শনিবার ● ৩১ মার্চ ২০১৮
প্রথম পাতা » করোনা আপডেট » নবীগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় শিক্ষিকা প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যু ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টা
নবীগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় শিক্ষিকা প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যু ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টা
উত্তম কুমার পার হিমেল, নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি :: (১৭ চৈত্র ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৮.৪৪মি.) নবীগঞ্জে নার্স ও আয়ার অপ-চিকিৎসায় প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। নিহত প্রসূতির নাম সুফলা রাণী দাশ (৩৩)। তিনি উপজেলার রোকনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা এবং নবীগঞ্জ পৌর এলাকার শিবপাশা গ্রামের মৃত সুমেশ চন্দ্র দাশের কন্যা ও উপজেলার আমড়াখাইড় গ্রামের রিপন তালুকদারের স্ত্রী। ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার সন্ধ্যায় নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। নিহত নবজাতক ছাড়াও শিক্ষিকা সুফলার ৬ বছর বয়সী অরুপ তালুকদার নামের এক পুত্র সন্তান রয়েছে। সে মাকে হারিয়ে পাগল প্রায়। এ নিয়ে ক্ষোভের পাশাপাশি উপজেলা জুড়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। শিক্ষিকা সুফলা রাণী দাশের মাতা প্রনতি রাণী দাশ জানান, তার কন্যা গর্ভবতী হওয়ার পর থেকেই তারা তাদের বাসার প্রতিবেশি নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আয়া নমিতা রানী আচার্য্যর পরামর্শ নিয়ে আসছিলেন। এমনকি ঘটনার তিন দিন পূর্বে অর্থাৎ গত রবিবার বিকেলেও আয়া নমিতা রাণী পৌর এলাকার শিবপাশা গ্রামস্থ তাদের বাসায় গিয়ে সুফলা রাণী দাশকে দেখে আসেন এবং বলেন তার প্রসবের আরো তিন দিন সময় আছে। তবে সবকিছু টিক আছে। এরপর গত বুধবার বিকেল ৩ টার দিকে শিক্ষিকা সুফলার প্রসব ব্যথা শুরু হলে সুফলার পরিবার পূর্বের ন্যায় আয়া নমিতাকে খবর দেন। খবর পেয়ে নমিতা প্রসূতির বাড়িতে যান। এসময় তিনি সূফলাকে তার সাথে নিয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে প্রসূতির সব ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডেলিভারীর কার্যক্রম শুরু করেন। এসময় প্রসুতির মা প্রনতি রাণী জানতে চান আয়া নমিতা ও সিনিয়র স্টাফ নার্স আরতি বালা নাথ দ্বারা কি তার কন্যা সুফলার ডেলিভারী সম্ভব ? এমন প্রশ্নের জবাবে আয়া নমিতা রাণী প্রসূতির মাকে জানান, তারা থাকতে ডেলিভারী করতে কোন সমস্যা হবে না এবং আর কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের প্রয়োজন নেই। এমন কথা বলে ওই হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স আরতি ও চন্দ্রনা দে কে এনে তারা তিন জনের সমন্বয়ে শুরু করেন ওই প্রসূতির ডেলিভারীর কাজ। এ সময় প্রসব ব্যথায় বেকুল প্রসূতির সুফলা অসহ্য হয়ে ছটফট ও হাউ মাউ করে কান্নাকাটি করলে তারা তাকে শান্তনার স্থলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এমনকি প্রসূতির গলা শুকিয়ে ওষ্টগত হওয়ার ফলে তাদের কাছে পানি চাইলে তারা কোন কর্ণপাত করেননি বরং ডেলিভারীর কাজ অসমাপ্ত রেখে হাসপাতালের অন্য রোগীদের পাশে গিয়ে সময় দেন। কিন্তু প্রসূতির গর্ভধারীনি মা প্রনতি রাণী মেয়ের পাশ ছাড়েননি। মেয়ের এমন অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তিনি কাকুতি-মিনতি করে আয়া নমিতা ও তার সহযোগীদের কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করে তাদেরকে ডেলিভারী কক্ষে আনেন। তাদের অনেক বুঝানোর পর তারা ওই হাসপাতালের দায়ীত্বরত চিকিৎসক চম্পক কিশোর সাহা সুমনকে প্রসূতির পাশে আনেন। তিনি এসে পরীক্ষা নীরিক্ষার পর প্রসূতির অবস্থা স্বাভাবিক রয়েছে বলে মাকে শান্তনা দেন এবং এ কথা বলে তিনি জরুরী বিভাগে চলে যান। এরই মধ্যে প্রসূতির গর্ভের সন্তান অর্ধেক ভূমিষ্টের পথে। কিন্তু আয়া ও নার্সরা প্রসূতির সন্তানকে কোন ভাবে উদ্ধার করতে না পেরে ‘কেচি দিয়ে কেটে’ নবজাতককে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। যার ফলে প্রসূতির অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ হয়। এরই মধ্যে সুফলার মৃত নবজাতক উদ্ধার করে তারা। তার অবস্থার বেগতিক দেখে দীর্ঘ প্রায় ৩ ঘন্টা অতিবাহিত হওয়ার পর দায়ভার এড়াতে কৌশলে তারা সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাঁকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পথিমধ্যে আউশকান্দি সংলগ্ন স্থানে পৌছলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন প্রসূতি সুফলা রাণী দাশ। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রসূতি সুফলার মা প্রনতি রাণী দাশ কান্নাজড়িত কন্ঠে এ প্রতিনিধিকে জানান, তার মেয়ের এমন রক্তক্ষরণ হয়েছে যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ওই সময় তার রক্তে ডেলিভারী কক্ষ প্লাবিত হয়েছে। তার মেয়ের শরীরে এতো রক্ত ছিল যা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। এ ব্যাপারে ওই দিন জরুরী বিভাগে দায়ীত্বরত থাকা চিকিৎসক ডা. চম্পক কিশোর সাহার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আয়া নমিতার তত্ত্বাবধানে প্রসূতির পরিবার তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন এবং তিনি গিয়ে দেখেছেন প্রসূতির মৃত বাচ্চা প্রসব হয়েছে। প্রসূতির অধিক রক্তক্ষরণের ফলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের (ভারপ্রাপ্ত) টিএইচও ডা. আব্দুস সামাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, জেনেছি ওই দিন ওই প্রসূতির মৃত বাচ্চা ভূমিষ্ট হয়েছে এবং অবস্থা খারাপ দেখে তাকে সিলেট রেফার্ড করা হয়েছে এবং পথিমধ্যে সে মারা যায়। ভুল চিকিৎসায় স্কুল শিক্ষিকার মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ নবীগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি নারায়ন রায় ও সাধারন সম্পাদকসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।