শনিবার ● ৯ জুন ২০১৮
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » সিলেটে ডায়াগস্টিক সেন্টার নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
সিলেটে ডায়াগস্টিক সেন্টার নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
সিলেট প্রতিনিধি :: (২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সন্ধ্যা ৭.০৫মি.) ডায়াগনস্টিক সেন্টার মানেই যেন অনিয়মের আখড়া আর গলাকাটা ব্যবসার মহোৎসব। নিজেদের ইচ্ছা মতো ফি নেয়া, ভুল রিপোর্ট, কমিশন দিয়ে রোগী নেয়া লাইসেন্স ছাড়াই কার্যক্রম পরিচালনাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে এসব ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে।
এসব ব্যবসার সাথে জড়িত আছে কমিশনভোগী চিকিৎসকরাও। অনেক চিকিৎসক রোগীকে নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রেফারেন্স করে দেন এবং বলেও দেন অন্য কোথাও থেকে টেস্ট করলে সেটা গ্রহণযোগ্য হবেনা। কারণ হিসেবে অনেক ডাক্তার বলে থাকেন, সবজায়গায় ভালো মেশিন বা প্রযুক্তি নেই।
ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে একাধিকবার অভিযান চালিয়েও বেশ কিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে জরিমানা দায়ের করা হয়েছে, অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধও করে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু তাদের অনেকেই নাম বদল করে এখনো দেধারছে করে যাচ্ছে টেস্ট বাণিজ্য।
সিলেটের এক ডায়াগনস্টিক সেন্টার হাইটেক মেডিকেল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান মেয়াদোত্তীর্ণ রিএজেন্ট দিয়ে প্যাথলজিক্যাল টেস্ট করা এবং মনগড়া রিপোর্ট তৈরী করারই তাদের কাজ। এ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অনেক সুস্থ্য মানুষও অসুস্থ্য হয়ে যান। কিন্তু ডাক্তারের ফাঁদে ও দালালদের খপ্পরে পড়ে রোগীরা বাধ্য হয় এখানে এসে টেষ্ট করতে।
সিলেটে ডাক্তারপাড়া হিসেবে পরিচিত নগরীর রিকাবিবাজারের স্টেডিয়াম এলাকা। এ এলাকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এছাড়া ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও কয়েকটি বেসরকারি ক্লিনিককে কেন্দ্র করে মেডিকেল রোড, কাজলশাহ, মধুশহীদ, আম্বরখানা, চৌহাট্টা, মিরেরময়দান এলাকায়ও রয়েছে বেশকিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে।
ডায়াগস্টিক সেন্টার নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মারাত্মক সব অপরাধের কারণে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ডায়াগনস্টিক বা মেডিকেল সেন্টারে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবু ঠেকানো যাচ্ছে না অবৈধ এসব ডায়াগস্টিক ও মেডিকেল সেন্টারকে।
গত কয়েকদিনে এসব এলাকার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে নানা অনিয়ম বের করে এনেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
রোগাক্রান্ত হয়ে ডাক্তারের কাছে ছুটে যান সাধারণ মানুষ। ডাক্তার রোগীদের হাতে ধরিয়ে দেন এই-সেই নানা টেস্ট। বাধ্য হয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে হয় মানুষকে। কিন্তু রোগনির্ণয়ের নামে সিলেটের ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর দৃশ্যপট আঁতকে ওঠার মতো। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে একের পর এক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনিয়মের চিত্র বেরিয়ে আসছে।
গত কয়েকদিনে এসব এলাকার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে নানা অনিয়ম বের করে এনেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
গত বুধবার (৬জুন) ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে জরিমানা করা হয় চারটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে। আম্বরখানা এলাকার হাইটেক মেডিকেল সার্ভিস প্রতিষ্ঠানকে মেয়াদোত্তীর্ণ রিএজেন্ট দিয়ে প্যাথলজিক্যাল টেস্ট করা, মনগড়া রিপোর্ট তৈরী করার দায়ে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল আলম জানান, প্রতিষ্ঠানটির রিএজেন্টের মেয়াদ গত মার্চে শেষ হলেও তা দিয়ে প্যাথলজিক্যাল টেস্ট চালিয়ে যাচ্ছিল। এছাড়া লাইসেন্স না থাকার সত্ত্বেও এটি বিদেশগামী স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছিল।
অভিযানে লাইসেন্স না থাকা, টেস্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় রিএজেন্টের মেয়াদ না থাকাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে চৌহাট্টা এলাকার আলিয়া মাঠ সংলগ্ন ল্যাব ডেল্টা ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ৫০ হাজার টাকা, রিকাবিবাজার এলাকার নিউ ম্যাডি হেলথ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ইউনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।
গত ২৪ মে সিলেট নগরীর কাজলশাহ ও মেডিকেল রোড এলাকার মেডিচেক সনো ল্যাব আলটাসনোগ্রাফি সেন্টার, পদ্মা কম্পিউটারাইজড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, দেশ এক্স-রে এন্ড কম্পিউটারাইজড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিস লিমিটেডে অভিযান চালানো হয়
অভিযানে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে এসব প্রতিষ্ঠানকে শেষবারের মতো সতর্ক করে দেয়া হয়।
গত ২৭ মে জেলা প্রশাসনের মনিটরিং টিম নগরীর আরো তিনটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে সতর্ক করে। রিকাবিাজার এলাকার দ্য মেডিনোভা ডায়াগনস্টিক এন্ড কনসালটেন্সি সেন্টার, লামাবাজার এলাকার সেন্ট্রাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও মিরের ময়দান এলাকার শাহজালাল মেডিকেল সার্ভিসেস প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়ায় সতর্ক করা হয়। পরবর্তীতে কোন অনিয়ম ধরা পড়লে এসব প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা কিংবা লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়।
২০১৬ সালের ৪ ডিসেম্বর সিলেটের ছয়টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে চরম অনিয়মের কারণে ১৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছিল র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে এরপর দীর্ঘ সময় ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান বন্ধ ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে তা আবার শুরু হয়েছে।