শনিবার ● ২১ এপ্রিল ২০১৮
প্রথম পাতা » প্রকৃতি ও পরিবেশ » বিশ্বনাথে বাসিয়া নদী খনন কাজে সরকারের কোটি টাকা যাচ্ছে জলে
বিশ্বনাথে বাসিয়া নদী খনন কাজে সরকারের কোটি টাকা যাচ্ছে জলে
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: (৮ বৈশাখ ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সকাল ১০.৪৭মি.) সিলেটের বিশ্বনাথে বহুল আলোচিত বাসিয়া নদীর দ্বিতীয় পর্যায়ে পুনঃখনন কাজে চলছে ব্যাপক অনিয়ম। উপজেলা বাসীর দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল নদী খনন কাজ আর সরকারের কোটি টাকা জলে ভেসে যাচ্ছে। পানি সেচের মাধ্যমে নদীর নিচের টপ (গভীর অংশ) এর মাটি কাটার কথা থাকলেও সেই নিয়ম অমান্য করে স্থানীয় নদী বাঁচাও আন্দোলনকারী নেতাদের সাথে নিয়েই দায়সারা ভাবে খনন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্টান এমন অভিযোগ এখন স্থানীয় জনগনের। এবং শুধুমাত্র উত্তরপাড়ে চলছে খনন কাজ। আর অদৃশ্য কারনে আটকে আছে নদীর দক্ষিণপাড়ের কাজ। তার পরেও নদীর তীরের মাঠি না কেটে লোক দেখানো ভাবে ঘাস পরিস্কার করা হচ্ছে। এতে স্থানীয় জনসাধারণের পাশাপাশি খনন কাজে সংশ্লিষ্ট সিলেটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারাও অসন্তোষ রয়েছেন।
দ্বিতীয় পর্যায়ে পানি উন্নয়নের বোর্ডের তত্ত্বাবধানে ওই নদী পুনঃখনন কাজ চলমান থাকলেও এলাকাবাসী প্রতিনিয়তই স্থানীয় সাংবাদিক ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে এমন অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ করে আসছেন। পুনঃখনন কাজ চলাকালে কয়েকটি স্থানে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন দোকান ঘর ভাংচুর করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন। আবার অনেক স্থানে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)’র অনুমতি ছাড়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী নদীর তীরের গাছ কাটাচ্ছেন। অনেকের অভিযোগ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন অবৈধ পদ্ধতি অবলম্বন করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে কারও মালিকানা জায়গা বেশি খনন করছেন আবার কারও কম।
জানাযায়, গতবছর জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে প্রায় ১কোটি ৮০লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলা সদর থেকে ৭কিলোমিটার বাসিয়া নদী পুনঃখনন কাজের টেন্ডার করা হয়। কাজটি পায় মেসার্স সামছুর রহমান কন্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্টান। তৎকালিন সময়ে খনন কাজের জন্য নদীর উভয় পাড়ে মাপ দিয়ে ৩৩মিটার সীমানা নির্ধারণ করা হয়। সেই সাথে নিচের টপ ৯মিটার খনন করা হবে বলে ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের মালিক মুসলিম মুল্লা ও সিলেটর পাউবো কর্মকর্তারা জানান। ওই সময়ে খনন কজ শুরু করা হলেও বৃষ্টির পানি চলে আসায় সেই বছর কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। চলতি বছরে দ্বিতীয় পর্যায়ে মটুকোনা গ্রামের দক্ষিণ থেকে কাজ শুরু করা হলেও স্থানীয় নদী বাঁচাও আন্দোলনকারী নেতাদের সাথে নিয়ে অনিয়ম ও দূর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্টান। ওই স্থান থেকে উপজেলা সদরের দিকে প্রায় ৬কিলোমিটার পানি সেচ না করেই নদীর নিচের টপ পানিতেই খনন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এমনকি নদীর উপর অংশের টপে উভয় পাড়ের ৩৩মিটার পর্যন্ত মাটি না কেটে এর ভেতরেই দায়সারা খনন কাজ চলছে।
বর্তমান ১কিলোমিটার ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের লোকজন শুধু পশ্চিম তীরে খনন কাজ করছে। রহস্যজনক কারণে পূর্ব তীরে কাজ না করায় বৃহস্পতিবার বিকেলে স্থানীয় লোকজন খনন কাজ বন্ধ করে দেন। পাশাপাশি এসকল লোকজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভুমি কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করেন। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শুক্রবার (২০এপ্রিল) দুপুরে বিশ্বনাথ উপজেলার ইউএনও অমিতাভ পরাগ তালুকদারের অফিসে গিয়ে বৈঠক করেন সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী খন্দকার মোর্শারফ হোসেন, জহুরুল ইসলাম সরকার ও উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী আসিফ আইনাল।
এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারি কমিশনার ভুমি ফতেমা-তুজ জোহরা, উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম সম্পাদক মকদ্দুছ আলী, নতুনবাজার বণিক সমিতির সভাপতি শামিম আহমদ, কোষাধ্যক্ষ নবীন সোহেল ও কমিশনার নাইম আহমদসহ কয়েকজন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে পাউবো কর্তমকর্তারা কাজে কিছুটা অনিয়মের কথা স্বীকার করেন। তারা বলেন বর্তমান ১কিলোমিটার নদীর পূর্ব তীরের অংশে মাটি কাটা শুরু করা হবে। সেই সাথে লাল পতাকা টানিয়ে সীমানা নির্ধারণের মাধ্যমে খনন কাজ করা হবে বলে জানান।
তবে খনন কাজে কোনো প্রকার অনিয়ম হয়নি বলে ঠিকাদার মুসলিম মুল্লা দাবি করেন।