সোমবার ● ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » উপ সম্পাদকীয় » শোক শ্রদ্ধা আর স্বাধীনতার বুদ্ধিজীবি দিবস
শোক শ্রদ্ধা আর স্বাধীনতার বুদ্ধিজীবি দিবস
মাহবুবুর রহমান :: আজ শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস। ১৯৭১ সালের সেই দিনে আমরা হারিয়েছি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। গভীর শ্রদ্ধা ও শোকের সঙ্গে স্মরণ করছি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। এটি একটি দিবস নয় একটি জাতির চিন্তা, চেতনা, স্বাধীনতার আগামী পদক্ষেপ। শহীদ জননী জাহানার ইমামের অনেক দিনের সংগ্রাম বাস্তবে রূপ নিয়েছ এই বছর। তাই এই বছর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস স্বাধীনতা স্বপক্ষের বাঙ্গালী কাছে আগামী প্রজন্মের কাছে বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতার অনেক বছর পরে রাষ্ট্রীয়ভাবে আমরা শহীদদের রক্তের ঋণ বিলম্বে হলেও শোধ করা শুরু করেছি। মহান মুক্তিযুদ্ধের সুদীর্ঘ সাড়ে চার দশক পর জাতি হাজারো বাঁধা পেরিয়ে ইতিহাসের খল নায়কদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে একটি জাতির ন্যায় বিচারের পথে আলোক মশাল জ্বালিয়েছে।শুধু মাত্র শহীদ সাংবাদিক বুদ্ধিজীবির পরিবার বিচার পায়নি। হৃদয়ের ভেতর জমাট বাঁধা পুরো বাঙ্গালী জাতি বিচার পেয়েছে। পবিত্র ধর্মের অপবিত্রকারী কিছু ইবলিশ. শয়তান ও নর পশুদের বিচারের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হওয়ার পথও সুগম হয়েছে। যুগে যুগে এদের বিচার হয়নি বলে রাষ্ট্রযন্ত্র এদের প্রতিষ্ঠিত করেছে বলে এদেশে শহীদ হয়েছে বঙ্গবন্ধুর পুরো পরিবার, হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে জিয়াউর রহমানসহ হাজারো নেতাকর্মী। শুরু হয়েছিল বিচার না পাওয়ার সংস্কৃতি। জাতি আজ বিচার পাওয়ার স্বপ্ন দেখে। জাতি আজ আদালতের উপর বিশ্বাস ও আস্তা রাখতে পারে।
বুদ্ধিজীবি হত্যা আজো অব্যাহত আছে। তাতে কোন সন্দেহ নেই। সেই দিন ধর্মের দোহাই দিয়ে বাঙ্গালী জাতিকে বিভক্ত করতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি। আল-বদর, আল-শামস ইসলামের পবিত্র নামসমুহ ব্যবহার করে তারা ইসলাম ধর্মকে কত নিচে নামাতে তৎপর ছিল তা ভাষায় প্রকাশ করতেও লজ্জাবোধ হয়। ইসলাম শান্তি ও পবিত্রতার ধর্ম। সেই পবিত্র ধর্মকে অপবিত্র করে তারা যা করেছে তার পরিনতি আজ ইয়াজিদ,মীরজাফরের মতো গালিতে পরিনত হয়েছে।
ইতিহাস তাদের ক্ষমা করেনি। করবেও না। আজ যারা না বুঝে একটি কুচক্রী মহলের প্ররোচনায় পড়ে আজকের বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করছে তাদের পরিনতিও তেমন হবে। সরকার কিংবা প্রশাসনের চোখে ফাঁকি দিয়ে এড়িয়ে চলুক কিন্তু মহান রবের দৃষ্টি থেকে তারা কখনো পালাতে পারবে না । কারণ আল্লাহ সঠিক বিচার করেন। সত্য সব সময় একটু পরে প্রমানিত হয়।
বাংলার মাটি পীর-মোর্শেদ, আওলিয়া ও অসংখ্য ভালো লোকের মাটি । এখানে অন্যায় করে কেউ পার পায়নি পাবেও না। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশের আওলিয়াদের মাজারে মাজারে বোমা-বাজি কম হয়নি। বিন্তু তার বিচারও হয়েছে । তা যদি তারেক জিয়া বুঝতে না পারে তাহলে করার কিছু নেই।
পাকিস্তানের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত জামাতের যত কর্মকান্ড সবটি দেশ বিরোধী আর মানুষ হত্যার নোংরা রাজনীতি। তা ১৯৭১ সালে আমাদের প্রবীনেরা দেখেছে। আর আমরা দেখেছি ২০১৪ সালে। রাজনীতির নামে গাছকাট, গরু পোড়ানো, হিন্দুদের উপর হামলা মিডিয়ার বদৌলতে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মসহ সারা বিশ্ব দেখেছে। ওরা পাকিস্তানের দালাল আর বাংলাদেশে থেকে বাংলাদেশের বাতাস নিয়ে বাংলাদেশে সকল কিছু করে বাংলাদেশের বিরোধীতা করে তারা সেই ১৯৭১ সালের পরাজিতদের প্রজন্ম। ইসলামের ভাষায় তারা মোনাফেক। ইতিহাস সাক্ষী মোনাফেক দিয়ে রাষ্ট্র সংরক্ষিত হয়না। রাষ্ট্র সার্বভৌমত্ব হারায়।
জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা এটি ইসলামের সেই ঘৃর্ণিত কুচরিত্রের অধিকারি ইয়াজিদের চরিত্র। একটু গভীরভাবে ভেবে দেখলে আর ইসলামের ইতিহাস পড়ে থাকলে তারই প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তাই নতুন প্রজন্মদের অনুরোধ করবো কারবালার ইতিহাসটি পড়–ন।
