শনিবার ● ৯ জুন ২০১৮
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » রাউজানে সর্ববৃহৎ একগম্বুজ বিশিষ্ট সাহেব বিবি মসজিদ
রাউজানে সর্ববৃহৎ একগম্বুজ বিশিষ্ট সাহেব বিবি মসজিদ
রাউজান প্রতিনিধি :: (২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সন্ধ্যা ৬.৫৫মি.) সমধুর আযানের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। মর্মে মর্মে সেই সুর। এই সুরের আহবানে সাড়া দিয়ে শত কর্মব্যস্ততা ছেড়ে নামাজ আদায় করতে ছুটে চলা মুসল্লিদের। আযান শোনামাত্র নামাজ আদায় করতে মসজিদের পানে ছুটে যাচ্ছেন মুসল্লিরা। মসজিদটি চট্টগ্রামের রাউজানে বৃহত্তর এক গম্বুজ বিশিষ্ট সাহেব বিবি জামে মসজিদ। রাউজানে অনন্য মসজিদের মধ্যে স্থাপত্যের মধ্যে এটি অন্যতম মসজিদ। হাড়ি মিয়া চৌধুরী বাড়িতে পাশে চোখে পড়ে বৃহৎ সুন্দে মিনার বিশিষ্ট স্থাপনাটি। মসজিদটির অসাধারণ নির্মাণশৈলী রাউজানে সৌন্দর্যকে এক নতুন রুপ দিয়েছে।
প্রায় ৫’শ বছর পূর্বে নির্মিত হয়েছিল এ অসাধারণ মসজিদটি। চুন সুরকির গাঁথুনিতে নির্মাণ করা হয়েছিল দৃষ্টিনন্দন একটি স্থাপত্য। স্থাপত্যটির পাশে ও সামনে মাথা নিচু করে প্রবেশ করার জন্য প্রায় ৪ ফুট উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছে গেইট। স্থাপনাটি ৮টি পিলার, ৩টি দরজা, দুটি জানালা ও ১ গম্বুজ বিশিষ্ট। কারুকাজের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে শেল্পিক রূপ। স্থাপত্যটির পাশে খনন করা হয়েছে বিশাল দিঘী। এছাড়া মসজিদের পাশে মুসল্লিদের ওজু করার জন্য সুব্যবস্থা রয়েছে। ৫’শ বছর পূর্বে নির্মিত স্থাপনাটি রূপগত পরিবর্তন করে বর্তমানে লাগানো হয়েছে টাইলস।
তবে এর স্থাপত্য শৈলীর সব থেকে আকর্ষণীয় দিক হলো মূল কাঠামোর মধ্যবর্তী উপরের বিরাটকার গম্বুজ যা মোট ৮ টি পিলারের উপর অবস্থিত। মসজিদের পাশাপাশি অন্য একটি মিনারে উপর রয়েছে একটি অর্ধ চাঁদ। যা মসজিদটিতে এনে দিয়েছে এক স্বর্গীয় সৌন্দর্য। মসজিদটির সৌন্দর্য এবং নির্মল পরিবেশ মহান আল্লাহর সাথে একাগ্রতা বৃদ্ধি করে। এর সাহেব বিবি মসজিদের অসাধারণ নির্মাণশৈলী দেখেই মন জুড়িয়ে যায়। প্রায় ৩০ শতক স্থাপনাটি যেন আপন মর্যাদায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
তাইতো হাজারো ব্যস্ততা ভুলে গিয়ে মুসলমানরা একই কাতারে এক আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে প্রতিদিন হাজির হন অসাধারণ নির্মাণশৈলী এই মসজিদটিতে।
চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের রাউজান বাইন্ন্যা পুকুড় এলাকার দক্ষিণ পার্শ্বের একটু অদূরে পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের হাড়ি মিয়া চৌধুরী বাড়িতে অবস্থিত দৃষ্টি নন্দন সাহেব বিবির মসজিদটি। ওই স্থানের মানুষের প্রাণের মসজিদ এটি। সারা চট্টগ্রামে বেশ পরিচিত এ মসজিদটি দেখতে অনেক মানুষ সেখানে আসে। কেননা দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে এসেও এখানে নামাজ আদায় করেন। এটি একটি দর্শনীয় মসজিদও। ইসলাম ধর্মের অন্যতম কালের সাক্ষী এ মসজিদটি দেখার জন্য পর্যটকদেরও কমবেশি ভিড় হয়। সঠিক কোন তথ্য না থাকলেও স্থানীয় প্রবীনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ৫’শ বছর পূর্বে মসজিদটি নির্মাণ করেন চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক আনোয়ারা থানার শোলকাটা রাউজান গ্রামের জমিদার আমির মোহাম্মদ চৌধুরীর স্বনামধন্য পত্নী ও চট্টগ্রামের প্রসিদ্ধ মলকা বানুর মাতা সাহেব বিবি।
স্থানীয়দের তথ্যমতে কবরস্থানসহ মসজিদটি ৩০ শতক জমির উপর নির্মিত। বিভিন্ন কারু কাজ-সম্বলিত টেরাকোটার ইট ও চুন-সুরকির গাঁথুনিতে মসজিদটি নির্মিত। মসজিদটির সামনে একটি ঈদগাহ ও পাশে কবরস্থান রয়েছে। মসজিদের পূর্ব দেয়ালে তিনটি প্রবেশপথ। পাশ্চিম দিকে গম্বুজ থেকেও উঁচু মিম্বর। আগে দেয়াল চমৎকার কারুকার্য খচিত থাকলেও রূপগত পরিবর্তন করে লাগানো হয়েছে টাইলস। মসজিদের উত্তর পাশে খনন করা হয়েছিল সাহেব বিবি দিঘী নামে এক বিশাল দিঘী । কেউ কেউ এটিকে শাহী পুকুরও বলে থাকেন।
সত্তরোর্ধ বয়সের আলী আকবর চৌধুরী বলেন, আমরা ছোট বেলায় দাদার মুখে শুনেছিলাম এই মসজিদটি ৩/৪শ বছর পূর্বে নির্মাণ করা হয়েছিল। আমার দাদাও তাঁর দাদার মুখে শুনেছিল এটি বিদেশী মিস্ত্রী দ্বারা শত শত বছর পূর্বে নির্মাণ করেছে। এই মসজিদে নাকি তখন দেশের বিভিন্ন প্রান্থ থেকে মোছাভাত (আঞ্চলিক শব্দ) অর্থাৎ কয়েকদিনের খাবার নিয়ে পাঁয়ে হেটে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসতো নামাজ পড়ার জন্য।
স্থানীয় আশির্ধো বয়সী আলহাজ্ব ইউনুচ মিয়া চৌধুরী প্রকাশ দুলাল মেম্বার বলেন, বাদশা মুহাম্মদ শাহ স্টেট’র আমলে ডিমের আটা, চুন-সুরকি দিয়ে দেশের ২২টি গ্রামে একই রকম মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। ২২টি মসজিদের মধ্যে প্রথম নির্মাণ করা হয়েছিল সাহেব বিবির মসজিদ।
তিনি আরো বলেন, সাহেব বিবির মসজিদটির ভেতরে প্রায় শতাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। এটি মোতোয়াল্লী মো. ইলিয়াছ মিয়া চৌধুরী প্রকাশ লিটু’র.তত্বাবধানে গত ২ বছর আগে রূপগত পরিবর্তন করা হয়। ৫’শ বছর পূর্বে নির্মিত সাহেব বিবি মসজিদের সঠিক তথ্য না থাকলেও গত দেড় মাস আগে বাংলা একাডেমীর একটি প্রতিনিধি দল সেখানে গিয়ে এলাকার বৃদ্ধদের কাছ থেকে ও তাদের প্রজন্ম থেকে তথ্য সংগ্রহ করে গেছেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে সাহেব বিবি মসজিদের পাশাপাশি ডাবুয়া আমির চৌধুরী জামে মসজিদটিও একই আমলে করা। তবে আমির চৌধুরী মসজিদটি ভেঙ্গে নতুন নির্মাণ করায় সে পুরানো ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে।