শনিবার ● ২১ এপ্রিল ২০১৮
প্রথম পাতা » গাজিপুর » গাজীপুরের নয়তনের ৯০ বছর, আর কত বয়স হলে পাবে বয়স্ক বিধবা ভাতার কার্ড
গাজীপুরের নয়তনের ৯০ বছর, আর কত বয়স হলে পাবে বয়স্ক বিধবা ভাতার কার্ড
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: (৮ বৈশাখ ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সকাল ১০.৫৪মি.) সংগ্রামের সময় আমার স্বামী প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। সেই থেকে তিন মেয়ে নিয়ে জীবন যুদ্ধে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি আজ পর্যন্ত। বলছিলেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নয়তন নেছা।
৯০ বছর বয়সেও পাননি বয়স্ক কিংবা বিধবা ভাতার কার্ড।
উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের ধনুয়া নগরহাওলা গ্রামের বড়চালা পাড়ার মৃত রবি উল্লাহর স্ত্রী নয়তন নেছা, জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী তার জন্ম ১৯২৮ সালে, বর্তমানে তাঁর বয়স ৯০ বছর।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন বাস্তবে তার বয়স আরো বেশি হবে। ঠিক কত বছর পূর্বে যে তাঁর স্বামী মারা গেছেন সে হিসেব মনে নেই। তবে অনুমান করে বলতে পারেন, প্রায় ৪৭বছর আগে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত কারণে তার স্বামী মারা গেছেন।
স্বামী মারা যাওয়ার পর তিন মেয়ে নিয়ে নয়তন নেছা মানুষের বাড়িতে কাজ করে, কখনও মানুষের কাছে চেয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এরই মধ্যে তিন মেয়েকে বিয়ে দেন এক মেয়ে ময়ফল নেছা দুই সন্তান রেখে ৫বছর আগে মারা যান। উপজেলার ধনুয়া নগরহাওলা গ্রামের বড়চালা পাড়ার দুর্বিসহ জীবনযাপন শুরু করেন। কিন্তু, মেয়ে জয়তন নেছা স্থানীয় আর.একে সিরামিক্স কারখানায় ডেইলি লেবারের কাজ করে তার বরন পোষন করছেন। একপর্যায়ে তার হতদরিদ্র মেয়ের বাড়ীতে এসে আশ্রয় নেন নয়তন নেছা। মেয়ের সংসারে এক প্রকার আশ্রিতার মতো বসবাস করতে হচ্ছে তাঁকে। নিজেও ভুগছেন বার্ধক্যজনিত রোগে। বয়সের ভারে কর্মশক্তি হারানো অনেকটা অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে এই বৃদ্ধার। প্রতিদিন অন্যের হাতের দিকে চেয়ে থাকতে হয় তাকে। এক বেলা খাবার জুটলেও দু’বেলা না খেয়ে থাকতে হয়। ঈদের মতো বড় উৎসবের তাঁর একটু খোঁজ নেয়ার কেউ নেই। অথচ এখনও তার কপালে জোটেনি বয়স্ক ভাতা কিংবা বিধবা ভাতার কার্ড। বেঁচে থাকার জন্য তিনি একটি কার্ড চান।
বৃদ্ধার প্রশ্ন- “আর কত বয়স হলে, বয়স্ক ভাতার কার্ড পাবো?” খেয়ে পরে বেঁচে থাকার জন্য শুধু একটা বয়স্ক ভাতা অথবা বিধবা ভাতার কার্ড চাই।
গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বারদের কাছে অনেকবার ধর্ণা দিয়েছেন একটি বয়স্ক কিংবা বিধবা ভাতার কার্ডের জন্য। কিন্তু তিনি তা পাননি। বরং নানা আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে বার বার ঘুড়ানো হয়েছে বলে জানান।
এই বৃদ্ধা আক্ষেপ করে বলেন, এখন আমি অসুস্থ, চলতে পারি না। যদি একটি বিধবা অথবা বয়স্ক ভাতার কার্ড দেয়া হয়, তাহলে যতদিন বেঁচে থাকবো, কোন মতে চলতে পারব।
গতকাল ২০ এপ্রিল শুক্রবার সরেজমিনে বৃদ্ধার বাড়ী গিয়ে দেখা যায়, রাস্তাবিহীন মেয়ের বাড়ির পেছনে একটি ছোট জলাশয়ের পাশে জীর্ণশীর্ন একটি টিন ছাপড়ায় তার বসবাস। ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে জগ, থালা-বাসন। একটি চুলা থাকলেও দীর্ঘদিন চুলোয় যে আগুন ধরেনি, তা দেখলেই বোঝা যায়। আসবাব বলতে রয়েছে একটি চৌকি আর এক কোণে রয়েছে কিছু লাকড়ী। ঘরের ভেতরেই গজে উঠছে বিভিন্ন ধরনের আগাছা। একরকম বসবাসের অযোগ্য ঘরেই চলছে নয়তন নেছার বসবাস।
গাজীপুর ইউপির ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুল আজিজ বলেন, আমি এই বার প্রথম ওয়ার্ড মেম্বার হয়েছি, আগেও অনেক মেম্বারই ছিল কিন্তু কেউই এই মহিলার খোঁজ খবর রাখেনি, আমি এই মহিলার খবর পাওয়ার পর চার জনের নামে চাউলের কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। বয়স্ক ভাতা অথবা বিধবা ভাতার এজন্য কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করেননি। তবে যোগাযোগ করলে অবশ্যই ভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করে দিবো।
এ ব্যাপারে শ্রীপুর উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মনজুরুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যে তালিকা পাঠানো হয় তার ভিত্তিতেই আমরা কার্ড সরবরাহ করে থাকি। এর বাইরেও বয়স্ক ভাতা বা বিধবা ভাতার কার্ড পাওয়ার যোগ্য কেউ থাকে তাহলে আমি ব্যবস্থা করে দিবো।