রবিবার ● ১৩ মে ২০১৮
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » রাবির কর্মচারীদের রুটিনমাফিক অফিস ফাঁকি
রাবির কর্মচারীদের রুটিনমাফিক অফিস ফাঁকি
রাজশাহী প্রতিনিধি :: (৩০ বৈশাখ ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৯.৩৮মি.) নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমতো অফিস করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রশাসনিক ভবন ও বিভিন্ন হলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অফিস সময় না মেনে অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী যখন খুশি তখন আসছেন এবং নির্ধারিত কর্মঘন্টা শেষ না হতেই আবার চলে যাচ্ছেন। শুধু দেরীতে আসায় নয়, অফিসের কাজেও তাদের নানা তালবাহানা। অফিসের কাজ ফেলে জটলা দিয়ে মেতে উঠেন খোশ গল্পে। চা-নাস্তার নাম করে ঘন্টাখানেক লাপাত্তা। আবার কেউ কেউ অফিসে হাজিরা দিয়েই চলে যান বাড়ির জন্য বাজার করতে।
দেরীতে এসে আগে যাওয়া ও নানা অজুহাতে অফিসের কাজে ফাঁকি দেওয়া তাদের প্রতিদিনের রুটিন। এছাড়া স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে অফিসে না আসার অভিযোগও রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পর্যাপ্ত মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় বেশ নিশ্চিন্তেই এসব নীতিবর্হিভূত কাজকেই এসব তারা বানিয়েছেন নীতি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বারবার ব্যবস্থা নিতে বললেও প্রতিবারই দেখা গেছে প্রশাসনের অনীহা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গত বছর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অফিস সময় নির্ধারণ করেন। কিন্তু গত একসপ্তাহ ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’টি প্রশাসনিক ভবন ও বিভিন্ন আবাসিক হলে অনুসন্ধানে দেখা গেছে নিয়ম না মেনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফাঁকিবাজির নানা দৃশ্য।
গত বুধবার বিকেল ৪টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রথম প্রশাসনিক ভবনের সংস্থাপন শাখা, অর্থ ও হিসাব শাখা, মার্কশিট শাখা, দ্বিতীয় প্রশাসনিক ভবনের কেন্দ্রীয় ভান্ডার ও প্রকৌশল দফতরসহ বিভিন্ন দফতরের বেশকিছু চেয়ার ফাঁকা। কেউ কেউ অফিসের কাজ না করে জটলা পাকিয়ে আড্ডায় মগ্ন আবার কেউবা নিচ্ছেন চলে যাওয়ার প্রস্তুতি। সাড়ে চারটা বাজতেই দেখা গেল দফতরগুলো প্রায় ফাঁকা হয়ে গেছে। হাতেগুনা কয়েকজন বসে চেয়ারে বসে আছেন। তারা নির্ধারিত সময়ের আগে চলে যাওয়ায় বিকেল সোয়া ৫টার কর্মচারীদের জন্য বাসগুলো প্রায় ফাঁকা থাকে।
সর্বশেষ আজ রবিবার সকাল ৯টায় হল ও প্রশাসনিক ভবনে দেখা যায়, অধিকাংশ কক্ষের চেয়ার ফাঁকা পড়ে আছে। আবার কোন কোন দফতরের কক্ষে তালা ঝুলছে। হলের পিয়ন আসলেও প্রশাসনিক কর্মচারীরা আসেনি তখনো। অফিস সময় ৯টায় শুরু হলেও তারা আসা শুরু করেন সাড়ে ৯টা থেকে। আবার বিকেল ৫টায় অফিস সময় শেষ হলেও সোয়া চারটার দিকেও অনেকে কাজ ফেলে উধাও হয়ে যান।
হলের কর্মচারীরা অন্যদের চেয়ে একধাপ এগিয়ে! প্রশাসনিক ভবনের দফতরগুলোতে কয়েকজন থাকলেও সাড়ে ৪টা বাজলেই হলের কর্মচারীরা সবাই দলবেধে চলে যান। তবে কয়েকজন কর্মচারীর সাথে কথা বললে তারা অফিস ফাঁকির বিষয়টি অস্বীকার করেন। বৃহস্পতিবার সাড়ে চারটায় শহীদ জিয়াউর রহমান হল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল, মাদার বক্স হল, শহীদ শামসুজ্জোহা হলে গেলে কর্মচারীদের কক্ষগুলো বন্ধ পাওয়া যায়।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এসব কর্মকান্ডের ফলে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, জরুরি প্রয়োজনে গেলে কর্মচারীদের অফিসে পাওয়া যায় না। কখনো কখনো দিনে ২-৩ বার গেলেও তাদের দেখা মেলে না। কাজের ক্ষেত্রেও তারা গাফিলতি করেন। প্রতিশ্রুত সময়মত কাজ ঠিকভাবে করেন না। যে কাজ একদিনে করা সম্ভব অনেকসময় তা ৪-৫ দিনও লেগে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যথাযথ তদারকির অভাবেই কর্মচারীরা যাচ্ছেতাই কাজ করছেন।
হলের কর্মচারিদের ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক রুবাইয়াত ইয়াসমিন বলেন, কর্মচারীদের ওপর মনিটরিং একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। তারা ঠিকমত কাজ করছেন কিনা এ ব্যাপারে মনিটরিং হয়। তবে হলগুলোতে লোকবল সংকটসহ কিছু পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে আমাদের বিভিন্ন বিষয় ম্যানেজ করে কাজ করতে হয়। প্রাধ্যক্ষ পরিষদের মিটিংয়ে এ ব্যাপারে হল প্রাধ্যক্ষদের সাথে আলোচনা করা হবে।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান বলেন, ‘কর্মচারীদের অফিস ফাঁকি দেয়ার বিষয়টি আমি জেনেছি। আমার কাছে একাধিক অভিযোগ এসেছে। শ্রীঘ্রই আমরা তাদের একটি সারপ্রাইজ (হঠাৎ অভিযান) দিব। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ পেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’