রবিবার ● ৮ এপ্রিল ২০১৮
প্রথম পাতা » শিরোনাম » আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের আগেই পালিয়ে যায় ইয়াবা সম্রাজ্ঞী হোসনে আরা
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের আগেই পালিয়ে যায় ইয়াবা সম্রাজ্ঞী হোসনে আরা
সিলেট প্রতিনিধি :: (২৫ চৈত্র ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় দুপুর ২.৪৭মি.) সিলেট সদর উপজেলার টুকেরবাজারের উত্তর পিরজপুর গ্রামের আজির উদ্দিনের এক তলা ভবন ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে ইয়াবা তৈরী করে আসছিল ইলিয়াছ আলী ও হোসনে আরা নামের এক দম্পতি। ঘরে বসে তারা নিজেরাই তৈরী করে তাদের সাব ডিলারদের মাধ্যমে এগুলো ছড়িয়ে দিত সিলেটের আনাচে-কানাচে। পুলিশ বলছে ইয়াবা সম্রাজ্ঞী হোসনে আরাকে ধরতে পারলেই তাদের নিয়োগকৃত সাব ডিলারসহ মাদক ব্যবসায়ীদের তথ্য পাওয়া যাবে।
বাসায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সিসি ক্যামেরা লাগানো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা শুরু হওয়ার আগেই সিসি ক্যামেরায় দেখে পালিয়ে যায় হোসনে আরা ও তার স্বামী ইলিয়াছ আলী।
এদিকে ওই বাসা থেকে পুলিশ সিসি ক্যামেরার মেমোরি জব্দ করেছে। ওই মেমোরি থেকে পুলিশ মাদক ব্যবসায়ীসহ অনেক সাব ডিলারদের তথ্য পেয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করার পর পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করার জন্য অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
এমনকি পুলিশ প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে ওই বাসাতে ইয়াবা তৈরী, সেবনের পাশাপাশি এখানে সিলেটের বাহির থেকে আসা ইয়াবা তৈরীর কারিগরদেরকে দিয়ে হোসনে আরা ও ইলিয়াছ আলীর বিশ্বস্ত কয়েকজন লোককে তৈরীর প্রশিক্ষন দেয়া হত। যারা টুকেরবাজার, সুনামগঞ্জসহ আশপাশ এলাকার বাসিন্দা।
এরা অনেকেই পেশায় দিনমজুর। কম সময়ে অনেক টাকা আয়ের লোভ দেখিয়ে তাদেরকে এই পথে নিয়ে আসা হয়।
পুলিশ সূত্র জানায়- হোসনে আরার স্বামী ইলিয়াছ আলী টুকেরবাজারের পূর্বদর্শা গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয় ব্যক্তি হওয়ায় তার সব পথঘাট চেনাজানা। ১০-১২ বছর পূর্বে ইলিয়াছ আলী দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এরপর হঠাৎ করেই তারা জীবন যাত্রার মান বদলে যায়। নিজ বাড়ি ছেলে ভাড়াটিয়া বাসায় উঠে এই দম্পতি।
সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি, বিমানবন্দর ও জালালাবাদ থানায় পূর্বে তারা বাসা ভাড়া নিয়ে ইয়াবা তৈরীর পাশাপাশি সাব ডিলারদের মাধ্যমে ইয়াবা বিক্রিও করেছিল।
মূলত হোসনে আরার দেখানো পথেই পা বাড়ায় তার স্বামী ইলিয়াছ আলী। ইয়াবা তৈরীর উপকরনগুলো সিলেটের বাহির থেকে সংগ্রহ করত হোসনে আরা। পূর্বে একাধিকবার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় হোসনে আরা। জেলও খাটেন।
এরপরও তার ইয়াবার ব্যবসা বন্ধ হয়নি। দীর্ঘদিন থেকে ইয়াবা বিক্রি ও উৎপাদন করায় সিলেটে তার শতাধিক সাব ডিলার রয়েছে। যারা কমিশন ভিত্তিতে হোসনে আরার সাথে কাজ করেন। আর কেউ এই পথে ছেড়ে ভালো পথে চলতে চাইলে তাকে হত্যা করার ভয়ভীতিও দেখানো হয়। সিলেট মহানগর পুলিশের কয়েকটি থানায় হোসনে আরার নামে ৮-১০টি মাদক মামলা রয়েছে।
অভিযানে সংশ্লিষ্ট পুলিশের এক সদস্য জানান- প্রায় দেড় বছর আছে টুকেরবাজারের উত্তর পিরজপুর গ্রামের আজির উদ্দিনের এক তলা ভবনটি ভাড়া নেয় হোসনে আরা। এরপর থেকেই সেখান থেকে ইয়াবা বিক্রি, উৎপাদন ও সেবন করত মাদক সেবীরা। তাদের বাসায় সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে বলে পুলিশের জানা ছিল না। জানা থাকলে পুলিশ অভিযানে মোড় ঘুরিয়ে দিত।
তিনি আরও জানান- সিসি ক্যামেরা থেকে অনেকেরই তথ্য পুলিশের পেয়েছে। এতে বুঝা যাচ্ছে তাদের বিশাল সিন্ডিকেট রয়েছে সিলেটে। তবে তদন্তের স্বার্থে এর বাহিরে আর কোন তথ্য দিতে চাননি তিনি।
সূত্র জানায়- জালালাবাদ থানা এলাকা থেকে অপারেশন এসআই দিবাংশু পালের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হোসনে আরা ও ইলিয়াছ আলীর সাব ডিলার শামীমকে গ্রেপ্তার করে। এরপর পুলিশ কয়েক দফা শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে পুলিশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়। এরপর পুলিশ তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই টুকেরবাজারের উত্তর পিরজপুর গ্রামে আজির উদ্দিনের ভাড়া দেয়া বাসায় অভিযান চালায়। তবে এসময় কাউকে পুলিশ আটক করতে পারেনি।
কারণ গ্রেপ্তারকৃত ইয়াবার সাব ডিলার শামীম তাদেরকে বিস্তারিত তথ্য দিলেও ওই বাসায় সিসি ক্যামেরা থাকার বিষয়ে কোন তথ্য দেয়নি। পরে পুলিশ ওই বাসাতে অভিযানের প্রস্তুতির দৃশ্য সিসি ক্যামেরায় দেখে পালিয়ে যায় হোসনে আরা, তার স্বামী ইলিয়াছ আলীসহ কয়েকজন ইয়াবা তৈরীর কারিগর।
পুলিশ বাসায় ভেতরে প্রবেশ করে সিসি ক্যামেরা দেখেই হতম্ভব হয়ে পড়ে। পরে পুলিশ হোসনে আরা এবং তার স্বামী ইলিয়াছ আলীর বসত কক্ষ থেকে ৭৯০ পিস ইয়াবা ও নগদ ৯৫ হাজার ৮২০ টাকা উদ্ধার করে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার আব্দুল ওয়াহাব (গণমাধ্যম) জানান-পুলিশ প্রথমে হোসনে আরার লোক মাদক ব্যবসায়ী শামীমকে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করে। এরপর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ হোসনে আরার ভাড়া নেয়া বাসায় অভিযান চালিয়ে ইয়াবা ও নগদ টাকা উদ্ধার করে। ধারণা করা হচ্ছে এ ব্যবসা হোসনে আরা একাই নিয়ন্ত্রণ করে। আর তাকে সহযোগীতা করে তার স্বামী ইলিয়াস। হোসনে আরাকে গ্রেপ্তার করার পর তাদের সহযোগীদের সম্পর্কে তথ্য জানা যাবে। পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করার জন্য অভিযান অব্যাহত রেখেছে।