শনিবার ● ২৮ এপ্রিল ২০১৮
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » সমালোচনা : পুস্তকের নাম-বিজুফুল
সমালোচনা : পুস্তকের নাম-বিজুফুল
১৪২৫ বঙ্গাব্দ। বাঙলা নববর্ষ উপলক্ষে সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম এর ব্যবস্থাপনায় “বিজুফুল” নামে পুস্তক প্রকাশিত হয়ে একটি সৌজন্য কপি পেলাম। এটি পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত প্রথম জাতীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল। সম্পাদনায় এবং অঙ্গসজ্জায় বাবু নির্মল বড়ুয়া মিলনকে ধন্যবাদ জানাই তার কর্মদক্ষতা, উদ্যম ও সাহসিকতার জন্য। ২৮ শে চৈত্র ১৪২৫ বঙ্গাব্দ, ১১ এপ্রিল ২০১৮খ্রিঃ পুস্তকটি আনুষ্ঠানিকভাবে মোড়ক উন্মোচন করেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলার নবাগত জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ মহোদয়। স্থান: জেলা প্রশাসক অফিস কক্ষ। সময়: সকাল ০৯টা ৩০ মিনিট। বইটি হাতে নিয়ে মনোনিবেশ করলাম বিঝুকে বিজু লেখার জন্য। তবে ভুল বা দোষের নয়, অনেকেই বানানটি বিজু লিখে থাকেন। জুঁই চাকমার তোলা দূর বনের দুষ্প্রাপ্য বিজু ফুলের ছবি বইয়ের মলাটকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। দুষ্প্রাপ্য এই বিঝুফুল পাহাড়ীয়া জঙ্গলে জন্মে। চৈত্রের শেষে একবারই ফোটে। চাকমাদের ভাষায় বিঝুফুল তঞ্চঙ্গ্যাদের ভাষায় বিষুফুল।
বাবু নির্মল বড়ুয়া মিলন তার সম্পাদকীয় পাতায় প্রিয় পাঠকদের উদ্দেশ্যে ব্যক্ত করেছেন,-এই প্রকাশনা যদি পাঠক হৃদয়ে বিন্দু পরিমাণও স্থান পায় আমাদের প্রচেষ্টা সার্থক হবে। তার এই উক্তি বাস্তবতা ও প্রীতিজ্ঞাপক রয়েছে। কিন্তু গল্প কবিতা লেখা, বই পড়া,বই কেনা আর লেখকের লেখার মান মূল্যায়ন করবেন এমন মননশীলতা ব্যাক্তি কোথায় আছে ? পুস্তকে আরো উল্লেখ রয়েছে,- “বিজু বা বৈসাবী” সকল সম্প্রদায়ের মিলনমেলা এবং শান্তি সমৃদ্ধির জন্য। আসলে বিজু বা বৈসাবী একই অর্থে এক শব্দ নয়।বৈসাবী একটি অজ্ঞেয়, পরিহাসমুলক ও প্রতিবাদ শব্দ। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে বা কাপ্তাই বাঁধ দেয়ার আগে বৈসাবী, গজ্যাপজ্যো বিঝু নামের এমন তাচ্ছিল্য শব্দ ছিলনা।
পুস্তকের ভিতরের পাতায় রাঙামাটি বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. প্রদানেন্দু বিকাশ চাকমা, জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ, রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. টিপু সুলতান, রাঙামাটি সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ জাফর আহমদ, উপ-বন সংরক্ষক বিভাগীয় বন কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অরুন কান্তি চাকমাসহ মোট মোট ১১ জন পদস্থ ব্যক্তি সাফল্য কামনা করে শুভেচ্ছা বাণী দিয়েছিলেন। ভিতরের পাতায় সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল (তিনি মুক্তমঞ্চে ৩রা মার্চ ২০১৮ ফয়জুর রহমানের ছুরিকাঘাতে আহত হন) এর লেখা-“ শিক্ষকদের মান অপমান” ছাপা হয়। পৃষ্ঠা- ১৪। সংবিধান প্রণেতা, বিশিষ্ট আইনজীবি ও রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেনের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা ও সংসদ সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা সংসদে পাশাপাশি বসা এবং বঙ্গবন্ধুর সাথে লারমার বৈঠক সম্পর্কে বিজুফুল পুস্তকে তুলে ধরেন। পৃষ্ঠা-১৯। লেখক সোমনাথ সেন গুপ্তের মাষ্টারদা সুর্য্য সেনের লেখা পড়ে মনে পড়ল ব্রিটিশ বিরোধী, চট্টগ্রাম অস্ত্রগার লুন্ঠন, বীরকণ্যা প্রীতিলতা, অর্ধেন্দু দস্তিদারের কথা। পুস্তকের শেষাংশে রাঙামাটি পৌরসভা এর অনিন্দিত মেয়র আকবর হোসের চৌধুরী তার কর্মোদ্যমের কিছু তথ্য সমূহ। মলাটের পেছনের পাতায় ছবি- চাকমা জাতির পরিচয় বৃত্তান্ত। ছয়টি ছবির মধ্যে তিনটি চাকমা পরিচয় বহন করেনা। চাকমাদের নিজস্ব কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও পোষাকের সাথে ছবির সদৃশ নেই। বইটি প্রয়োজনীয় তথ্য সমৃদ্ধ। একবার হাতে নিয়ে পড়ুন।
১৪২৫ বঙ্গাব্দ। বাঙলা শুভ নববর্ষ উপলক্ষে “বিজুফুল” প্রকাশনার নৈপুণ্যতা, পার্বত্য অঞ্চলে আপনি প্রশংসার জ্যেষ্ঠতায় অধিষ্ঠিত। ধন্যবাদ নির্মল বড়ুয়া মিলন বাবুকে।
(রতিকান্ত তঞ্চঙ্গ্যা)
প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক
চারুকলা একাডেমী, রাঙামাটি।