সারা বিশ্বে প্রতিটি দেশের মুক্তির স্বাদ আলাদা। তাই বিশ্বের সকল দেশে স্বাধীনতার রজতজয়ন্তি পালন করে। সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, ইউএই, মিশর, সিরিয়া, লিবিয়া, লেবানন, পাকিস্তান, ভারতসহ প্রতিটি রাষ্ট্র তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির বলয়ে স্বাধীনতা রজতজয়ন্তি পালন করে।
অথচ বাঙ্গালী জাতি স্বাধীনতার রজতজয়ন্তি পালন করলে যত দোষ। ইসলামের নানা অপব্যাখ্যা শুরু হয়ে যায়। বাঙ্গালী জাতি ধার্মিক,মানবিক ও মহান রবের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা আছে বলে সেই সুযোগটি নেয় একটি কুচক্রী মহল। কিস্তু তারা জানেনা ফাঁনোস বেশি জ্বলে উঠলেও বেশিক্ষণ ঠিকে থাকেনা। কারণ তার সত্যের শিকড় নেই। তাই ইসলামের নাম ব্যবহার করে আল-বদর, আল-শামস দল গঠন করলেও মিথ্যার কারণে বেশি দিন ঠিকেনি। ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ হয়েছে সেই বাহিনী ও তাদের কর্মকান্ড।
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় যখন অত্যাসন্ন, তখনই এই ঘৃণ্য ঘাতকরা যেভাবে নবীন রাষ্ট্রটিকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে পঙ্গু করার চক্রান্তে মেতেছিল । এখন যে বিচার হচ্ছে অপরাধের তুলনায় শাস্তি কম বলে মনেহয়। এদের খুনের বিচারের সাথে পবিত্র ইসলাম ধর্মের পবিত্র নামসমুহ ব্যবহার করে অপবিত্র কাজ করারও বিচার হওয়া উচিৎ। তাহলে ভবিষ্যতে আর কেউ ইসলামের পবিত্র নাম ব্যবহার করে অপবিত্র কাজ করতে সাহস পাবেনা। এরা কেবল ঠান্ডা মাথার খুনিই নয়, সভ্যতার শত্রু, মানবতার শত্রু, ইসলামের শত্রু। প্রতিটি দেশের বুদ্ধিজীবিরা তাদের দেশের সম্পদ। আর সেই কারণে বুদ্ধিজীবিদের লালন-পালন করা হয়। আমাদের প্রিয় নবীজি কবি সাহিত্যিকদের আলাদাভাবে মুল্যায়ন করতেন। যাদের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবিরা ধর্ম নামে না। এটা ভুল। বুদ্ধিজীবিরা ধর্ম ও আল্লাহকে বিজ্ঞানের মতো পরিস্কার করে ভালোবাসে। ধর্মকে তারা গবেষণা করে ধর্মের মুল রস গ্রহন করে। জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশ করেন। ইসলাম ধর্মে কুসংস্কারের কোন জায়গা নেই। ইসলাম ধর্মে জ্ঞানীর কদর অনেক বেশি। কেন আপনি মানুষ হত্যা করে আশরাফুল মাখলুকাত থেকে আপনার নামটি ইবলিশের খাতায় লিপিবদ্ধ করবেন ?
স্বদেশ প্রেম ঈমানের অঙ্গ। একটি দেশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার সংরক্ষণ ও প্রতিষ্ঠার জন্য বুদ্ধিজীবিরা লিখেছেন স্বাধীনতার পক্ষে, পাকিস্তানিদের শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে। মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও সহায়তা দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন। শিক্ষা, লেখনী, চিন্তা, শিল্প-সংস্কৃতি দিয়ে তারা কেবল বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করেননি, স্বদেশ ও স্বজাতির আত্মপরিচয় বিনির্মাণ করেননি; পাকিস্তান আমলজুড়ে গণতন্ত্রের জন্য, সেনা ও স্বৈরাচারী শাসনের নাগপাশ ছিঁড়ে ফেলার জন্যও আজীবন প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তাদের অক্লান্ত চেষ্টায় বাংলাদেশকে পৌঁছে দিয়েছিলেন স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে। নিশ্চিত পরাজয় জেনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় নিকৃষ্ট দোসররা স্বাধীনতার পক্ষের লেখক-সাহিত্যিক-সাংবাদিক-চলচ্চিত্রকার-বুদ্ধিজীবীদের ধরে নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছিল ১৪ ডিসেম্বরের আগেই। তাদের নির্বিচারে হত্যা করে।
স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশেও তাদের হত্যার বিচারের বাণী বহুদিন নিভৃতে কেঁদে ফিরেছে। আজ ক্ষুদ্র হলেও নিজের জীবন বাজি রেখে শেখ হাসিনার সরকার তাদের বিচারের মুখোমুখি করেছে। আজ বিচারহীণতার অন্ধকারের অবসানের দিকে বাংলাদেশ। কোরানের কথা দেশের জন্য যারা প্রাণ দিবে তারাই শহীদ। আজ বাঙ্গালী জাতির শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। এই দিবসে আমাদের প্রত্যাশা, সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হউক। কলঙ্কমুক্ত হউক জাতি। সংস্কৃতি, চিন্তাচর্চা, মননশীলতা, আর স্বাধীনতার পতাকা হাতে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রতিটি কোণায় কোণায়।