বৃহস্পতিবার ● ১০ মে ২০১৮
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » কে বলছে আমরা পারি না ? হ্যাঁ আমরাও পারি
কে বলছে আমরা পারি না ? হ্যাঁ আমরাও পারি
মুতাসিম বিল্লাহ্ :: আজকের সকালটা আজকের দিনটা আজকের রাতটা সবই আমার কাছে আনন্দের। আমি জানি আজকের তারিখটা ঐতিহাসিক হয়ে থাকবে বাংলাদেশের জন্য। ২০১৮ সালের আজকের এই দিনেই মহাকাশে যাচ্ছে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। কী আনন্দের খবর। বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইটের মালিক হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
বিষয়টি নিয়ে যারা বিতর্ক করছেন যারা বলছেন প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা খরচ করে কী পাবে বাংলাদেশ তারাও একদিন দিনটার কথা মনে রাখবেন। মনে রাখবেন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের ১৬২ সেকেণ্ডের কথা।
এই মুহুর্তে তিন ধরনের সুফল দেশের মানুষ পেতে পারে এ স্যাটেলাইট থেকে। প্রথমত, এ স্যাটেলাইটের সক্ষমতা বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও সাশ্রয় দুটিই করা যাবে। দ্বিতীয়ত, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবার সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে।
তৃতীয়ত, দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলা ও ব্যবস্থাপনায় দারুণ কার্যকর ভূমিকা রাখবে এই স্যাটেলাইট। এ ছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজেও এ স্যাটেলাইটকে কাজে লাগানো সম্ভব। আরও কী কী কাজে আসবে বিশেষজ্ঞরা সেগুলো বলছেন।
তবে এসব সম্ভাবনাকে ছাড়িয়ে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, সেটি হলো বাংলাদেশের ভাবমূর্তি। বঙ্গবন্ধু-১-এর মাধ্যমে স্যাটেলাইট প্রযুক্তির অভিজাত দেশের ক্লাবে বাংলাদেশ প্রবেশ করবে। বঙ্গবন্ধু-১ তৈরির ঘোষণা আসার পরপরই ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ন্যানো স্যাটেলাইট প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু করে। ‘ব্র্যাক অন্বেষা’ নামের এই ন্যানো স্যাটেলাইটটি তৈরি করেছেন এ দেশেরই কয়েকজন তরুণ। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চারজন ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্পে কাজ করছেন।
এ তরুণেরা বলছেন, সরকারের দিক থেকে কিছুটা সহযোগিতা পেলে ২০২১ সালের মধ্যে দেশেই স্যাটেলাইট তৈরি করা সম্ভব।
তবে সবকিছু ছাড়িয়ে আমি আনন্দিত একজন বাংলাদেশি হিসেবে। আমি মনে করি আজ ১০ মে বিকেলে (ফ্লোরিডা সময় ৪:১২ মিনিট, বাংলাদেশ সময় রাত ২:১২ মিনিটে) ফ্যালকন ৯ এর নয়টা মার্লিন ইঞ্জিন ১৬২ সেকেন্ড ধরে পুড়ে আলো ছড়িয়ে যখন মহাকাশে নিয়ে যাবে বঙ্গবন্ধু -১ কে সেটি হবে জাতির জন্য বিশেষ এক মুহুর্ত।
আমি মনে করি নাসার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে যখন কাউন্ট ডাউন শুরু হবে তখন আনন্দে আমাদের সবার চোখ ভিজে উঠবে। দাঁড়িয়ে যাবে শরীরের প্রতিটি পশম। এমন রোমাঞ্চকর মুহুর্ত তো বারবার আসে না।
একসময় নাসায় কর্মরত প্রকৌশলী আজাদুল হক যেমনটা লিখেছেন, যারা সবকিছু রাজনীতির চশমা দিয়ে দেখেন তারা কেউ কেউ আজকের ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করে ফেলবেন দু’ভাবেই। কেউ একে মহাকাশ বিজয় বলবেন, আবার কেউ বলবেন এটা টাকা ওড়ানোর বা বানানোর ফন্দী। কিন্তু আমি শুধু দেখছি বিজ্ঞানের দৃষ্টি ভঙ্গীতে। এক সময় নাসাতে কাজ করতাম। তখন মিশন কন্ট্রোল রূমে বসে দেখেছি কিভাবে লঞ্চ হয়। ফ্লাইট ডিরেক্টর কিভাবে প্রতিটি খুটিনাটি দেখে বলতেন, “ইটস আ গো”। এরপর যখন কাউন্ট ডাউন হত, তখন গায়ের সবগুলো পশম দাঁড়িয়ে যেত, দু’চোখ ভিজে যেতো।
লঞ্চ হবার পর থেকে আমরা মুহুর্ত গুনতাম প্রথম স্তরের রকেটগুলো না পোড়া পর্যন্ত। সেই রোমাঞ্চকর মুহুর্তগুলো লিখে বোঝানো যায় না। এরপর এক সময় সবাই দাঁড়িয়ে মুষ্টিবদ্ধ দু হাত তুলে “ইয়েস” বলে চিৎকার করে উঠতাম ছোট্ট শিশুদের মতো। তাই বলবো, সব রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে ছোট্ট শিশুদের মতন আজ উৎসব করার দিন।
থমকে থাকুক আজ সারা বাংলাদেশ এই ১৬২ সেকেন্ড। রাস্তায় সব গাড়ি থেমে থাকুক। সবগুলো সাইরেন বেজে উঠুক। আজান হোক প্রতিটি মসজিদে যেমন হয় ঝড়ের সময়। তোপধ্বনি হোক ২১ বার থেকে এই ১৬২ সেকেন্ড ধরে। ঢোল বাজুক, ভুভুজেলা বাজুক সবার বাড়ির আঙ্গিনায়, ছাদে।
আগামীকাল সব স্কুলে জাতীয় সংগীত গাওয়া হোক তারপর শিক্ষার্থীদের বলা হোক কি অসাধারণ ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। অকারণেই হাসুক বাংলাদেশের সব মানুষ। মুষ্টিবদ্ধ ৩২ কোটি হাত উঠুক বলার জন্য, “হ্যাঁ আমরাও পারি”।
বাংলাদেশের সব মানুষ জানুক মহাকাশে আজ বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা যাচ্ছে। এই ১৬২ সেকেন্ড হয়ে উঠুক দুনিয়া কাপানো ১৬২ সেকেন্ড। এই বিশ্ব জানুক, আমরা আছি।
আমরা যারা প্রযুক্তিবিদ, যারা রাজনীতি বুঝি না, কিন্তু ভালোবাসি বাংলাদেশকে, আমাদের জন্য এক অপার, অসীম সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে আজ থেকে। আমরা এখন আর স্বপ্ন দেখতে ভয় পাবো না। সেদিন আর বেশী দূরে নেই যেদিন মহাকাশে যাবে বাংলা মায়ের দামাল সন্তানদের তৈরী রকেট, স্পেসশীপ।
কী অসাধরণ বর্ণনা। লিখতে গিয়েই আমার চোখ ভিজে যাচ্ছে। শুভ সকাল বাংলাদেশ। চলুন আজ দুচোখ মেলে আমরা দেখি কিভাবে মহাকাশের বুক চিরে বাংলার পতাকা যায় মহাশূন্যে। জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু। জয় স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। ভালোবাসি বাংলাদেশ। মুতাসিম বিল্লাহ্,বরগুনা প্রতিনিধি।