বৃহস্পতিবার ● ৩ মে ২০১৮
প্রথম পাতা » করোনা আপডেট » জনস্বাস্থ্য ও টেকসই উন্নয়নের জন্য তামাক কর
জনস্বাস্থ্য ও টেকসই উন্নয়নের জন্য তামাক কর
ঢাকা প্রতিনিধি :: (২০ বৈশাখ ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১০.৪১মি.) আজ ৩ মে বৃহস্পতিবার, জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স রুম-৩ এ প্রজ্ঞা ও অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স-আত্মা’র উদ্যোগে তামাকবিরোধী সংগঠন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, এসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট (এসিডি), ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল একশন (ইপসা) এবং তামাকবিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) সম্মিলিতভাবে ‘কেমন তামাক কর চাই’ শীর্ষক প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব:) আব্দুল মালিক সভাপতিত্ব করেন। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন মর্তুজা হায়দার লিটন, চিফ ক্রাইম করেসপন্ডেন্ট, বিডিনিউজ ২৪.কম এবং কনভেনর, আত্মা; শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ কান্ট্রি এডভাইজার, ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস; ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক, ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা; ডা. মাহফুজুর রহমান ভুঁঞা, গ্রান্টস ম্যানেজার, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিড্স (সিটিএফকে); অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার, দি ইউনিয়ন এবং এবিএম জুবায়ের, নির্বাহী পরিচালক, প্রজ্ঞা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এটিএন বাংলার প্রধান প্রতিবেদক ও এন্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা’র কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ।
সংবাদ সম্মেলনে ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, তামাকপণ্যে করারোপের ক্ষেত্রে রাজস্ব নয় বরং জনস্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে তামাকপণ্যের দাম অনেক বেশি, সুতরাং কর বাড়ালে সিগারেটের চোরাচালান বৃদ্ধির যে যুক্তি তামাক কোম্পানিগুলো দিচ্ছে তা সম্পূর্ণ অমূলক। জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব:) আব্দুল মালিক বলেন, ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন করতে হলে করারোপের মাধ্যমে তামাকপণ্যের দাম বাড়িয়ে এর ব্যবহার কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশে তামাকপণ্যের দাম সস্তা এবং তা দিন দিন আরও সস্তা হচ্ছে। এছাড়াও বিদ্যমান তামাক কর-কাঠামো অত্যন্ত জটিল হওয়ায় কর ফাঁকির সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে এবং একইসাথে তামাকপণ্যের ধরন ও ব্র্যান্ডভেদে ব্যাপক মূল্য পার্থক্য থাকায় ভোক্তা তুলনামূলক সস্তা ব্র্যান্ড/তামাকপণ্য ক্রয় করতে পারছে, যা তামাক করের কার্যকারিতা হ্রাস করছে। তাই, সংবাদ সম্মেলনে আগামী ২০১৮-১৯ বাজেটে নিম্নোক্ত প্রস্তাবনা এবং সুপারিশসমূহ তুলে ধরা হয়:
বাজেট প্রস্তাব:
১. সিগারেটের মূল্যস্তর সংখ্যা দুইটিতে ( নিম্ন এবং উচ্চ) নামিয়ে আনা: নিম্নস্তরের সিগারেটে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভাজন তুলে দেওয়া এবং উচ্চ ও প্রিমিয়াম স্তরকে একত্রিত করে একটি মূল্যস্তরে (উচ্চস্তর) নিয়ে আসা; নিম্নস্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের সর্বনিম্ন মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং উচ্চস্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের সর্বনিম্ন মূল্য ১০০ টাকা নির্ধারণ করে ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; সকল ক্ষেত্রে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটে ৫ টাকা সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করা;
২. ফিল্টার এবং নন-ফিল্টার বিভাজন বাতিল করে প্রতি ২৫ শলাকা বিড়ির সর্বনিম্ন মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ: বিড়ির ফিল্টার এবং নন-ফিল্টার বিভাজন বাতিল করা; প্রতি ২৫ শলাকা বিড়ির সর্বনিম্ন মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫% সম্পূরক শুল্ক এবং ৬ টাকা সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করা;
৩. ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের (জর্দা ও গুল) এক্স-ফ্যাক্টরি প্রাইস প্রথা বিলুপ্তকরণ: এক্স-ফ্যাক্টরি প্রাইস প্রথা বিলুপ্ত করে সিগারেট ও বিড়ির ন্যায় খুচরা মূল্যের ভিত্তিতে করারোপ করা; প্রতি ২০ গ্রাম ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের সর্বনিম্ন মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫% সম্পূরক শুল্ক এবং ১০ টাকা সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করা;
৪. সকল তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য থাকবে ।
উল্লিখিত প্রস্তাবসমূহ গ্রহণ করা হলে প্রায় ৬.৪২ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী (৩.০৭ মিলিয়ন সিগারেট ধূমপায়ী এবং ৩.৩৫ মিলিয়ন বিড়ি ধূমপায়ী) ধূমপান ছেড়ে দিতে উৎসাহিত হবে। সিগারেটের ব্যবহার ২.৭ শতাংশ এবং বিড়ির ব্যবহার ২.৯ শতাংশ হ্রাস পাবে। দীর্ঘমেয়াদে ২.০১ মিলিয়ন বর্তমান ধূমপায়ীর অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে (১.০৮ মিলিয়ন সিগারেট ধূমপায়ী এবং ০.৯৪ মিলিয়ন বিড়ি ধূমপায়ী) এবং ৭৫ থেকে ১০০ বিলিয়ন টাকা (অথবা জিডিপি’র ০.৪ শতাংশ) অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে।
সুপারিশমালা
১. দীর্ঘমেয়াদে তামাকপণ্যের উপর করারোপে এড ভ্যালোরেম প্রথার পরিবর্তে কেবল সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ ট্যাক্স পদ্ধতির প্রচলন করতে হবে।
২. তামাককর ব্যবস্থা সহজ করতে:
- পর্যায়ক্রমে সকল তামাকপণ্য অভিন্ন পরিমাণে (শলাকা সংখ্যা এবং ওজন) প্যাকেট/কৌটায় বাজারজাত করতে হবে;
- তামাকপণ্যের মধ্যে কর এবং মূল্য পার্থক্য কমিয়ে আনা;
৩. আয় বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির সাথে সঙ্গতি রেখে সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ ট্যাক্স নিয়মিত বৃদ্ধি করা;
- একটি সহজ এবং কার্যকরী তামাককর নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন (৫ বছর মেয়াদি) করা;
৪. সকল প্রকার ই-সিগারেট এবং হিট-নট-বার্ন (আইকিউওএস) তামাকপণ্যের উৎপাদন, আমদানি এবং বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা।
৫. আদায়কৃত অতিরিক্ত রাজস্ব থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রশিক্ষণসহ অসংক্রামক রোগ মোকাবেলায় অর্থায়ন করা। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বৃদ্ধি (২%) একটি অন্যতম কার্যকর উদ্যোগ হতে পারে।