মঙ্গলবার ● ১০ এপ্রিল ২০১৮
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » আজ ভয়াল ১০এপ্রিল লোগাং হত্যা দিবস
আজ ভয়াল ১০এপ্রিল লোগাং হত্যা দিবস
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :: (২৭ চৈত্র ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১১.২৬মি.) আজ ১০শে এপ্রিল ভয়াল লোগাং হত্যা দিবস। ১৯৯২ সালের আজকের এই দিনে অর্থাৎ ২৬ বছর পূর্বে খাগড়াছড়ি জেলায় পানছড়ি উপজেলার লোগাং ইউপির লোগাং ও শান্তিনগর এলাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসি জেএসএস) হত্যা করে ৮৯জন নিরস্ত্র, অসহায়, আবার-বৃদ্ধ, বনিতা, নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর বাঙ্গালীকে।
আসলে কি ঘটেছিল সে দিন ? ১০ এপ্রিল আর দু-দিন পরেই শুরু হবে বাঙালীদের প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখী, নতুন বছর। তাই গ্রামের সবাই সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ঘর বাড়ি সাজাচ্ছিল, বাজার সদাই করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, কেউ দুপুরে খেয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিল। হঠাৎ করে পিসিজেএসএস (শান্তি বাহিনী )‘র সদস্যের উপস্থিতিতে ভারী ও ভয়াংকর অস্ত্র-শস্ত্র হাতে গুচ্ছ গ্রামে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা তিব্বতীয়, মঙ্গোলীয়, বার্মা থেকে আগত (বৃটিশদের পুনর্বাসিত উপজাতি, যারা মূলত দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যাবহৃত হয়)। মুহুর্তের মধ্যে শান্ত জনপদটি পরিণত হয় রক্তাক্ত এক জনপদে। ছেলে থেকে বুড়ো, দুধের শিশু থেকে নারীরা পর্যন্ত কেউ রেহাই পায়নি সে আক্রমণে। কেউ কেউ ক্ষত বিক্ষত শরীর নিয়ে পালাতে পেরেছে, যারা পালাতে পারেনি তারা দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রের আঘাতে ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে এবং সবশেষ পাহাড়িদের দেওয়া আগুণে পুড়ে মারা গেছে।
চার দিকে লাশের স্তুপ, ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল হতভাগ্য মানুষের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কিংবা পোড়া হাড়-গোড়। সেদিনের সেই সম্মিলিত তান্ডবলীলায় প্রায় ৮৯ জনবাঙালী মারা যায়, এবং আহত হয় অসখ্য বাঙ্গালী। দূর থেকে চোখের সামনেই পিতা-মাতা, ভাইবোন, আত্মীয় স্ব-জনদের ভিনদেশী বহিরাগতদের রামদা, তীর-ধনুক, লাঠি-সোটার উপর্যুপরি আঘাতে ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে মরতে দেখে কোন রকমভাবে পালিয়ে বেঁচে যাওয়া প্রত্যক্ষদর্শীরা।
পরবর্তীতে বলা হয়, সেনা বাহিনী নাকি পাহাড়িদের কোন এক জুম্ম-চাষীকে ধরে নিয়ে যায় এলাকায় নাকি এ সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে। অথচ মূল কাহিনী হল, এক জন বাঙালী নারী মহিলা ঘটনার কয়েক দিন পূর্বে মাঠে নিজ গরু চড়াতে যায়। পথিমধ্যে কিছু পাহাড়ি সন্ত্রাসী যুবক তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালালে, সে হাতের কাছে থাকা দা দিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা চালায়। এতে এক জন গুরুতর আহত হয় এবং পরবর্তীতে তাকে তার স্ব-জাতি পাহাড়িরা হত্যা করে ইস্যু সৃষ্টি করে, সে মারা যায়। এতে করে পাহাড়িদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে এবং তারা বিনা উস্কানিতে শান্তি বাহিনীর অংশ গ্রহনেই অস্ত্র-শস্ত্রসহ বাঙালী গ্রামে হামলা চালায়। এর পর আহত নিহতের সংখ্যা আর আক্রমণকারী নিয়ে তৎকালীন গণমাধ্যমে চলে সর্বচ্চো মিথ্যাচার। এমনকি এর দায়ভার সেনাবাহিনী আর বাঙালীদের উপর পর্যন্ত চাপিয়ে দেওয়ার নগ্ন চেষ্টা চলে। আর সে সময়ে পার্বত্য অঞ্চলে গণমাধ্যমের প্রবেশ ছিল আর বস্তুনিরপেক্ষ সংবাদ ছিল অকল্পনীয় ব্যাপার। শান্তি বাহিনীর অপহরণ, হত্যার হুমকির ভয়ে মিডিয়া সত্য প্রকাশ করতো না।
আজো সেই সময়ে শান্তি বাহিনীতে থাকা লোকজন সে সব ঘটবার কথা অ-স্বীকার করতে চায়, সন্তু লারমা পর্যন্ত মিথ্যা হিসেবে প্রমাণ করতে চায়।
১নং লোগাং ইউপি চেয়ারম্যান প্রত্যুত্তর চাকমা তার এফবি ওয়ালে লিখেছেন, ১০ই নভেম্বর (মূলত হবে ১০ই এপ্রিল) ১৯৯২ লোগাং হত্যাকান্ড! একটি নারকীয় তান্ডব রাষ্ট্র তথা বিশ্ব বিবেক কাঁপিয়েছিল ! কিন্তু রাষ্ট্র কি তারঁ যথাযত দায়িত্ব পালন করেছে ? আমরা সাধারণ জনগন যতদূর সম্ভব তীক্ত অভিজ্ঞতার পরও সহবস্থানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবুও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং ইতিহাস থেকে ক্ষমা পাওয়ার জন্য এধরনের বর্বরোচিত ঘটনার প্রকৃত কারন উৎঘাটন করে দোষিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান নিশ্চয় রাষ্ট্রের কর্তব্য ! পার্বত্য চুক্তির সুবাধে আমাদের লোগাং ধুদুকছড়ার নাম ইতিহাস খ্যাত! কিন্তু এই একটা কলঙ্কের তিলক বদ্দ পিড়া দায়ক ! তাই এ কলঙ্ক মোচনের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। সামপ্রদায়িক সহবস্থান তৈরি করতে আমরা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
আজকের এই দিনে প্রত্যাশা থাকবে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন আর না হয় তার জন্য যথাযত পদক্ষেপ গ্রহন করা। একটি আধুনিক, কল্যানকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আমরা সহনশীনতার সহিত নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবো।