শিরোনাম:
●   ১৪৪৬ হিজরী রমজানের সাহ্রি ও ইফতারের সময়সূচি ●   ফটিকছড়ি উপজেলা প্রেসক্লাবের বার্ষিক বনভোজন সম্পন্ন ●   ঈশ্বরগঞ্জে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার-৮ ●   খাগড়াছড়িতে প্রয়াত সাংবাদিক মকসুদ আহমেদ’র শোকসভা ●   পিসিপি’র খাগড়াছড়ি জেলা শাখার ২০তম কাউন্সিলে ১৫ সদস্যের নতুন কমিটি ●   মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে মধ্যরাত পর্যন্ত শাহবাগে চললো বহু ভাষার লহরী ●   রমজান মাসে বাজারে সিন্ডিকেট করে বেআইনি ভাবে মুনাফা না করতে পারে : বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন ●   শোকর-এ মওলা মনজিল এর ১১ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী সম্পন্ন ●   জেলার জনসভায় অংশগ্রহণ না করে মশাল মিছিল ●   উচ্চ রক্তচাপ মোকাবেলায় বাজেট বৃদ্ধি জরুরি ●   মিরসরাইয়ে টি-১০ লং পিচ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন ব্রাদার্স এলিভেন ●   কারও উপর দায় চাপিয়ে সরকারের পার পাওয়ার সুযোগ নেই : সাইফুল হক ●   গাজীপুরে চট্টগ্রাম সমিতির ‘মেজবান ও চট্টলা উৎসব’ ●   জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে দেয়া হবেনো : জয়নুল আবেদীন ●   বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদেরকে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে : মেয়র শাহাদাত হোসেন ●   ফটিকছড়িতে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু ●   রাউজানে সন্ত্রাসীদের গুলিতে ডেকোরেশন ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ ●   একুশের প্রথম প্রহরে রাঙ্গুনিয়া প্রেসক্লাবের শ্রদ্ধা নিবেদন ●   মা-বাবার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত সাংবাদিক মকছুদ আহমেদ ●   সাংবাদিক মকছুদ আহমেদের মৃত্যুতে বিভিন্ন মহলের শোক ●   কুষ্টিয়ায় মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত ●   কুষ্টিয়ার চরমপন্থী নেতা আতিয়ার খাঁকে হত্যা করল তৃতীয় পক্ষ ফাঁসল ২য় পক্ষ -পর্ব ১ ●   হাটহাজারী উপজেলায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত ●   রাউজানে ভাষা শহীদের প্রতি ছাত্রদলের শ্রদ্ধা নিবেদন ●   নবীগঞ্জ আইডিয়াল উইমেন্স কলেজে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আলোচনা সভা ●   দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাষা শহীদদের প্রতি পিসিসিপি’র শ্রদ্ধাঞ্জলি ●   ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ●   বাঙ্গালহালিয়া পাহাড়িকা পাবলিক স্কুলে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন ●   রাবিপ্রবিতে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৫ পালিত ●   মিরসরাইয়ে দুই স্থানে পুকুরের পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু
রাঙামাটি, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১



CHT Media24.com অবসান হোক বৈষম্যের
বুধবার ● ৯ মে ২০১৮
প্রথম পাতা » নওগাঁ » নিজ উদ্যোগে আর্জিনা গড়ে তুলেছে হস্ত শিল্পের করখানা
প্রথম পাতা » নওগাঁ » নিজ উদ্যোগে আর্জিনা গড়ে তুলেছে হস্ত শিল্পের করখানা
বুধবার ● ৯ মে ২০১৮
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

নিজ উদ্যোগে আর্জিনা গড়ে তুলেছে হস্ত শিল্পের করখানা

---আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি :: (২৬ বৈশাখ ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৯.৫৭ মি.) গুড়নই একটি অজোপাড়া গ্রামের নাম। গ্রামটি নওগাঁ জেলার মৎস্য এলাকা নামে পরিচিত আত্রাই উপজেলার একটি প্রত্যন্ত অবহেলিত গ্রাম। এই গ্রামেরই একটি দিনমজুর পরিবারে জন্ম জীবন যুদ্ধের সফল মেয়ে মোছা: আর্জিনা আক্তারের। বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে মেয়েরা কাজ করছে নানা নকশার পোষাক। কেউ তৈরি করছে বিয়ের শেরোয়ানী, কেউ বা তৈরি করছে পাঞ্জাবী আবার কেউ তৈরি করছে শাড়ী। মনকাড়ানো নকশায় তৈরি এই সব পোষাক সহজেই মনকাড়বে সবার।

৬ বোন ও ১ ভাইয়ের মোট ৮জনের বিশাল এই পরিবারে একমাত্র আশা-ভরশা এই আর্জিনা। আর্জিনার পরিবারে এক সময় অভাব-অনটন লেগেই থাকতো। এই বিশাল পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে প্রতিনিয়তই হিমশিম খেতে হতো আর্জিনার বাবা দিনমজুর আজিজ সরদার ও মা গৃহিণী মোছা: তনুজা বেগমকে।
আর্জিনা পরিবারের বড় মেয়ে তাই পরিবারের দায়ভারটা তারই বেশি। পড়ালেখা করে অনেক বড় হবার ইচ্ছে আর্জিনার থাকলেও পরিবারের অভাব-অনটন সেই ইচ্ছেটাকে আর পাখা মেলতে দেয়নি। আর্জিনার নানার বাড়ি ভারতের কলকাতা অঙ্গরাজ্যের হাওরা জেলায়। মাঝে মধ্যে মায়ের সঙ্গে নানা বাড়ি যেতো আর্জিনা। আর্জিনার নানার বাড়ির অনেক সদস্যরাই এই হস্ত শিল্পের প্রশিক্ষণ নিয়ে এই হস্ত শিল্পের কাজ করতো। অবশেষে পরিবারের সবার কথা ভেবে ও নিজেই কিছু একটা করার প্রয়াশ থেকেই আর্জিনাও তার নানার বাড়িতে গিয়ে দীর্ঘ ৫বছর যাবত এই হস্ত শিল্পের কাজের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। আর্জিনা তার বোনদেরও এই প্রশিক্ষণ নিতে উৎসাহিত করে।
আর্জিনা নিজের গরীব দিনমজুর পিতার পরিবারের দুর্দশা ও অভাব-অনটন দুর করে সবার মুখে হাসি ফুটাবে বলে ঠিক করে সেও নানার বাড়িতে গিয়ে এই হস্ত শিল্পের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজের বাড়িতে ফিরে শুরু করে এই হস্ত শিল্পের কাজ। এই কাজ করে আজ তারা আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী। বর্তমানে আর্জিনার নিজের বাড়িতে গড়ে তুলেছে ছোটখাটো ব্লক, বুটিক ও কাট পিসের পোষাক তৈরির কারখানা। আর এরপর থেকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি আর্জিনার। আজ আর্জিনা আর্থিক ভাবে যেমন স্বাবলম্বী হয়েছে ঠিক স্বাবলম্বী হয়েছে তার কারখানায় কাজ করা আরও ৩০জন গ্রামীণ গৃহবধূ ও এলাকার স্কুল ও কলেজে পড়া মেয়েরা। আর্জিনার কারখানায় তৈরি হওয়া মনকাড়ানো নকশার পোষাকগুলো চালান হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
বর্তমানে আর্জিনার হস্ত শিল্পের কারখানায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে প্রায় ৩০ জন বেকার গ্রামীণ গৃহবধূ ও গ্রামের শিক্ষিত মেয়েদের। গ্রামীণ গৃহবধূরা তাদের পরিবারের কাজের ফাকে ও স্কুল ও কলেজে পড়ুয়া বেকার শিক্ষিত মেয়েরা পড়ালেখার পাশাপাশি আর্জিনার হস্ত শিল্পের কারখানায় কাজ করে নিজের পরিবারকে আর্থিক ভাবে সহায়তা করাসহ নিজেদের প্রয়োজন পূরন করতে পারছে। আজ আর্জিনার এই হস্ত শিল্পের কারখানায় তৈরি করা ব্লক, বুটিক ও কাট পিসের পোষাক চালান হচ্ছে দেশের বিভিন্ন বড় বড় শহরে। উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই কারখানা আরও বড় পরিসরে বিস্তার লাভ ও ভবিষ্যতে বিদেশেও এই পণ্যগুলো চালান করতে চায় আর্জিনা।

সফল মেয়ে আর্জিনা বলেন, পরিবারের অভাব-অনটন দূর করতেই মায়ের ইচ্ছেই আমি হস্ত শিল্পের এই কাজ শিখেছি। বর্তমান সময়ে এই শিল্পগুলো বেশির ভাগই শহরে গড়ে উঠছে। কিন্তু আমার ইচ্ছে গ্রামের বেকার মেয়েদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। নিজের পরিবারের অভাব-অনটনের কথা ও নিজেই একটা কিছু করবো এই প্রত্যয় থেকেই এই কাজ শুরু করা। মানুষ ইচ্ছে করলেই সফলতার দূয়ারে পৌছাতে পারে।
তিনি আরও বলেন আজ আমার সঙ্গে আমার গ্রামের অনেক বেকার গৃহিণী ও বেকার শিক্ষার্থীদের অভাব-অনটন দূর হয়েছে। আজ তারা নিজের কাজ শেষ করে আমার কারখানায় কাজ করে মাসে হাজার হাজার টাকা বাড়তি আয় করছে। আজ আমার সংসারে শত অভাব-অনটন দূর হয়ে ফিরে এসেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা। আজ আমার কাজের সব খরচ বাদ দিয়ে মাসিক আয় প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা। তবে আমার ইচ্ছে এই কাজকে আরও বিস্তার করে অনেক দুর এগিয়ে যাওয়া। তবে আর্থিক সহায়তা ও উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমি আমার কারখানায় উৎপাদিত পন্যগুলোকে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করতে চাই। এই শিল্পটাকে নিয়ে আমার চিন্তাধারা সুদূরপ্রসারী। আর্জিনা আরও বলেন দুই ঈদ, পহেলা বৈশাখে কাজের চাপ ানেক বেশি থাকে এবং ব্যবসাও অনেক ভালো হয়।

কারখানায় কাজ করতে আসা একই গ্রামের স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া মোছা: লাভলী আক্তার, রোকেয়া খাতুন, বুলবুলি আক্তারসহ অনেকেই বলেন আমরা লেখাপড়ার পাশাপাশি এখানে এসে হস্ত শিল্পের কাজ করি। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ মাসে ৩হাজার, কেউ ৫হাজার আবার কেউ ১০হাজার টাকা আয় করে। এতে করে আমাদের আর বই, খাতা কিনতে পরিবারের কাছ থেকে হাত পেতে টাকা নিতে হয় না বরং আমাদের নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে আমরাই আরও আমাদের পরিবারকে আর্থিক ভাবে সহায়তা করতে পারছি। নিজের পরিবারকে সহায়তা করতে পারায় আমাদের খুবই ভালো লাগে।

এ বিষয়ে গৃহবধূ মোছা: লায়লা বেগম, কুলছুম বেওয়াসহ আরও অনেকেই বলেন, এক সময় আমাদের পরিবারে অভাব-অনটন লেগেই থাকতো। স্বামীর একার আয়ে সংসার চালাতে আমাদের খুব কষ্ট হতো। কিন্তু বর্তমানে আমরা নিজের সংসারের কাজ করে অবসর সময়ে আর্জিনার এই হস্ত শিল্পের কারখানায় কাজ করে মাসে আয় ভালোই হয়। এতে করে স্বামীর পাশাপাশি আমরাও এখন সংসারে আর্থিক সহায়তা করতে পারছি। সন্তানদের পড়ালেখার খরচ ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটানোর জন্য আর স্বামীর কাছ থেকে টাকা চেয়ে নিতে হয় না।

এ ব্যাপারে আর্জিনার মা মোছা: তনুজা বেগম বলেন পরিবারের অভাব-অনটনের কথা ভেবে বাবার বাড়িতে গিয়ে আমি আমার মেয়েদের এই প্রশিক্ষণ নিতে উৎসাহিত করেছি। আজ আমিও মেয়ের পাশাপাশি এই হস্ত শিল্পের কাজ করি। এতে করে আমার সংসারের অভাব-অনটন দূর হয়েছে। মেয়েকে সার্বিক সহযোগিতা করাই আমার প্রধান কাজ। মেয়ে বাহিরে গেলে আমিই কারখানার সব কিছু দেখাশোনা করি।

অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের আহসানগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক মো. মনিরুজ্জামান খান বলেন, আর্জিনা আমাদের সমাজের এক অনন্য দৃষ্টান্তর। সে আমাদের অনেকেরই অনুপ্রেরণার উৎস। আমি নির্বাহী কর্মকর্তার পরামর্শক্রমে আর্জিনার হস্ত শিল্প কারখানা পরিদর্শন করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের অধিভুক্ত সরকারি ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র শিল্পের ক্ষেত্রে নানা সুবিধার যে ব্যবস্থা করেছে তার সম্পনটাই আমরা আর্জিনাকে দিবো। আর্জিনাকে আরও এগিয়ে নিতে আমাদের পক্ষ থেকে তাকে সার্বিক সহযোগিতা আর্জিনার পাশে সব সময় থাকবে।

আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের মেয়ে আর্জিনা। দেশের হাজার হাজার অজোপাড়া গ্রামের মাঝে আর্জিনার মতো শত শত মেধা লুকিয়ে আছে। আমাদের উচিত এই সব মেধাকে খুজে বের করে আনা এবং তার মূল্যায়নের সঠিক পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া। তবেই এই মেধাবী মুখগুলোই একদিন বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে আরও বেশি করে আলোকিত করবে। তার এই উদ্যোগ নি:সন্দেহে প্রশাংসার দাবীদার। মানুষ যখন সম্পন্ন ভাবে শহরমুখি তখন গ্রামে এই রকম হস্ত শিল্পের কারখানা স্থাপন করে সেখানে আরও বেকার মেয়েদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সত্যিই এক বিস্ময়। আমি নিজে গিয়ে আর্জিনার এই হস্ত শিল্প কারখানা ও কাজগুলো দেখেছি। সরকারের পক্ষ থেকে আমি তাকে সার্বিক সহযোগিতা করবো।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)