বুধবার ● ১১ এপ্রিল ২০১৮
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » বিশ্বনাথে যে কারণে স্কুল থেকে শিশুকে অপহরণ করে ২ ছাত্রী : মামলা দায়ের
বিশ্বনাথে যে কারণে স্কুল থেকে শিশুকে অপহরণ করে ২ ছাত্রী : মামলা দায়ের
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: (২৭ চৈত্র ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১১.৫৭মি.) পরিবারে অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণে অভাবের তাড়নায় আপন চাচাতো ভাইয়ের ছেলে হুসাইন আহমদ (৫) কে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে স্কুল ছাত্রী আলিমা (১৬) ও রাইমা আক্তার পূর্নিমা (১৩)। গ্রেফতারকৃতরা থানা পুলিশকে এমন তথ্য জানিয়েছে বলে জানান, বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামসুদ্দোহা পিপিএম।
এদিকে, আলিমা ও রাইমার পরিবারের অর্থনৈকিত দূরস্থা দূর করতে তাদের পরিবারকে আর্থিকভাবে দুটি সেলাই মেশিন প্রদান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও এক প্রবাসী।
সামাজিক অবক্ষয় ও বিদেশী চ্যানেলগুলোর কারণে সমাজে এধরণের অপরাধমূলক কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মন্তব্য করে গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে থানার ওসি জানান, অপহৃত স্কুল ছাত্র হুসাইন আহমদের পিতা উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের সিংড়াওলী গ্রামের বকুল মিয়ার আপন চাচাতো বোন আলিমা ও রাহিমা আক্তার পূর্নিমা। তাদের (আলিমা ও রাইমা) মা হেনোয়া বেগমের ৪ মেয়ে ও সবার ছোট ১ ছেলের জন্মের পর তাদের পিতা আলা উদ্দিন এরেকটি বিয়ে করে অন্যত্র (দিরাই উপজেলায় নিজ বাড়িতে) বসবাস করছেন। আর মা ও বোনদের নিয়ে (সিংড়াওলী গ্রামে) বসবাস করছেন আলিমা ও রাইমা। তাদের পরিবারের দেখাশুনা করেন চাচাতো ভাই বকুল মিয়া। সিংরাওলী গ্রামে একই বাড়িতে জায়গা ক্রয় করে বকুল মিয়া ও তার চাচী হেনোয়া বেগম (আলিমা ও ও রাইমার মা) কে পৃথক ঘর তৈরী করে দেন বকুল মিয়ার ফুফু (যুক্তরাজ্য প্রবাসী)। আলিমা ও রাহিমার মা অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের (দিনমজুর) কাজ করে সন্তানদের পড়ালেখা সহ সংসারের যাবতীয় খরছ চালান। পাশাপাশি লন্ডন থেকে তাদের ফুফু মাঝে মধ্যে বকুল মিয়ার মাধ্যমে তাদেরকে আর্থিকভাবে সহযোগীতা করেন। কিন্ত ফুফুর পাঠানো টাকা থেকে একটি অংশ তাদেরকে দিয়ে বাকি সব টাকা নিজে ভোগ করেন বকুল মিয়া। এতে বকুল মিয়ার প্রতি মনে ক্ষোভ জন্ম নেয় আলিমা ও রাহিমার। কিন্ত প্রকাশ্যে বকুল মিয়াকে তারা কিছু বলতে না পারায় একপর্যায়ে আলিমা ও রাইমা সিদ্ধান্ত নেয় বকুল মিয়ার ছেলে হুসাইন আহমদকে অপহরণ করার। তাদের পরিকল্পনা ছিলো তারা হুসাইন আহমদকে অপহরণ করে তার পিতা বকুল মিয়ার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করবে। এরপর ওই টাকা থেকে কিছু টাকা নিজের কাছে রেখে বাকি টাকা বকুল মিয়াকে ফেরৎ দিয়ে দিবে এবং যে টাকাটা তাদের কাছে থাকবে ওই টাকা দিয়ে তারা তাদের মায়ের চিকিৎসার জন্য ব্যয় করবে ও মাকে নিয়ে ঢাকায় চলে যাবে। সেখানে গিয়ে যে কোন গার্মেন্টসে চাকুরী করে সংসার চালাবে। তাই পরিকল্পনা অনুযায়ী হুসাইন আহমদকে অপহরণ করে।
