শুক্রবার ● ৪ মে ২০১৮
প্রথম পাতা » কক্সবাজার » উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের কারণে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি
উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের কারণে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি
উখিয়া প্রতিনিধি :: (২১ বৈশাখ ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১০.২২মি.) উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের কারণে দিন দিন আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটছে। রোহিঙ্গা অধ্যূষিত পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরীর কারণে বিশাল জনপদ এখন আতংকের নগরীতে পরিণত হচ্ছে এমনটি অভিযোগ করেছেন একাধিক ইউপি সদস্য ও এলাকাবাসী। প্রতিদিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুন-খারাবীর ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে থাইংখালী স্টেশনসহ পুরো এলাকায়। যার ফলে বিশৃঙ্খল হয়ে উঠছে উখিয়ার শান্তিপ্রিয় এলাকার মানুষের জীবনযাত্রায়।
গত ২ মে শবে বরাতের রাতে থাইংখালী তাজনিমার খোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় রোহিঙ্গা যুবকদের ইয়াবা সেবনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় গ্রামবাসী, রোহিঙ্গা ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমূখী সংঘর্ষের ঘটনায় ওই দিন পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ঘটনার খবর স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে দেখা দেয় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি। এ ঘটনায় পুলিশ দফায় ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও হামলায় হাত থেকে রক্ষা পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এতে আহত ৩ পুলিশ সদস্যসহ উভয়পক্ষের ২০জন।
এ সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রামবাসীর মাঝে উসকানী দাতা হিসেবে পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরীকে প্রধান আসামী করে উখিয়া থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
এই জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে স্থানীয়দের উসকে দিয়ে সংঘটিত ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে আসামী করা হয়েছে মামলার বাদী উখিয়া থানার উপ-পরিদর্শক মিল্টন দে বিপিএম জানান। পুলিশের উপর হামলা ও কর্তব্য কাজে বাঁধা প্রদানের অভিযোগে এই মামলায় অজ্ঞাতনামা ৩শ জনকে আসামী করা হয়েছে। মামলাটি উখিয়া থানায় রেকর্ড হওয়ার পর স্থানীয় বাসিন্দারা গ্রেপ্তার ও পুলিশী হয়রানির আতংকে গ্রামছাড়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে মামলার প্রধান আসামী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ হন্য হয়ে খুঁজছে। ইতোমধ্যে থাইংখালীসহ সম্ভাব্য স্থানে তাকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান পরিচালিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল খায়ের।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পালংখালী ১নং ওয়ার্ড ইউ.পি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান-১ নুরুল আবছার চৌধুরী জানান, বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী সব সময় এলাকায় অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে থাকে। রোহিঙ্গাদের সাথে গ্রামবাসীকে উসকে দিয়ে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় চেয়ারম্যান জড়িত। অতীতের রেকর্ড এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে খুবই খারাপ। রোহিঙ্গা আসার পর থেকে তিনি অবৈধ পন্থায় লোপাট করার জন্য এনজিওদের উপর হামলা ও এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে থাইংখালী এলাকায় সব সময় আধিপত্য বিস্তার করছে। ইতিপূর্বে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি গত সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কার প্রচারণার গাড়ী ভাংচুর করে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় প্রকাশ্যে থাইংখালী স্টেশনে। এরপর ২০১৫ সালে ৬ মার্চ বালুখালী বিজিবি সদস্যদের সাথে গ্রামবাসীকে লেলিয়ে দিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটায়। বিজিবি’র সুবেদার মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হককে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় মামলা রুজু করা হয়। পরবর্তীতে বিজিবি’র উপর হামলার ঘটনায় চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করে উখিয়া থানা পুলিশ। এছাড়াও এই চেয়ারম্যান মোটা অংকের চাঁদা না পেয়ে আওয়ামীলীগ নেতা শামশুল আলমকে থাইংখালী স্টেশনে তার নেতৃত্বে ইয়াবা গডফাদাররা সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে মারাত্মক আহত করে।
ইউপি সদস্য আবছার আরো বলেন, চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী একজন সরকারি তালিকাভূক্ত রাজাকারের সন্তান। তার পিতা সুলতান চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের সময় থাইংখালী শান্তিবাহিনীর সভাপতি ছিলেন। এধরণের রেকর্ড প্রশাসনসহ আমাদের কাছে আছে। চেয়ারম্যান রোহিঙ্গাদের নিয়ে সব সময় অরাজকতা সৃষ্টির মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির ঘটনা ঘটাচ্ছে। এতে অশান্ত হয়ে পড়েছে পালংখালীর শান্ত জনপদ। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে সে।
এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজারের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মমতাজ উদ্দিন বলেন, উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। তৎমধ্যে উখিয়া থানার মামলা নং- ৩১, তারিখ- ১৮/১২/২০১৪ইং, জি.আর মামলা নং- ২৮৮/২০১৩ইং, স্পেশাল ট্রাইবুন্যাল- ৭৪/২০১৪ইং, অভিযোগ পত্র ৪২(১) ধারা-১৯৯৪ সনের ১৫(৩) চার্জশীটের ১নং আসামী। যা স্পেশাল ট্রাইবুন্যালে বিচারাধীন রয়েছে। একই মামলার উদ্ভুত অভিযোগ পত্র নং- ৪২, ধারা- ১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩৪১/ ৩২৩/ ৪৩৬/৪২৭/৫০৬ প্যানেল কোর্ট বর্তমানে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
কক্সবাজার থানার মামলা নং- ২৭, তারিখ- ১১/০৬/২০১০ইং, এস.টি মামলা নং- ৬৩৯/২০১২ইং। ধারা- ৩৮৫/৩৬৫/৩৪ প্যানেল কোর্ট। বর্তমানে যুগ্ম দায়রা জজ ১ম আদালতে বিচারাধীন আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পালংখালী ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সুলতান আহমদ বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর ২২ মাস যাবৎ ইউনিয়ন পরিষদে কোন মিটিং হয়নি। চেয়ারম্যান পরিষদের পক্ষ থেকে এলাকার উন্নয়নের জন্য কোন প্রকল্পও দেয়নি। এমনকি একটি ইটের কংক্রিটও দেয়া হয়নি। যার ফলে আমার ওয়ার্ডের ১২ হাজার মানুষ উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে। চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিনের বিমাতা সুলভ আচরণ ও বৈষম্যের শিকার হয়েছে আমার ওয়ার্ডের ১২শ পরিবারের ৩ হাজার ভোটার।
ইউপি সদস্য নুরুল হক বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে কোন দিন ইউনিয়ন পরিষদের মিটিংয়ে তাকে ডাকা হয়নি। কোন উন্নয়ন করতে পারিনি এলাকায়। চেয়ারম্যান আমাকে ঠকাচ্ছে এই বিচার আমি আল্লাহকে দিয়েছি। শুধু এনজিও’র কিছু মিটিংয়ে আমাকে মাঝে-মধ্যে ডাকা হয়। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে যে সব প্রকল্প পাওয়া যায় তা চেয়ারম্যান ঠিকাদার দিয়ে করায়। যার কারণে আমি এলাকার উন্নয়ন করতে ব্যর্থ হয়েছি।
৮নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য কামাল উদ্দিন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে কোন প্রকল্প পায়নি। ফলে এলাকায় কোন ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারিনি। ইউনিয়ন পরিষদের মিটিংয়ের কোন কার্যক্রম আমি দেখিনি। ফলে কোন মিটিংয়ে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। চেয়ারম্যান কি করে তা আমি বলতে পারবো না।
এ রিপোর্ট লেখাকালীন সময় ৮টা ৫০মিনিটে চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী’র বক্তব্য জানার জন্য তাঁর ব্যবহৃত মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই মুহুর্তে বাড়িতে নেই জানান তাঁর মেয়ে।