রবিবার ● ২২ এপ্রিল ২০১৮
প্রথম পাতা » কৃষি » রক্তদহ বিলে অপরিকল্পিত ক্রসড্যামের কারণে তলিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার বিঘা জমির পাকা ইরি-বোরো ধান
রক্তদহ বিলে অপরিকল্পিত ক্রসড্যামের কারণে তলিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার বিঘা জমির পাকা ইরি-বোরো ধান
নওগাঁ প্রতিনিধি :: (১০ বৈশাখ ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৮.১১মি.) নওগাঁর রাণীনগর ও পার্শ্ববর্তি বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা এই দুই উপজেলার সীমানায় অবস্থিত শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বিল রক্তদহ বিল। এই রক্তদহ বিলের প্রধান শাখা খালে বরেন্দ্র বহুমূখি উন্নয়ন প্রকল্প কর্তৃপক্ষে’র নির্মিত অপরিকল্পিত দুইটি ক্রসড্যামের কারণে এবছরও তলিয়ে যাচ্ছে বিলের মধ্যে রোপন করা প্রায় এক হাজার একর জমির পাকা-আধাপাকা ইরি-বোরো ধান।
ধান তলিয়ে যাওয়ার এই অবস্থা আরও চরম আকার ধারন করেছে দুইটি ক্রসড্রাম নির্মাণের পর থেকে। এ বিষয়টি নিয়ে কৃষকরা নানা ভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে আসলেও কোন ফল হয়নি। তাই স্বপ্নের কষ্টে অর্জিত সোনালী ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকের মাথায় হাত উঠেছে। কৃষকরা এখন তাদের ধান পুরোটাই ঘরে উঠাতে পারবে কিনা এই চিন্তায় চিন্তিত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক দিনের বৃষ্টির পানি কয়েকটি শাখা খাল দিয়ে এসে জমা হয়েছে রক্তদহ বিলে। কিন্তু বিলে জমা হওয়া পানি আত্রাই নদীতে যেতে পারছে না নিস্কাশন পথের রাণীনগর উপজেলা অংশে শাখা খালে দুইটি স্থানে ক্রসড্যাম থাকার কারণে। জানা গেছে, বৃষ্টির পানি ধরে রেখে আপদকালিন সময়ে সেচ দেয়ার জন্য ২০১৪ সালে রক্তদহ বিলের উজানে সান্তাহার ইউনিয়নের দমদমা গ্রামের পাশে এবং ভাটি’র দিকে রাণীনগর উপজেলায় তিলাবধু ও আকনা বাঁশবাড়িয়া নামক দুই স্থানে অপরিকল্পিত ভাবে ক্রসড্যাম নির্মাণ করে নওগাঁ বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। এতে করে ইরি-বোরো আবাদ মৌসুমের শেষ দিকে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।
গত কয়েক দিনে জেলার রাণীনগর উপজেলাসহ আশ পাশের এলাকায় প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। সেই বর্ষনের পানি উজান থেকে নেমে বিভিন্ন খাল দিয়ে জমতে থাকে রক্তদহ বিল ও বিলের চার পাশের ইরি-বোরো আবাদি মাঠে। কিন্তু পানি স্বাভাবিক ভাবে নিষ্কাশন হতে পারছে না। এর কারণে রক্তদহ বিলের রাণীনগর উপজেলার বোদলা, পালসা, তেবাড়িয়া, বিশিয়া এবং আদমদীঘি উপজেলা সদর ইউনিয়নের করজবাড়ি, দক্ষিন গনিপুর, কদমা, সান্তাহার ইউনিয়নের সান্দিড়া, দমদমা, কাশিপুর, ছাতনি, ঢেকড়াসহ অন্তত ১৫ গ্রামের প্রায় এক হাজার একর জমির পাকা আধাপাকা ইরি-বোরো ধান বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়ে হুমকির মুখের পড়েছে।
বোদলা, পালশা, তেবাড়িয়া গ্রামের কৃষক হুরমত আলী, ইয়াকুব আলীসহ কয়েক জন কৃষক জানান, অপরিকল্পিত ক্রসড্যামের কারণেই গত চার বছর ধরে আমাদের এই সমস্যা। এ বিষয়ে আমরা আদমদীঘি ও রাণীনগর উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছি। কিন্তু কোন প্রতিকার পায়নি।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ এসএম গোলাম সারওয়ার বলেন রক্তদহ বিলের ভাটিতে বরেন্দ্র প্রকল্পের অপরিকল্পিত ক্রসড্যামের কারণে জলাবদ্ধতায় উঠতি ইরি-বোরো ধান জলমগ্ন হয়ে হুমকির মুখে পড়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে রাজশাহী বরেন্দ্র বহুমূখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারি প্রকৌশলী রেজাউল ইসলাম বলেন, ক্রসড্রামের কারণে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার কোন সুযোগ নেই। কারণ ক্রসড্রামের আরএল বিল এলাকার আরএল এর সমান। তিনি আরও বলেন, আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধি, স্লুইচগেটের সমস্যা এবং কচুরিপানার কারণে জলবদ্ধতার সৃষ্টি হতে পারে। এ বিষয়ে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের বিভাগীয় পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে।