শুক্রবার ● ৮ জুন ২০১৮
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » মোংলা বন্দরের চুরি হওয়া বিলাসবহুল গাড়ির হদিস ৫ দিনেও মেলেনি
মোংলা বন্দরের চুরি হওয়া বিলাসবহুল গাড়ির হদিস ৫ দিনেও মেলেনি
বাগেরহাট অফিস :: (২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ রাত ১০.০৪মি.) বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের জেটি থেকে জাল কাগজপত্রে চুরি যাওয়া প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের বিলাসবহুল গাড়ির গত ৫ দিনেও হদিস মেলেনি। অপরদিকে বন্দরের মূল গেটে থাকা কাস্টমস, বন্দরের নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের কর্মীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। তবে পুরো ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত বলে দাবি করছেন বন্দর ব্যবহারকারীদের কেউ কেউ। এ ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা গ্রহণসহ চুরি যাওয়া গাড়ি উদ্ধারে প্রচেষ্টা রয়েছে দাবি বন্দর কর্তৃপক্ষের।
গাড়ি চুরি নিয়ে রহস্য ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। কে বা কারা এ ঘটনায় জড়িত তাও পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছে না পুলিশ ও বন্দর কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটি। তবে বন্দরের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজের ওপর নির্ভর করছে তদন্তের অগ্রগতি। আর এ ভিডিও চিত্রে ধারণকৃত ফুটেজে পাচার হওয়া গাড়ির ড্রাইভার ও এক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের প্রতিনিধিকে খোঁজা হচ্ছে। তাদের পেলেই লোপাট হওয়া গাড়ি ও মূল রহস্য উদ্ঘাটনে সক্ষম হবে পুলিশ ও বন্দরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু ভিডিও ফুটেজে ড্রাইভারে ছবি অস্পষ্ট থাকায় সবার নজর এখন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের প্রতিনিধি সাগরের দিকে। তবে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। আর প্রতি মুহূর্তে তার অবস্থান ও মোবাইলফোনের নাম্বার পরিবর্তন করছেন।
গাড়ি আমদানিকারক সংগঠন বারবিডার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক চৌধুরী বাবর বলেন, ‘আমরা এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে বসেছি। আমরা ক্ষতিপূরণ চেয়েছি। তবে গাড়িটি দুইএকদিনের মধ্যে উদ্ধার করা যাবে বলে চেয়ারম্যান আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।’ সে পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করতে চান বলে জানিয়ে বারবিডার এ মুখপাত্র আরো জানান, অন্যথায় তারা মোংলা বন্দরে কোন গাড়ি আর আমদানি করতে চান না।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর এ কে এম ফারুক হাসান জানান, বিলাসবহুল ওই গাড়িটি উদ্ধারে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। গত সোমবার বিকেলে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে কার ইয়ার্ড থেকে সংঘবদ্ধ চক্র কৌশলে পরস্পর যোগসাজসে গাড়ি লোপাটের বিষয়টি দারুণভাবে ভাবিয়ে তুলছে বন্দরের কর্মকর্তাদের। এ অবস্থায় নিরাপত্তা প্রশ্নে আরও নড়েচড়ে বসেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বাড়তি নজরদারি ও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বন্দর এলাকায়। তিনি জানান, বন্দরের সংরক্ষিত এলাকা থেকে গাড়ি খোয়া যাওয়ার ঘটনায় গত মঙ্গলবার রাতে মোংলা থানায় মামলা হওয়ার পর পুলিশও ব্যাপক তদন্ত শুরু করেছে। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হলেও বন্দরের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ভুয়া কাগজপত্র সরবরাহকারী সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মেসার্স আহম্মেদ এন্টারপ্রাইজের সহকারী প্রতিনিধি সাগরকে নিয়ে মূল রহস্যের জট বেঁধেছে। বন্দরের শিল্প এলাকার দিগরাজের মাইনুল ইসলামের পুত্র সাগরকে খুঁজতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা ইতোমধ্যে তার বাড়িতে হানা দিয়েছে। কিন্তু তার নাগাল পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে বন্দর জেটি, ইয়ার্ড ও মূল গেটে থাকা সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজের ওপর নির্ভর করছে গাড়ি চুরির তদন্ত ও অগ্রগতি। বন্দরের সহকারী ট্রাফিক ম্যানেজার সোহাগ জানান, ইতোমধ্যে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওই ফুটেজ দেখে লোপাট যাওয়া গাড়ির ড্রাইভারকে শনাক্ত করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, লোপাট হওয়া গাড়ির ড্রাইভার অথবা সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধি সাগরের নাগাল পেলেই জালিয়াতির মাধ্যমে খোয়া যাওয়া গাড়ির সন্ধান ও রহস্য উন্মোচিত হবে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও প্রধান প্রকৌশলী (তড়িৎ ও যান্ত্রিক) লেঃ কর্নেল মিজানুর রহমান শাহ চৌধুরী জানান, তার নেতৃত্বে গঠিত ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। বন্দরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে তদন্তে অগ্রসর হচ্ছেন তারা। আর এ ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতিও রয়েছে বলেও দাবি তার। তিনি আরও বলেন, থানায় মামলা হওয়ায় পুলিশই পুরো বিষয়টি তদন্ত করছে।
মোংলা বন্দরের ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, গত সপ্তাহ দেড়েক বিদেশি পতাকাবাহি এমভি বাইকিং ওয়াসান নামক জাহাজে করে জাপান থেকে বিভিন্ন মডেলের প্রায় ৫ শতাধিক রিকন্ডিশন গাড়ি মোংলা বন্দরে আসে। পরবর্তীতে এ গাড়িগুলো বন্দরের শেডে রাখা হয়। ঢাকার মেসার্স অটো মিউজিয়াম নামক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে আসা গাড়ির এ চালানের মধ্যে প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো ২০১৮ মডেলের একটি গাড়ি ভুয়া কাগজ দেখিয়ে গত সোমবার বন্দর জেটির ৫নং ইয়ার্ড থেকে ছাড়িয়ে নেয় একটি সংঘবদ্ধ চক্র। গাড়িটির আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক ও বারবিডার সভাপতি হাবিবুল্লাহ ডন বলেন, খোয়া যাওয়া বিলাসবহুল এ গাড়িটি পাওয়া না গলে তার প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫০ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হবে। এ ঘটনার নেপথ্যে কে বা কারা জড়িত রয়েছে তা উদ্ঘাটনের দাবি জানিয়েছেন তিনি। মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ ইকবাল বাহার চৌধুরী জানান, প্রাডো গাড়ি লোপাট ও পাচার হওয়ার ঘটনায় থানায় দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে অগ্রসর হচ্ছে পুলিশ। তবে তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে এখনই কিছু বলতে চাইছেন না তিনি।