হয়। উদ্দ্যেশে সফল করতে খুবই অল্প পরিমান উপাদান শরীরে প্রবেশ করলেই হয়। এটি বহন করার জন্য উচ্চমান সম্পন্ন প্যাকেটের প্রয়োজন হয় এবং যে আক্রমান করবে তাকেও গ্যাস নিরোধী পোশাক পরতে হয় অন্যথায় তাকেও মৃত্যু বরন করতে হতে পারে।
চিকিৎসা পদ্ধতি।
কিছু প্রতিষেধক আছে যা আক্রান্ত ব্যাক্তিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে পারে তবে সে উদাহরণ খুবই কম। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা নিতে
হবে এবং কোন উপাদান ব্যাবহার করা হয়েছে তা জানা থাকলে সঠিকভাবে চিকিৎসা করা যেতে পারে।
এই নার্ভ এজেন্ট শুধু মাত্র গাবেষনাগারেই তৈরী করা সম্ভব। ১৯৩০ সালে জার্মান সেনাবাহিনী স্বল্প খরচে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিষাক্ত পদার্থ
আবিষ্কার করতে গিয়ে নার্ভ এজেন্ট আবিষ্কার করে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র এই নার্ভ এজেন্ট ব্যাবহার শুরু করে।