বুধবার ● ১৮ এপ্রিল ২০১৮
প্রথম পাতা » গাজিপুর » গাজীপুরে প্রতিবন্ধি শিশু রাহিম শিকলে বাঁধা
গাজীপুরে প্রতিবন্ধি শিশু রাহিম শিকলে বাঁধা
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: (৫ বৈশাখ ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৮.১৯মি.) গাজীপুরের শ্রীপুরের শৈলাট গ্রামে রাহিম (১০) নামে এক শিশুকে দীর্ঘদিন ধরে পায়ে শিকল পরিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। শিশুটির একমাত্র অপরাধ সে প্রতিবন্ধী। তবে পরিবারের লোকজনের কথা তার নিরাপত্তার কথা ভেবেই জন্মের দুই বছর পর হতেই তাকে শিকলে বেঁধে রাখা হচ্ছে।
শিশুটি শৈলাট গ্রামের হতদরিদ্র ভ্যানচালক আব্দুস সামাদের ছেলে। বর্তমানে শিকলবন্দি জীবনে তার শারিরীক বৃদ্ধি ঘটলেও মানসিক বিকাশ না হওয়ার আশংকা তৈরি হয়েছে।
শিশুটির বাবা আব্দুস সামাদ জানান, তার সহায়-সম্পদ বলতে আছে একটি বাড়ি ভিটা আর দুটি ঘর। নিজে ভ্যানগাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিন ছেলে দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়েই তার সংসার। সারের সবার ছোট রাহিমের ২০০৮ সালে প্রতিবন্ধী হিসেবে জন্ম হয়। জন্মের পর বিভিন্ন কবিরাজ দেখিয়ে চিকিৎসা করিয়েও ফল পাওয়া যায়নি, যখন সে হাঁটতে শিখল তখন দেখা গেল সে বাড়ির বাইরে চলে যায়। পরে তার বয়স যখন আড়াই বছর তখন থেকেই তার নিরাপত্তার কথা ভেবে পায়ে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হচ্ছে।
শিশুটির মায়ের মতে, তার ছেলেটি কারো কোন ক্ষতি করে না। সব সময় খেলাধুলা করতে পছন্দ করে, তবে খেলতে খেলতে অনেক দূরে গিয়ে হারিয়ে যাওয়ার আশংকায় বেঁধে রাখা হচ্ছে। শিকলে বেঁধে রাখলে রাহিমের মন খুব খারাপ হয়, একাকি বিষন্নভাবে বসে থাকে। তবে ছিলেটিকে সুস্থ করে তোলার ইচ্ছা থাকলেও দারিদ্র প্রতিবন্ধকতার জন্য বারবার তারা হেরে যাচ্ছেন।
গাজীপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার মিজানুর রহমান জানান, শিশুটির পিতা হতদরিদ্র। তবে তার পরিবার এই প্রতিবন্ধী শিশুটির কথা বিবেচনা করে ইতোমধ্যেই তাকে সরকারি সহায়তা কার্ড দেয়া হয়েছে।
প্রতিবন্ধী শিশুকে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডঃ অশোক কুমার সাহা জানান, প্রতিবন্ধী একটি শিশুকে শিকলে বেঁধে রাখা ভয়ানক একটি দিক। এতে শিশুটির মানসিক বৃদ্ধির পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। তবে শিশুটিকে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠার পরিবেশ তৈরি করার জন্য তার পরিবারকেই মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম কাজ হচ্ছে তার পায়ের শিকল খুলে দেয়া।