গতকাল সোমবার (৯এপ্রিল) সকালে সিংগেরকাছ বাজারস্থ ইকরা মডেল একাডেমীতে যায় হুসাইন আহমদ। দুপুর ১১ টা ৪৫ মিনিটের সময় রাহিমা আক্তার পূর্নিমা উক্ত একাডেমীতে গিয়ে সে নিজেকে হুসাইন আহমদের ফুফু (পিতার চাচাতো বোন) পরিচয় দিয়ে তাকে (হুসাইন) বাড়ি নিয়ে যেতে চায়। একপর্যায়ে একাডেমী থেকে হুসাইনকে সাথে নিয়ে রাইমা আক্তার পূর্নিমা ও আলিমা বেগম বিশ্বনাথ বাজারে অবস্থান নেয়। দুপুরে হুসাইনকে বাড়ি নিয়ে যেতে তার পিতা বকুল মিয়া স্কুলে গিয়ে জানতে পারেন এক মহিলা ফুফু পরিচয় দিয় তার ছেলেকে স্কুল থেকে নিয়ে গেছেন। এসময় তিনি বুঝতে পারেন তার ছেলেকে কেউ অপহরণ করেছ। বেলা ১টায় বকুল মিয়ার মোবাইল ফোনে একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে কল ২০হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে আলিমা। বলা হয় ‘তুমার ছেলে আমাদের কাছে আছে, বিকাশ নাম্বারে ২০হাজার পাঠিয়ে দিলে আমারা তাকে হত্যা করবো’। জবাবে বকুল মিয়া বলেন ‘২০হাজার নয়, প্রয়োজন হলে ৫০ হাজার টাকা আমি দিয়ে দিব তবুও আমার ছেলেতে ফেরত চাই’। এসময় অপহরণের প্রমাণ হিসেবে অপহৃত হুসাইনকে দিয়ে মোবাইল ফোনে তার পিতার সাথে কথা বলায় আলিমা ও রাইমা। বিষয়টি উক্ত একাডেমীর প্রধান শিক্ষককে অবগত করে তাৎক্ষণিক বকুল মিয়া বিশ্বনাথ থানায় এসে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেন। এরই মধ্যে অপহরণকারীরা (আলিমা ও রাইমা) বিকাশের মাধ্যমে দ্রুত টাকা পাঠিয়ে দিতে একাধিকবার বকুল মিয়াকে ফোন করে। অপহরণকারীরা প্রথমে বকুল মিয়াকে মুক্তিপণের টাকার প্রেরণে জন্য একটি বিকাশ নাম্বার দেয়। কিন্ত ওই নাম্বারটি বিকাশ না থাকায় পরে আরেকটি বিকাশ নাম্বার দেয়। একপর্যায়ে পুলিশের পরামর্শে অপহরণকারীদের দেয়া বিকাশ নাম্বারে ১০হাজার টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং ট্র্যাকিং এর মাধ্যমে ওই বিকাশ নাম্বারের অবস্থান চিহিৃত করে পুলিশ। তাৎক্ষণিক বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামসুদ্দোহা পিপিএম ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) দুলাল আকন্দ দ্রুত উপজেলা সদরের আল হেরা মার্কেটের নীচ তলায় বিকাশ এজেন্ট গ্রামীণ টেলিকম-১ এ গিয়ে হাতে নাতে আলিমা ও রাইমাকে আটক করেন এবং অপহৃত শিশুকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। এসময় ওই দোকানের মালিক উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের রামপাশা গ্রামের সুলতান খানের পুত্র ফিরোজ খান (২৮) ও সামছুল ইসলাম খান (৩০) কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সোমবার রাতেই তাদের দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এঘটনায় সোমবার রাতে আলিমা ও রাইমার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (ঘং-০৩) এর ৭/৮ ধারায় একটি মামলা (মামলা নং- ০৮) দায়ের করেছেন। আজ মঙ্গলবার (১০এপ্রিল) গ্রেফতারকৃত আলিমা ও রাইমাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
মামলা দায়ের ও গ্রেফতারকৃতদের আদালতে প্রেরণের বিষয়টি নিশ্চিত করে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামসুদ্দোহা পিপিএম বলেন, প্রথমিক তদন্তে বুঝা যাচ্ছে গ্রেফতারকৃতরা প্রফেসনাল অপহরণকারী নয়। যদি তা হতো তাহলে অপহৃত শিশুটিকে নিয়ে তারা থানার পার্শ্ববর্তী মার্কেটে অবস্থান করতো না এবং এতো দ্রুত ভিকটিমকে উদ্ধার করা সম্ভব হতো না। তিনি বলেন, আলিমা ও রাইমার পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা দূর করতে তাদের পরিবারকে আর্থিকভাবে সহযোগীতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এক প্রবাসী।
দৌলতপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমির আলী বলেন, মূলত পরিবারে আর্থিক অভাব অনটনের কারণেই ওই মেয়েরা এঘটনাটি ঘটিয়েছে। তাদের পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা লাগবে আলিমা ও রাইমাকে দুটি সেলাই মেশিন তিনি প্রদান করবেন বলে জানান।