সোমবার ● ২ এপ্রিল ২০১৮
প্রথম পাতা » নওগাঁ » বদলগাছীতে আশ্রয়ন প্রকল্পে টাকা দিলেই ঘর : হত দরিদ্ররা টাকা না দেওয়ায় পায়নি ঘর
বদলগাছীতে আশ্রয়ন প্রকল্পে টাকা দিলেই ঘর : হত দরিদ্ররা টাকা না দেওয়ায় পায়নি ঘর
নওগাঁ প্রতিনিধি :: (১৯ চৈত্র ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.৩১মি.) নওগাঁর বদলগাছীতে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের কাজে চলছে অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্য। “আশ্রয়নের অধিকার শেখ হাসিনার উপহার” এ শ্লোগান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত “সবার জন্য বাসস্থান” নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাস্তবায়িত হচ্ছে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের কাজ।
প্রকল্পের আওতায় বদলগাছীর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের ৯৯ টি ঘর নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। ঘরের কাজে ব্যবহার হচ্ছে নিন্মমানের মালামাল। উপকারভোগী পরিবারের অভিযোগ তাদের নিকট থেকে আদায় করা হচ্ছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা ও বিভিন্ন উপকরণ। স্থানীয় প্রতিনিধিদের অভিযোগ এ কাজে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি থাকলেও কোন আলোচনা বা সভা ছাড়াই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজেই সব কিছু করাচ্ছেন। যারা টাকা দিতে পেরেছন তারা ঘর পেয়েছেন। অনেক হতদরিদ্ররা টাকা না দিতে পারায় পায়নি এই ঘর। কিন্তু এই ঘরগুলো শুধু মাত্র হতদরিদ্র গরীব অসহায় মানুষের জন্য।
৯৯ টি প্রকল্প বরাদ্দ করানো এবং তার চলমান বাস্তবায়নে উপজেলার জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটি ঘর নির্মাণের বিপরীতে ১ লাখ টাকা করে বরাদ্দ সাপেক্ষে ১শ টি গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের বরাদ্দ আসে। এর মধ্যে মথুরাপুর ইউনিয়নের ৯৯টি ও আধাইপুর ইউনিয়নে ১টি প্রকল্প। ২০১৯ সালের মধ্যে সবার জন্য বাসস্থান নিশ্চিত করণের জন্য ক. শ্রেণীতে যাদের জমি ও ঘর কোনটিই নেই, খ. শ্রেণীতে ১-১০ শতাংশ জমি আছে কিন্তু ঘর নেই এবং গ. শ্রেণীতে ১-১০ শতাংশ জমি আছে কিন্তু জরাজীর্ণ বসবাস অনুপযোগী ঘর আছে এমন
পরিবারকে অন্তর্ভূক্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের সহকারী পরিচালক এসএম হামিদুল হক এর ১৭-০৮-২০১৬ ইং তারিখের স্বাক্ষরযুক্ত পত্র দ্বারা জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের তালিকা তৈরি করে ৩০ আগষ্ট/১৬ তারিখের মধ্যে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) বদলগাছী সুজিত দেবনাথ ০৭/০৯/২০১৬ ইং তারিখে পত্র দ্বারা ৩টি শ্রেণি বিন্যাস করে তালিকা যাচাই-বাছাই কমিটির মাধ্যমে তালিকা তৈরি করে তা তার কার্যালয়ে দাখিল করার জন্য উপজেলার ৮ ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন। চেয়ারম্যানরা তাদের স্ব-স্ব ইউনিয়নের গৃহহীনদের তালিকা তৈরি করে সহকারী কমিশনার (ভ’মি) এর নিকট দাখিল করেন। সহকারী কমিশনার প্রাপ্ত তালিকা প্রত্যয়ন করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট দাখিল করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রতিস্বাক্ষর করে তা অনুমোদনের জন্য ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রেরণ করার লক্ষ্যে প্রস্তাব আকারে নওগাঁ জেলা প্রশাসক এর কার্যালয়ে প্রেরণ করেন। জেলা প্রশাসক তা অনুমোদন করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রেরণ করেন।
কোলা ইউপি চেয়ারম্যান ইস্কেন্দার মির্জা বাচ্চু এবং বদলগাছী সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বলেন, তারা তাদের ইউনিয়নের খ.শ্রেণীভূক্ত ২০-৫০ জন গৃহহীনদের তালিকা ভূমি অফিসে দাখিল করেছিলেন। কিন্তু উপরের তদবিরে তাদের ইউনিয়নে গৃহ নির্মাণ বরাদ্দ পাননি।
৯৯ টি ঘর নির্মাণ প্রকল্প আসার বিষয়ে মথুরাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহমানকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন পিন্টু নামী জনৈক ব্যক্তি ও পিআইও যৌথভাবে উপরে তদবির করে ৯৭টি গৃহ নির্মান প্রকল্প বরাদ্দ এনেছে। তদবিরের টাকা তারা কোথায় পেল তা জানতে চাইলে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
সরজমিনে তদন্তকালে স্থানীয় জনগণ জানায় ঘর প্রতি ১০-১২ হাজার টাকা উৎকোচ নেওয়া হয়। এই জন্য উপজেলার ৭ ইউনিয়নকে বঞ্চিত করে শুধু মথুরাপুর ইউনিয়নে ৯৭টি গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের বরাদ্দ আসে। যা উপজেলায় উন্নয়ন বৈষম্যের সৃষ্টি করেছে।
বদলগাছী সদর ইউপি চেয়ারম্যান আঃ সালাম ও মিঠাপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেন জানান, আমরা তালিকা দিয়েছিলাম কিন্তু বরাদ্দ পাইনি তবে বরাদ্দ পাওয়ার চেষ্টা চলছে।
এবিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আব্দুল করিমের সাথে গত ১এপ্রিল তার কার্যালয়ে দেখা করতে গেলে তাকে না পেয়ে বার বার ফোনে চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুম আলী বেগ বলেন, টাকা নেওয়ার কোন অভিযোগ নেই তবে অভিযোগ পেলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।