শুক্রবার ● ১৩ এপ্রিল ২০১৮
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » সাগরে মাছ থাকলেও নেই জেলে : পহেলা বৈশাখের চাহিদা মেটাতেমজুদকৃত ইলিশেই ভরসা
সাগরে মাছ থাকলেও নেই জেলে : পহেলা বৈশাখের চাহিদা মেটাতেমজুদকৃত ইলিশেই ভরসা
বাগেরহাট অফিস :: (৩০ চৈত্র ১৪২৪ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সকাল ১১.৩০মি.) নদী-সাগর উত্তাল, কাল বৈশাখী ঝড় সবকিছু মাথায় রেখে সমুদ্রগামী জেলেরো নিজেদেরকে নিরাপদ রাখতে বছরের এই সময়টা জাল ও ট্রলার মেরামতের কারনে সাগরে মাছ থাকলেও থাকেনা জেলেদের আনাগোনা। তাই বাগেরহাটে এবার মজুদকৃত ইলিশ মাছ দিয়েই পহেলা বৈশাখে চাহিদা মেটাচ্ছেন মৎস্য আড়তদারসহ পাইকারী ব্যবসায়ীরা। প্রতি বারের মত এবারও পহেলা বৈশাখে বাগেরহাটের বেশিরভাগ মানুষই পান্তা-ইলিশ খেতে আগ্রহী। আর এ সুযোগটাই নেন ব্যবসায়ীরা। পহেলা বৈশাখের ইলিশের চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে দাম। স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি লাভের আশাতেই ব্যবসায়ীরা মজুদ করেন ইলিশ। আর পহেলা বৈশাখের ২/১ দিন আগে থেকেই এসব মাছ ছাড়া হয় বাজারে। শুক্রবার সকালে বাগেরহাটের প্রধান মৎস্য আড়ত কেবি বাজারে গিয়ে আড়তদার ও পাইকার বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানাগেছে এ তথ্য।
সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ৬টা থেকে কেবি বাজার মৎস্য আড়তে শুরু হয় মাছ কেনা বেচা। প্রায় দুই ঘন্টা ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাক ডাকের মধ্য দিয়ে শেষ হয় কেবি বাজারের মাছ কেনা বেচা। দক্ষিণাঞ্চলের পাইকারি মাছ বিক্রির ঐতিহ্যবাহি বাজার এটি। খুলনা, গোপালগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলা থেকে খুচরা বিক্রেতা আসেন এখানে মাছ কিনতে। প্রতিদিনই প্রায় কয়েক টন ইলিশ বিক্রি হয় এ বাজারে। পাইকারি মাছ বিক্রির পুরাতন বাজার হলেও এবারের পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে কেবি বাজারে ইলিশ বোঝাই করে সাগর থেকে নতুন করে ভিড়ছে না কোন ট্রলার। মূলত সাগার ও নদী এসময় উত্তাল থাকার কারনে জেলেরা নিজেদেরকে নিরাপদ রাখতে এসময়টাকেই তাদের মাছ ধরার উপকরন জাল ও ট্রলার মেরামতের উপযুক্ত সময় হিসাবে বেছে নেয়। আর এ কারনে সাগরে মাছ থাকলেও জীবনের ঝুকি নিয়ে সাগরে নেই জেলেরা। বছরের সবথেকে বেশী দাম ও চাহিদা থাকা সত্বেও পহেলা বৈশাখে কোল্ড স্টোরে মজুদকৃত ইলিশের উপর ভরসা রাখতে হচ্ছে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের।
এদিকে চাহিদার কথা মাথায় রেখে এরই মধ্যে ইলিশের দাম বৃদ্ধি করেছেন ব্যবসায়ীসহ আড়ৎদারা। দাম বাড়ানো হয়েছে জাটকা ইলিশের ২শ থেকে ৩শ গ্রামের জাটকা কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ২শ থেকে ৩শ টাকা। এছাড়া ৫শ থেকে ৬শ গ্রামের ইলিশ মাছ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫ শ থেকে ৭শ টাকায়। তবে কেবি বাজারে এই সাইজের বড় ইলিশের দেখা মেলা ভার। এছাড়া বাগেরহাট সদর উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাজারসহ ছোট-খাট হাটবাজারে এখন সব ধরনের ইলিশের কদর বেশি। এ কারনে এসব বাজার গুলোতে জাটকা ইলিশের দেখা মিলছে বেশি। বছরের এ সময়টা ইলিশের দাম কিছুটা বেশি হলেও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে বাগেরহাটে পান্তা-ইলিশের ভক্তরা তাই জাটকা দিয়েই তাদের চাহিদা মেটাতে চায়।
এদিন সকালে বাগেরহাট মাছ বাজারের পাইকারী মাছ বিক্রেতা কামাল হোসেন বলেন, নতুন করে কোন মাছ না আসায় আমরা মজুদকৃত ইলিশ দিয়ে এবারের পহেলা বৈশাখে ক্রেতাদের চাহিদা মেটাচ্ছি। কোল্ড স্টোরের মজুদকৃত মাছ, তাই দাম ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই রয়েছে। এছাড়াও বাজারে সামান্য কিছু তাজা মাছ পাওয়া যাচ্ছে যেগুলোর দাম আকাশ ছোয়া।
বাগেরাট বাজারে মাছ কিনতে আসা এনজিও কর্মী তারিক আহমেদ বলেন, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে বছরের এ সময়টা ইলিশের দাম বেড়ে যায়। তাই আগে ভাগেই এসেছি মাছ কিনতে। দাম মোটামুটি কমই আছে। তবে বড় ইলিশের দাম অনেক বেশি।
উপকুলীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি শেখ ইদ্রিস আলী বলেন, বছরে এ সময়টায় জেলেরা তাদের জাল ও ট্রলার মেরামতের কাজে ব্যাস্ত থাকেন। এ কারনে নদী বা সাগরে মাছ থাকলেও সেই পরিমান জেলেরা নদী বা সাগরে মাছ ধরছে না। আর এ কারনেই বাগেরহাট কেবি বাজারে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে নতুন কোন মাছ আসছে না। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে ব্যবসায়ীরা যে মাছ গুলো কোল্ড স্টোরে মজুদ করেছিল সেগুলো এখন বাজারে ছাড়া হচ্ছে।
বাগেরহাট কেবি মৎস্য আড়ৎদার সমবায় সমিতির সভাপতি আলহাজ¦ এসএম আবেদ আলী বলেন, সারা বছরই এবার ইলিশের দাম ভালো থাকায় ব্যবসায়ীরা ইলিশের মজুদ কম করেছে। এবছর ২৪পিসে ১ কেজি এ সাইজের মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪শ ৪শ ২০ টাকা। ১৭পিসে ১ কেজি এ সাইজের মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬শ থেকে ৬শ ৩০ টাকা। তবে চাহিদা অনুযায়ী বাজারে ইলিশ মাছের সরবারয় সাভাবিক করেছে বলে তিনি জানান।