সোমবার ● ৩০ এপ্রিল ২০১৮
প্রথম পাতা » গাজিপুর » আধুনিক নগর গড়ার অঙ্গীকার গাজীপুরের ৭ মেয়র প্রার্থীর
আধুনিক নগর গড়ার অঙ্গীকার গাজীপুরের ৭ মেয়র প্রার্থীর
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: (১৭ বৈশাখ ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১১.৫৫মি.) গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সাত মেয়র প্রার্থী এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে আধুনিক ও পরিকল্পিত নগর গড়ার অঙ্গীকার করেছেন।
আজ ৩০ এপ্রিল সোমবার গাজীপুর জেলা শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠানে প্রার্থীরা এ অঙ্গীকার করেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সাত মেয়র প্রার্থী এক মঞ্চে বসে এলাকার উন্নয়নে নিজেদের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন এবং উপস্থিত ভোটারদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুজনের গাজীপুর মহানগর শাখার সভাপতি মো. মনিরুল ইসলাম রাজিব। সুজনের কেন্দ্রীয় সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় এতে অংশ নেন সাত মেয়র প্রার্থী যথাক্রমে আওয়ামী লীগের মো. জাহাঙ্গীর আলম (নৌকা), বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকার (ধানের শীষ), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কাজী মো. রুহুল আমীন (কাস্তে), ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা ফজলুর রহমান (মিনার), ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের এডভোকেট জালাল উদ্দিন (মোমবাতি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. নাসির উদ্দিন (হাত পাখা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমেদ টেবিল ঘড়ি)।
অনুষ্ঠানে আয়োজকদের পক্ষ থেকে দেয়া ১৩ দফা অঙ্গীকারনামা উপস্থিত জনতার সামনে পড়ে শোনান সুজনের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মুর্শিকুলী আহমদ শিমুল। পরে প্রার্থীরা অঙ্গীকার নামায় স্বাক্ষর করেন। এরপর প্রার্থীরা জনতার সরাসরি প্রশ্নের জাবাব দেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সুজনের জেলা সম্পাদক মো. রুহুল আমিন সজিব। সুজনের কেন্দ্রীয় প্রধান সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার অনুষ্ঠানে সহ-সঞ্চালক ছিলেন।
পুরো অনুষ্ঠানে মেয়র প্রার্থীদের প্রশ্নোত্তর পর্ব দেখতে প্রচুর জনসমাগম হয়। উপস্থিত মেয়র প্রার্থীদের প্রতিজনকে তিনটি করে প্রশ্ন করা হয় দর্শকসারি থেকে। তারা সে সব প্রশ্নের জবাব দেন।
এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জাপান ও চীনের সহায়তায় গাজীপুর সিটির ৫৭টি ওয়ার্ডের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ৫৭টি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছি। স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় সরকারের সমন্বয়ে জনগণের সহায়তায় আমি নির্বাচিত হলে এসব মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করব। আমি সিটির অভ্যন্তরে পাঁচটি অর্থনৈতিক জোন ও শ্রমিকদের বাসস্থানের জন্য আটটি বসবাসের জোন তৈরি করব।
তিনি আরও বলেন, আমি রাজনীতি করি মানুষের জন্য। আমি সবার জন্য গাজীপুর সিটিকে একটি পরিকল্পিত আধুনিক নগর হিসেবে গড়তে চাই। শিক্ষা ফাউন্ডেশন গঠন করে বাংলা, ইংরেজি, আরবি ও কওমি শিক্ষাকে প্রধান্য দিয়ে সবার জন্য শিক্ষা বিস্তারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছি। ২২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। আমি ফুটপাতসহ সুষ্ঠু ড্রেনেজ নির্মাণ করে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন করব। গাজীপুর সিটিকে একটি ডাইনামিক মডেল শহর গড়তে সবার সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন। আমি এ জন্য অপজিট পার্টির সহযোগিতা কামনা করি।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, স্থানীয় সরকারের ওপর কেন্দ্রীয় সরকার হস্তক্ষেপ করলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। বর্তমান মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানকে বিভিন্ন সময়ে কারাগারে রাখা হয়েছে। তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তিনি আশানুযায়ী উন্নয়ন করতে পারেন নি। গাজীপুর একটি শিল্পসমৃদ্ধ শ্রমিক এলাকা। গাজীপুর সিটিকে উন্নয়ন করতে হলে পরিকল্পিতভাবে প্ল্যান মাফিক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাউন্সিলরদের সহযোগিতা নিয়ে আমি উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করব।
তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে টঙ্গী পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলাম। সে সময়ে আমি আস্তরিকভাবে পৌরসভার উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করেছি।
ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী ফজলুর রহমান বলেন, ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়া ও তাদের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব সরকার ও প্রশাসনের।
তিনি শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে বলেন, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা দিয়ে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গড়া সম্ভব নয়। তাই তিনি নির্বাচিত হলে বর্তমান শিক্ষার পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষা সংযোজন করবেন।
ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মো. জালাল উদ্দিন বলেন, আধুনিক ও কর্মসংস্থানমুখী শিক্ষাব্যবস্থা গ্রহণ ও তথ্যপ্রযুক্তির নগরী গড়তে আইটি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিব এবং যুব সমাজকে মাদকের কবল থেকে রক্ষা করতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পুলিশ, প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একত্রে বসে কাজ করব।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী নাসির উদ্দিন জানান, তিনি নির্বাচিত হলে নগরীর গ্যাস সমস্যা সমাধানের উদ্যোগে নেবেন। মাদক উদ্ধারের নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানি বন্ধের পদক্ষেপ নিবেন। জঙ্গিবাদ রুখবেন।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মেয়র প্রার্থী কাজী মো. রুহুল আমীন জানান, তিনি যানজটমুক্ত, পরিচ্ছন্ন আধুনিক শহর গড়ে তুলবেন। শ্রমিকদের কর্মসংস্থান ও তাদের সুযোগ সুবিধাবৃদ্ধিসহ তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমদ জানান, যানজট নিরসন ও নগরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে সিটি কর্পোরেশনের সকল রাস্তা দ্বিগুন প্রশস্ত ও পর্যাপ্ত নতুন রাস্তা তৈরি করবেন। তিনি দুর্নীতি করবেন না। নির্বাচনের আগে হলফনামায় যে সম্পদ ঘোষণা করেছেন নির্বাচিত হলে দায়িত্বগ্রহণ শেষেও হলফনামার মাধ্যমে সম্পদের হিসাব নগরবাসীর সামনে পেশ করে যাবেন। তিনি ২-৩ কাঠার ছোট ছোট বাড়ির মালিকদের ট্যাক্স মওকুফ করবেন।