বুধবার ● ২০ জুন ২০১৮
প্রথম পাতা » গাজিপুর » বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে কৃত্রিম উপায়ে ময়ূরের বাচ্চা উৎপাদন
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে কৃত্রিম উপায়ে ময়ূরের বাচ্চা উৎপাদন
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: (৬ আষাঢ় ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ রাত ১০.১৩মি.) গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ‘সাফারি কিংডম’-এ রয়েছে ৯টি পাখিশালা। এর মধ্যে নীল-সোনালি ম্যাকাউ, গ্রিন ম্যাকাউ, আফ্রিকান গ্রে প্যারট, টিয়া প্যালিকেন, লুটিনো রিংনেক প্যারট ও ময়ূরসহ প্রায় ৩০ প্রজাতির পাখি রয়েছে। সেখানে তারা স্বাচ্ছন্দে বিচরণ করছে। পার্ক কর্তৃপক্ষের দেয়া খাবার খাচ্ছে। প্রজনন করছে। সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ বলেছেন, তারা বিভিন্ন সময়ে ডিম দিলেও বিভিন্ন কারণে তা থেকে বাচ্চা হচ্ছে না। পার্কে এসব পাখির বংশ বৃদ্ধির জন্য কৃত্রিম উপায়কে (ইনকিউবেটর) বেছে নেয়া হয়েছে।
পার্কের জুনিয়র ওয়াইল্ড লাইফ স্কাউট সমীর সুর চৌধুরী বলেন, পার্কের প্রকল্প পরিচালক মো. সামসুল আজম স্যারের ঐকান্তিক ইচ্ছায় পার্কে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি কেনা হয়। বর্তমানে ওইসব যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ময়ূরের ডিম থেকে তিন ধাপে ১৯টি বাচ্চা উৎপাদন করা হয়েছে। এদের মধ্যে প্রথম ধাপে ১০টি এবং দ্বিতীয় ধাপে ৭টি ও ৩য় ধাপে ২টি বাচ্চা পার্কের ইনকিউবেটর রুমে উৎপাদনের পর বড় হচ্ছে।
পার্কের সাফারি কিংডমে কর্মরত ওয়াইল্ড লাইফ সুপারভাইজার মো. আনিসুর রহমান জানান, ময়ূর বেস্টনিতেও প্রাকৃতিকভাবে ময়ূর নিজেরাও ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফুটাচ্ছে। ময়ূর সাধারণত ফেব্রুয়ারি-মে পর্যন্ত ডিম দেয়। প্রতিবারে ৮-১০টি করে ডিম দেয়। এদের ডিম থেকে ২৮-৩০ দিনে বাচ্চা ফুটে বের হয়। এ বছর প্রাকৃতিকভাবে ডিম ফুটে চারটা বাচ্চা হয়েছে। ইতিপূর্বে এখানে অসংখ্য বাচ্চা হয়েছে। তবে প্রকৃতিতে অতি বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রার উঠা-নামাসহ নানা প্রতিকূলতায় ডিম নষ্ট হয়ে যায়। কিছু ময়ূর আবদ্ধ পরিবেশে রাখা হয়েছে। তারাও ডিম দিচ্ছে। এদের ডিম ইনকিউবেটরে তা দিয়ে বাচ্চা উৎপাদন করা হচ্ছে। এখানে প্রাপ্ত বয়স্ক ৮০টির মতো ভারতীয় রঙ্গিন ও সাদা ময়ূর পার্কে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ময়ূর হলো বিলুপ্ত প্রাণি। প্রকৃতিতে এদের সংখ্যা বাড়ানোর চিন্তা-ভাবনা করছে পার্ক কর্তৃপক্ষ। এখানে ইনকিউবেটরে ময়ূরের বাচ্চা ফুটানো ব্যবস্থাকরণ তারই একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ। তবে এক্ষেত্রে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রয়োজন। বর্ষার দিনে দীর্ঘ সময় পার্কে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়লে এবং এসময় এখানে থাকা সোলার সিস্টেমও পর্যাপ্ত সূর্যালোকের অভাব দেখা দেয়ায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ প্রাপ্তিতে সমস্যা হয়। এতে ডিম ও বাচ্চা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এজন্য নিরবিচ্ছন্ন বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা করা জরুরি। এখানে ময়ূর ছাড়াও উটপাখি ও ডাক সোয়ানের ডিম ফুটানোর চেষ্টা চলছে।
পার্কের প্রকল্প পরিচালক সামসুল আজম জানান, তিন মাস আগে ইনকিউবেটর চালু করা হয়েছে। এটি চায়না থেকে আনা হয়েছে। আমার জানামতে দেশে এমন ইনকিউবেটর আর কোথাও নেই। এখানে বিলুপ্ত পাখি ময়ূর ছাড়াও উটপাখিসহ অন্যান্য পাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর জন্যই এ যন্ত্রটি পার্কে স্থাপন করা হয়েছে। এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশে পাখিদের ডিম অনেকাংশে নষ্ট হয়ে যায়। ডিম থেকে শতভাগ বাচ্চা ফুটানোর জন্যই আয়বর্ধক এ প্রকল্প হতে নেয়া হয়েছে। তবে বর্তমানে উট পাখি ও ডার্ক সোয়ানের ডিম ইনকিউবেটরে দেয়া হয়েছে।