বৃহস্পতিবার ● ১৯ এপ্রিল ২০১৮
প্রথম পাতা » শিরোনাম » নবীগঞ্জ পৌরসভার ৭টি পদে অবৈধ নিয়োগ বাতিলের দাবীতে অভিযোগ
নবীগঞ্জ পৌরসভার ৭টি পদে অবৈধ নিয়োগ বাতিলের দাবীতে অভিযোগ
নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি :: (৬ বৈশাখ ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬.৫৬মি.) নবীগঞ্জ পৌরসভার ৭টি পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম, দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এনে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর ‘অবৈধ নিয়োগ’ বাতিলের আবেদন করেছেন নিয়োগ পরীক্ষায় বঞ্চিতরা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের নিকট এ অভিযোগটি প্রেরণ করা হয়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রকাশ, চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারী পত্রিকার মাধ্যমে ওই পৌরসভার সার্ভেয়ার, সহকারী এ্যাসেসর, সহকারী লাইসেন্স পরিদর্শক, হিসাব সহকারী, নিম্নমান সহকারী কাম-মুদ্রাক্ষরিক, ট্রাক চালক, অফিস সহায়কসহ ৭টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে ২৫ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ৭টি পদের বিপরীতে প্রায় ৩ শ ৮৬ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেন। পরবর্তীতে চারিত্রিক সনদসহ অন্যান্য কাগজপত্রে সিল স্বাক্ষরে ক্রটিসহ বিভিন্ন অজুহাতে প্রায় ১ শত ৪২ জনের আবেদন বাতিল করে কর্তৃপক্ষ। অবশিষ্ট ২ শ ৪৪ জনের লিখিত ও মৌখিত পরীক্ষায় অংশ গ্রহনের জন্য প্রবেশ পত্র দেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৩ এপ্রিল শুক্রবার সকাল ১০ টায় লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। তড়িগরি করে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই প্রকাশ করে এবং ওইদিন গভীর রাত পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, একদিন পরেই পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই প্রকৃত মেধাবীদের বঞ্চিত করে পৌর মেয়র আলহাজ্ব ছাবির আহমদ চৌধুরী’র চাচাতো ও মামাতো ভাইসহ মেয়রের নিজস্ব লোকদের সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে ৭ টি পদেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ ফলাফল প্রকাশের সাথে সাথে উক্ত ‘অবৈধ’ নিয়োগ মেনে নিতে পারেননি পরীক্ষায় অংশগ্রনকারীরা। তারা কোন উপায় না পেয়ে গত রোববার দুুপুরে নবীগঞ্জ শহরের নতুন বাজার মোড় থেকে বিভিন্ন লেখা সম্বলিত প্লে-কার্ড নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে পৌরসভা কার্যালয় ঘেরাও করে। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা নিয়োগ বাতিলের জন্য ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন। খবর পেয়ে পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ এটিএম সালাম, কাউন্সিলর মোঃ আলাউদ্দিনসহ পৌর কর্তৃপক্ষ উপস্থিত হয়ে উত্তেজিতদের শান্তনা বলেন, তারা ৩ দিনের মধ্যে পরিষদের জরুরী সভা ডেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। এ আশ্বাস পেয়ে বাড়ি ফেরেন আন্দোলনকারীরা। অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, ওই নিয়োগ পরীক্ষায় নবীগঞ্জ জে কে সরকারী মডেল হাই স্কুলের শিক্ষক রাজিব দাশ হিসাব সহকারী পদে লিখিত পরীক্ষায় মেয়রের চাচাতো ভাই জুয়েল চৌধুরী নামের যুবকের পাশে বসে তাকে সহযোগীতা করেন। কিন্তু অদৃশ্য কারণে মৌখিক পরীক্ষায় রাজিব দাশ অংশ গ্রহন করেননি। অবশেষে এ পদে চাকুরী হয়েছে জুয়েল নামের ওই যুবকেরই। অভিযোগ রয়েছে, সরকারী স্কুলের শিক্ষক রাজিব দাশ এর আগেও পৌরসভা পরিচালিত আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি দিয়ে মেয়রের প্রচন্দের লোকদের উত্তীর্ণ করে। এর রকম অন্তত ৩/৪ জন প্রক্সি পরীক্ষার্থী অংশ নেয় ভাল রেজাল্ট হওয়ার পরও কিন্তু তারা মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। পরীক্ষায় ২ ঘন্টা পূর্বেই মেয়রের নিজস্ব লোকদের কাছে প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়। এছাড়াও মেয়রের ঘনিষ্ট বলে খ্যাত নবীগঞ্জ বাজারের অসিম বণিক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ২/৩ মাস পূর্বেই ঘোষনা দিয়েছিল তার স্ত্রী উমা বণিক নবীগঞ্জ পৌরসভায় চাকুরী পাবে। এমনকি বাস্তবেও ৪০ মিনিট পূর্বে প্রশ্ন পত্র দেওয়া হয়। এবং উমা বণিকের আপন ভাই সুমন বণিক একই বেঞ্চে বসে প্রক্সি পরীক্ষার মাধ্যমে উক্ত উমা বণিককে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে সহায়তা করেন। বঞ্চিত পরীক্ষার্থীরা জানান, প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলরদের আশ্বাসের সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করেও পৌর কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করায় অবশেষে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নবীগঞ্জ উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর ‘অবৈধ নিয়োগ’ বাতিলের আবেদন করেন বঞ্চিতরা। এবং অভিযোগগুলো সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধও করেন তারা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষে অভিযোগটি গ্রহণ করেন সিইও মাহবুবুর রহমান। এ বিষয়ে পৌর মেয়র আলহাজ্ব ছাবির আহমেদ চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যে নিয়োগ নিয়ে কথা উঠেছে তা স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে, এখানে কোন অনিয়ম বা দূর্নীতির প্রশ্নই উঠে না। অপরদিকে, গত সোমবার সন্ধায় নবীগঞ্জ পৌর মেয়র আলহাজ্ব ছাবির আহমেদ চৌধুরী নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেও এমন দাবীই করেছেন।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঘটনাটি শুনেছেন, অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।