শনিবার ● ১২ মে ২০১৮
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » রোদের তাপে খোলা আকাশের নীছে চলছে ক্লাশ
রোদের তাপে খোলা আকাশের নীছে চলছে ক্লাশ
বরগুনা জেলা প্রতিনিধি :: (২৯ বৈশাখ ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.৩৮মি.) খোলা আকাশের নিচে একটি উঠানে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীরা। কখনও রোদের মধ্যে প্রচণ্ড তাপে ঘেমে অস্থির। আবার কখনও কাল বৈশাখী ঝড়ে দৌড়ে পাশের কোনও ঘরে আশ্রয় নেয়া। ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে দৌড়াচ্ছেন শিক্ষকরাও। এভাবেই প্রচন্ড গরমকে তারা অার কাল বৈশাখী ঝড়ে দৌড়ে অাশ্রায় নেয়ার মধ্য দিয়ে চলছে বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার বেতাগী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের বাসন্ডা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম।
বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় উপজেলা প্রকৌশলী সেটি পরিত্যাক্ত ঘোষণা করেন। যে কোনও সময় ভবন ভেঙে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় গত ২৩ এপ্রিল থেকে ব্যবহার করা হচ্ছে না এই বিদ্যালয়ের ভবনটি। তাই শিক্ষার্থীদের ক্লাস হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা মিলে, বিদ্যালয়ের পাশে তাবু লাগানো খোলা আকাশের নিচে রোদের মধ্যে প্রচন্ড তাপদাহে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছে। গরমের কারণে ইতোমধ্যে প্রথম শ্রেণির মাহি, তৃতীয় শ্রেণির লামিয়া ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. সোলায়মান জ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রথম দিনের পরীক্ষার পর থেকে অনুপস্থিত রযেছে। বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতি আক্তার জানায়, স্কুলের বাইরে পরীক্ষা দিতে আমার কষ্ট হচ্ছে। কাঁশি সর্দিতে ভুগছি। বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা শাহনাজ পারভীন বলেন, এ রকম খোলা আকাশের নিচে পরীক্ষা দিতে ছাত্র-ছাত্রীদের দারুনভাবে কষ্ট হচ্ছে।
তথ্য সুত্রে জানা গেছে, ১৯৭৫ সালে বেতাগী পৌরসভার বাসন্ডা এলাকায় ১৮ শতাংশ জমির উপর বাসন্ডা আর্দশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয়। বিগত ২০০১ সালে ৪ কক্ষ বিশিষ্ট বর্তমান ভবনটি নির্মান করা হয়। বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবনটি ত্রুটি থাকায় কয়েক বছর যেতে না যেতেই ব্রবহারে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়।সেই থেকে ভবনটির বেহাল দশা। ২০১৭ সালের ২৩ ডিসেম্বরএ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশের প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলীর অধিদপ্তর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর নিকট একটি প্রতিবেদন প্রদানের জন্য চিঠি প্রেরণ করে। সে অনুযায়ী চলতি বছর ৫ ফেব্রুয়ারি উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ উপজেলা প্রকৌশলী সরেজমিনে পরিদর্শন পূর্বক প্রয়োজণীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য র্দূঘটনায় প্রাণহানি ঘটতে পারে এই মর্মে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে বেতাগী থানায় ডায়েরী করার পরামর্শ দেন। পরামর্শ অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক বেতাগী থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন। সাধারণ ডায়েরীর কপি,ছবি ও প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হয়।
কোন বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ না করেই দূর্ঘটনার আশংকায় ৯ এপ্রিল উপজেলা প্রকৗশলী ঝুকিপূর্ণ ভবনে কোন কার্যক্রম না চালানো জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের চিঠি প্রেরণ করেন। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অসহায়হয়ে পড়ে। এ চিঠি পাওয়ার পর প্রধান শিক্ষক ২৩ এপ্রিল থেকে বিদ্যালয় সংলগ্ন একটি খোলা মাঠে কাপড়ের তাবু টানিয়ে প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।স্থানীয়রা জানায়, স্বাভাবিক বাতাসেও ভবন ধসে পড়ার আশঙ্কায় দ্বিতীয় তলাথেকে শিক্ষার্থীদের নিচে নামিয়ে আনতে হয়।
ঝড়-বন্যা হলে তো আর কথা নেই। হঠাৎ করে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করায় নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তারা আরো অভিযোগ করেন, এ রকম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার পরেও নতুন ভবন নির্মানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কারো কোন মাথা ব্যাথ্যা নেই।
এব্যাপারে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও বরগুনা জেলা পরিষদের সদস্য আবুল কাসেম মুঠোফোনে জানান, বিদ্যালয়ের নতুন ভবন হবে শুনছি অনেকদিন থেকে। একবার মাটি পরীক্ষাও করা হয়েছে। কিন্তু এরপর আর কিছুই হয়নি। এখন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস নিয়ে বিপদ হলে কে দায়ভার বহন করবে। তবে এখন খোলা আকাশের নিচে ছোট ছোট শিশুরা পরীক্ষা দিচ্ছে এটা খুব মর্মান্তিক। আমরা শিক্ষা অফিসসহ বেশ কয়েকটা অফিসে কথা বলেছি। মূল ভবন করার আগে শিশুদের শিক্ষার বিকল্প ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
বেতাগী উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের কোনও ক্ষমতা আমাদের নেই। এ জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের এগিয়ে আসতে হবে। বর্তমানে দুর্যোগ মৌসুম। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন,ভবনটি পরিদর্শন করেছি। এটি আসলেই অনেক ঝুঁকিতে রয়েছে। যে কোনও সময় বিপদ ঘটতে পারে। তাই ওই অবস্থায় পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। বাইরেও শিশুরা অনেক কষ্ট করে পরীক্ষা দিচ্ছে। বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভবনটি পুনর্নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রাজীব আহসান বলেন, এটি আমাদের বিবেচনায় রয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ইতোমধ্যে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যানকে নিয়ে দ্রুত প্রয়োজণীয় বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, খুব তাড়াতাড়ি বেতাগীর বাসন্ডা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করতে যাবো। ইতোমধ্যে বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সরেজমিন পরিদর্শন করতে বলা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণ কার্যক্রম চালু রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।